আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং
মুনজের আহমদ চৌধুরী :: লন্ডনের গ্রীনফেল ভবনের ভয়াল অগ্নিকান্ড এবং উদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়ে পুরো ব্রিটেন জুড়েই অসন্তোষ বিরাজ করছে।অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন সাধারণ মানুষ।
লন্ডনের বহুতল ফ্ল্যাটগুলোতে মূলত নিম্ন আয়ের মানুষের বাস।আর পুড়ে যাওয়া ভবনটির অধিকাংশ বাসিন্দাই নন ইংলিশ আর বাঙালি সহ এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিটির।দীর্ঘদিন ধরেই ভবনটির টেনেন্ট এসোসিয়েশন ভবনটির নিরাপত্তা, বিশেষ করে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় ত্রুটির ব্যাপারে অভিযোগ করে আসছিলেন।কিন্তু দীর্ঘদিনেও অভিযোগগুলো কেন আমলে নেওয়া হয়নি?এমন বাস্তবতায় সন্দেহের তর্জনী উঠছে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদী আচরণের দিকেও।কারণ ভবনটির বেশির ভাগ বাসিন্দাই অভিবাসী।
কয়েক বছর আগে ব্রিটেনে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের এক পর্যবেক্ষণে পুলিশে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের চিত্র উঠে এসেছিল।
ডেভিট লেমি এমপি গতকাল ঘটনাটিকে কর্পোরেট ম্যানস্লোটার উল্লেখ করে বলেছেন,আমরা এ ঘটনায় গ্রেফতার এবং বিচার চাই,রিভিউ নয়।অপরাধ হিসেবে একে অভিহিত করেছেন এই ব্রিটিশ সাংসদ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,ফায়ার ব্রিগেডের সর্বোচ্চ সক্ষমতার চেয়ে গ্রীনফেল ভবনটির উচ্চতা ছিল তিনগুণেরও বেশি।অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার মতো দেশগুলিতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা অনেক আধুনিক ও কার্যকর।
তারা বলছেন,একুশ শতকে ব্রিটেনের মতো দেশে এমন ঘটনা অকল্পনীয়।
১৯৬৮ সালে লন্ডনের নিউহামে ২২তলা ভবনে সন্দেহজনক গ্যাস বিস্ফোরনের দুর্ঘটনার কথা জেনেও ছয়বছর পর (১৯৭২-৭৪) কেন নতুন করে হাই রাইজ ভবন তৈরী করা হলো , প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন না করেই । ভবনটিতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা অপ্রতুল ছিল। লন্ডনে বিভিন্নভবনের অভ্যন্তরে অগ্নিকান্ডে নিহত লাশের ময়নাতদন্তকারীরা
(করোনার) জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাতের সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা থাকলে এত প্রাণহানি ঘটে না।প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন থাকলেও মিলছে না উত্তর।উদ্ধার প্রক্রিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে কেন আরো জনবল নামানো হল না?
যেখানে জঙ্গি হামলার পর সতর্কতামূলক ব্যাবস্থা হিসেবে থেরেসা মের সরকার সড়কে সেনাবাহিনী নামাল, সেখানে শত প্রানের মৃত্যুর মিছিলে কেন সেনাবাহিনীর অন্তত কারিগরী ও প্রকৌশলগত সহায়তা নেয়া হল না,এমন সব প্রশ্ন ব্রিটেনে স্যোশাল মিডিয়ার গন্ডি ছাপিয়ে মূলধারার মিডিয়ায় অালোচিত হচ্ছে।
অাগুন নিয়ন্ত্রন ও ভবনের উপরতলার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে হেলিকাপ্টার ও এয়ার এম্বুলেন্সগুলো ব্যবহার না করার বিষয়টির স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি দায়িত্বশীলরা। অথচ এ ধরনের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশেও হেলিকাপ্টার ব্যাবহৃত হয়।
ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা চোখে অাঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে লন্ডন সহ অন্যান্য শহরে পুরনো বহুতল অাবাসিক ভবনগুলোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটির শংকার কথা।
ব্রিটেন বিগত বছরগুলোতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশে দেশে যুদ্ধের নামে জনগনের ট্যাক্সের যে বিপুল অর্থ ব্যায় করেছে সে অর্থে গ্রীনফেল টাওয়ারের মতো শত শত নতুন ভবন নির্মান করা যেত। এতে করে জরার্জীণ ভবন ব্যবহারের ঝুকিঁ যেমন কমত,তেমনি লাঘব হত দেশটির তীব্র হাউজিং সংকট।
জনগনের প্রাণ রক্ষা রাষ্ট্রের মৌলিকতম দায়িত্ব। ব্রিটেনের গত দুটি নির্বাচনে ট্রাম্পের মার্কিনী হাওয়ার জাতীয়তাবাদ অার সন্ত্রাস যতটা গুরুত্ব পেয়েছে,ততটা গুরুত্ব পায়নি অভ্যন্তরীন জননিরাপত্তার দিকটি। বরঞ্চ লাশ উদ্ধার নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা ব্রিটেনের বহমান বাহ্যিক সচ্ছতাকেও করেছে প্রশ্নবিদ্ধ।
দুই
অামরা,বিশেষ করে প্রবাসীরা কথায় কথায় বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতা অার ব্যার্থতার বিপরীতে ব্রিটেনের মতো দেশগুলোর সাফল্যের উদাহরন দিই। কিন্তু,রানা প্লাজা, লঞ্চ ডুবি বা ভবন ধ্বসের ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতায় বাংলাদেশের সাধ্যের সীমাবদ্ধতা উৎরে যাওয়া সাফল্য রয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার যন্ত্রের অপ্রতুলতায় বা দ্রুততার তাগিদে জীবন দিয়েও অাহত মানুষের জীবন বাচিঁয়েছেন। বাংলাদেশে এমন উদাহরন কিন্তু ব্যাতিক্রমকে অতিক্রম করেছে অাগেই। অার লন্ডনের অাগুনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ বাংলাদেশী ইবতেশাব রহমান শাকিলদের খাবার,তোয়ালে থেকে শুরু করে ইফতার সামগ্রী নিয়ে এগিয়ে অাসা ব্রিটেনের দুর্যোগে বাংলাদেশীর সহমর্মী মানবিকতার অালো অারো উজ্জল করেছে।
গ্রীনফেল ফেইলিওরে উদ্ধারকাজে গতিহীনতার দায় ব্রিটেনের নতুন ঝুকিঁপুর্ন সরকারকে প্রবল ঝাঁকুনি দিয়েছে। বিশ্ব নিরাপত্তার চিন্তক রাষ্ট্রে জননিরাপত্তায় শুভংকরের ফাকিঁ প্রবলভাবে যে উন্মোচন হয়েছে,তা না বলাই বাহুল্য। অবশ্য উদ্ধার,পুর্নবাসন প্রক্রিয়ায় অসন্তোষ নিয়ে শুক্রবারের জনবিক্ষোভে সরকারের টনক জোরেশোরে ই নড়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে জনতার বিক্ষোভের পর শনিবার তিন সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য বিকল্প বাড়ীর ঘোষনা মিলেছে।
ব্রিটেনের রানীর ঐক্যের অাহব্বান জানিয়েছেন জনগনকে।
পুনশ্চঃ গত দুদিনের কাজের ব্যাস্ততায় বিষয়টি নিয়ে লেখার ফুসরৎ পাইনি। শ্রদ্বেয় অগ্রজ,মৌলভীবাজারের একসময়ের বাম রাজনীতিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী নুরুর রহিম নোমান ভাইয়ের তাগাদা অার উৎসাহে লেখাটি লেখা।
লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক
(লেখাটি কপি করা নিষেধ)