আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ডায়েরীর পাতা থেকে: উৎসের সন্ধান

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৭-২৬ ১৫:৪৬:২৫

চলতি মাসের ৮ জুলাই সিলেটের এমসি কলেজে 'রাষ্ট্রবিজ্ঞান উৎসব' অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই উৎসবে লিবার্টি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে। লিবার্টি ম্যাগাজিন নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা সিলেটভিউ২৪ডটকম এর এমসি কলেজ প্রতিনিধি আজহার উদ্দিন শিমুলের কাছে ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাস্টার্স শেষ পর্বের শিক্ষার্থী হোসাইন আলমগীর। ১.`লিবার্টি এর জন্য একটি লিখা মোঃ বায়েজীদ আলম স্যারের কাছে জমা দিলাম “বাংলাদেশকে আরো ডিজিটাল হতে হবে” শিরোনামে। স্যার এই লিখা হাতে নিয়ে বললেন এই লিখা দেয়া যাবে না। তাছাড়া তোমার ফেসবুক স্ট্যাটাস আমি সবসময় দেখি। তুমি আরো বড় লিখা দাও। ভাবতে লাগলাম কি লিখবো। হঠাৎ বন্ধু কাওসার আহমদ বাসায় আসলো। বলল তুমি এক কাজ করো। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ইতিহাস নিয়ে লিখো। স্যার-ম্যাডামরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। বলছেন কেউ লিখলে তারা সহযোগিতা করবেন। পর দিন কলেজে গেলাম। ম্যাম এর সাথে আলোচনা করার সুযোগই পাচ্ছিলাম না। অবশেষে কলেজ গেইটে এসে বললাম ইতিহাস নিয়ে লিখার কথা। শামীমা ম্যাম আশ্বাস দিলেন। বললেন সকল ধরণের ব্যবস্থা আমি করে দিবো। যেমন- এম. সি কলেজের অনেক বয়োজৈষ্ট্য অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষদের সাথে যোগাযোগ, এই কলেজে অনেকে চাকরী করেছেন তাদের সাথে যোগাযোগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়েছেন এমন ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করা ইত্যাদি। তার আগে স্যারদেরকে গিয়ে কি ধরনের প্রশ্ন করবে তা রেডি করো। আর তোমরা যেহেতু তিনজন (হাবিব, শিব্বির, আলমগীর ) এক সাথে থাকো তোমরা সবাই মিলে কাজ করো। পাশাপাশি ইমরান তালুকদারকে তোমাদের সাথে রাখো। একটি টিম কাজ করলে ভালো হবে।
২.পরদিন, কিছু প্রশ্ন রেডি করলাম। ইমরান ভাইও প্রশ্ন রেডি করলো। ম্যামকে দেখালাম। ম্যাম বললেন- এই বিষয়টা আসিরুল হক স্যার ভালো বুঝেন। স্যারকে প্রশ্ন দেখাও। স্যারকে প্রশ্ন দেখালাম, স্যার কিছু কারেক্শন করে দিলেন। ম্যাম ফোন করে বললেন আমাদের ডিপার্টমেন্টে নতুন একজন স্যার জয়েন করেছেন, ওহিদুর রব স্যার। উনাকে দেখাও। উনি এসব নিয়ে গবেষণা করেন। স্যারকে এই প্রশ্নগুলো দেখাতে গিয়ে যে স্যার নিজেই আমাদের সাখে গবেষণায় কোমর বেধেঁ নেমে পড়বেন তা ভাবতেই পারিনি। এরও একটি কারন ছিলো। স্যারের কাছে আমাদের ভাবনা শেয়ার করার পর স্যার আমাদের বিভাগের প্রাক্তন কিছু শিক্ষক ও মুরারিচাঁদ কলেজের ভূতপূর্ব কয়েকজন অধ্যক্ষের নাম বললেন এবং যাদের ফোন নাম্বার ছিলো তা আমাদেরকে দিলেন। ম্যাম হয়তো সঠিক উপদেশই দিয়েছিলেন যে ওহিদুর রব স্যারকে দেখাও। সত্যিই স্যার না থাকলে হয়তো এতো চমৎকারে ভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ইতিহাস রচনা হতো না।
৩. ‘রব’ স্যারের দেয়া নাম্বারের সূত্র ধররেই ম্যাম ফোন দেয় শুরু করলেন। চিঠি তৈরী করে সবাইকে পাঠানো হলো। স্যাররাও আন্তরিকতার সাথে সময় দিলেন এবং উনাদের কাছে যত ধরণের তথ্য ‍ছিলো সব আমাদেরকে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। স্যারদের কাছে যাবার আগে হঠাৎ মাথায় একটা ভাবনা আসলো। যেহেতু আমরা স্যারদের কাছে তথ্য সংগ্রহ করতে যাবো এবং কিছু স্থির চিত্র আনবো, ঐ সময় যদি আমরা মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও ধারণ করতে পারি তাহলে তা ভিডিও আকারে দেখানো যাবে। ভাবনাটা টুটাল টিমের সাথে শেয়ার করলাম। সবার পছন্দ হলো। বাসায় ডিজিটাল ক্যামেরা ছিলো। ঐটি দিয়ে ভিডিও ধারণ করবো বলে ঠিক করলাম। ম্যামকে এই বিষয়ে বলার পর উনি মহা খুশি। ম্যাম বললেন- তাহলে প্রফেশনাল ‍ভিডিও করলে আরো ভালো হয়। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও যাই পরিচিত একজনকে। “সুকান্ত দা” আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের পেইন সহ্য করার জন্য।
৪.সবকিছু ঠিকঠাক করে নভেম্বর‘২০১৬ এর প্রথম সপ্তাহে স্বপ্নের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করি এবং ক্যামেরার পর্দা তুলি এম. সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর নন্দলাল শর্মা স্যারকে দিয়ে, যিনি বর্তমানে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এর দায়িত্বে আছেন। স্যার আমাদেরকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেন। বিশেষ করে যে স্যার রা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় প্রথম দিকে এম. সি কলেজে পড়াতেন তাদের নাম দিলেন। তবে সঠিক ভাবে বলতে পারলেন না কবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়। শুধু এটুক বললেন যে- অন্যান্য বিষয়ের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয় ১৯৬১ সালে। আমরা ফিরে আসার সময় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতেই --------- স্যারের সাথে দেখা করি। স্যার তো সরাসরি না করে দিলেন যে ১৯৬১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয় নি। আমরা পড়লাম মহা সমুদ্রে। যাদের কাছে তথ্য পাবো বলে মনে করেছিলাম তা পেলাম না। বাসায় চলে আসলাম। দুদিন পর আবার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে গেলাম প্রফেসর আব্দুল আজিজ স্যারের কাছে, যিনি এম. সি কলেজের অধ্যক্ষের দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন। স্যার এম. সি কলেজের প্রতিষ্টা করার সময় কাল থেকে অনেক তথ্য দিলেন ঠিকই তবে তিনিও একই কথা বলেন যে- অন্যান্য বিষয়ের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয় ১৯৬১ সালে। ভাবলাম যে এবার আশা আরো কমলো। এখন কি করা যায়? অবশ্য স্যাররা আরেকটা তথ্য দিয়েছিলেন যে- কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য কেন্দ্রে “গোল্ডেন জুবিলি ভলিউম -১, ২, ৩” নামে বই আছে। যেখানে এম. সি কলেজের প্রায় সকল ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখা। “গোল্ডেন জুবিল” বইটি আমাদের অনেক সাহায্য করেছে।
৫.এরপর আমরা, বিভাগের বর্তমান সম্পর্কে জানার জন্য প্রফেসর ছয়ফুল কবীর স্যার ও জনাব লাকী মাহমুদা ম্যামের বাসায় অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। তারপর একে একে প্রফেসর কাজী আতাউর রহমান স্যার, গিয়াস উদ্দিন স্যার, গোলাম রব্বানী স্যারের সাথে আলোচনা করি। বাড়িতে ছিলাম, হঠাৎ ম্যাম ফোন করে বললেন যে- বাবরুল হোসেন বাবুল নামের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন উনার কাছে যাবো। হয়তো ভালো তথ্য পেতে পারি। ভোরে রওনা দিয়ে চলে আসলাম সিলেটে। ১১ টার দিকে গেলাম উনার পীরের বাজার বাসায়। কিন্তু সেখানেও হতাশ হলাম। কিন্তু আশা ছাড়লাম না। আমাদের বিভাগের একজন প্রাক্তন শিক্ষক ছিলেন প্রফেসর শামসূল হুদা স্যার। হুদা স্যার খুব অসুস্থ ছিলেন এবং বিছানায় অজ্ঞান অবস্থায়ও ছিলেন। যার ফলে আমাদের আরেকটা আশার বাতিও নিভো নিভো করছিলো। একদিন গিয়ে স্যারকে দেখে আসলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এর দিন দশেক পরেই স্যার ইন্তেকাল করলেন (ইন্নালিল্লাহি)। এবার ভয় হতে লাগলো মাহবুব স্যারের জন্য। যিনি আমাদের বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন এবং আমাদের বিভাগ থেকে তিনিই প্রথম সরাসরি এম. সি কলেজের অধ্যক্ষ হন। অবশ্য স্যারের কাছে কোন তথ্য না পেলেও স্যারকে দেখতে গিয়েছিলাম ২-৩ বার।
৬.রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ কবে শুরু হয়েছিলো তা নিয়ে ভালো তথ্য না পাওয়ায় আমাদের লিবার্টি ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে সময় ক্ষেপন শুরু হলো। আমরা ধীরে ধীরে এগোতে লাগলাম ভয়ে। কেনান, আর মাত্র একটি সোর্স আছে। তা হলো- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম দিকের শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ছিলেন- মোয়াজ্জেম স্যার, গিয়াস উদ্দিন স্যার, সোবহান স্যার। তারা সবাই ক্লাসমিট ছিলেন। অবশ্য আরো একটি সোর্স ছিলো যে- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেতে পারলে তথ্য পাওয়া যাবে। আমরা যাওয়ার জন্য মনে মনে প্রস্তুত ছিলাম। প্রফেসর আব্দুল আজিজ স্যারের সাথে দেখা করে সিএনজি করে কলেজে যাওয়ার পথে ম্যাম বললেন “এতো সুন্দর ইতিহাস শুনলে মনে হয় সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে গবেষণায় নেমে পড়ি।” ঐ সময় ম্যাম ভাবছিলেন যে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয় যেহেতু এম. সি কলেজের ছাত্র ছিলেন সেহেতু সিলেট আসলে তাদের সাথে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা যায় কি না.....। পরে অবশ্য সিডিউল ঝামেলায় আর যোগাযোগ করা হয় নি। এর ফাঁকে থিয়েটার মুরারিচাঁদের ৩ দিন ব্যাপি অনুষ্টান শুরু হয়ে গেলো। থিয়েটারের কর্মী হওয়ায় আমরা অনুষ্ঠানে মনোনিবেশ করলাম। অনুষ্ঠানের সমাপনীর দিন আনোয়ার সুজন ভাই মঞ্চে উঠে “আমি সুজন আগের মতো নাই” গানটি গান। তখন ম্যামের মাথায় ভাবনা আসলো যে- আনোয়ার সুজন ভাইকে দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একটি থিম সং বানানো যায় কি না.....। এবং সেই ভাবনা থেকেই এম. সি কলেজের কোন বিভাগ প্রথম একটি থিম সং সৃষ্টির ইতিহাস গড়লো।
৭.থিয়েটারের অনুষ্ঠানের পরপরই আমরা আবার নেমে পড়ি মাঠে। এবার শেষ অস্ত্র। না হয় নতুন ভাবনা ভাবতে হবে। মোয়াজ্জেম স্যার, গিয়াস উদ্দিন স্যার, সোবহান স্যার এর মধ্যে প্রথমেই গিয়াস উদ্দিন স্যারের বাসায় যাই। স্যারের কাছেও ভালো তথ্য পেলাম না। তারপর মোয়াজ্জেম স্যারের কাছে সময় চাইলাম। স্যার নিজে কলেজে চলে আসলেন। শুরু হলো ইতিহাস অনুসন্ধান। এবং আমাদের কাঙ্কিত ফলাফল স্যারের কাছেই পেয়ে যাই। স্যার বললেন- উনারাই ছিলেন প্রথম ব্যাচ যা ১৯৭১-৭২ সেশনে শুরু হয়েছিলো। দুই বছর পড়ার পর শিক্ষক সল্পতার কারনে তাদের ব্যাচ এবং এর পরবর্তী ব্যাচকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি নিয়ে যায়। তবে এর পরবর্তী ব্যাচগুলো অর্থাৎ ১৯৭৩-৭৪ ব্যাচ থেকে এখান থেকেই অনার্স কোর্স পুরোদমে চালু হয়ে আজ পর্যন্ত চলছে। স্যারের সাথে কথা বলে এতো হেসেছিলাম তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রায় ছয়মাস অনুসন্ধানের পর ওহিদুর রব স্যার “রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগঃ উৎসের সন্ধানে” শিরোনাম দিয়ে একটি চমৎকার লেখা উপস্থাপন করলেন যা এম. সি কলেজের ইতিহাসে প্রথম কোন বিভাগ তাদের ইতিহাস রচনা করলো। এখন ম্যাগাজিন প্রকাশ করার পালা।এর মধ্যেই ম্যামের ভাবনায় আবার সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ পেলো “মিউরাল অব উইজডাম” স্থাপন করার কথা বললেন। শেষ পর্যন্ত যেন ম্যামের এই স্বপ্নটাও সত্যি হয়......।
৮.ম্যাগাজিন কমপ্লিট করার জন্য রমজান মাসকেই বেছে নেয়া হলো কলেজ বন্ধ বলে। শুরু হলো কাজ। ভাগ ভাগ হয়ে কাজ করার মজাই ছিলো আলাদা। ওহিদুর রব স্যার ও বায়েজিদ স্যার লেখার প্রুফ সহ সেটিং সবগুলো প্রেসে বসে করলেন। আর ম্যাম ও আমরা মিলে আমোদের বাসায় ছবি বাছাই, রিসাইজ ইত্যাদি করতে লাগলাম। এই কাজ শেষ হবার পরপরই প্রেস আমাদের ঠিকানা হয়ে গেল। সকাল থেকে রাত ১২টা, ১টা পর্যন্ত টানা কাজ চলতো (আমি অবশ্য ফাঁকে ফাঁকে টিউশন করে আসতাম)। কখনো চিঠির কাম ডিজাইন, কখনো লগো ডিজাইন, প্যাড ডিজাইন, গিফট বাছাই, মানপত্র ডিজাইন, পুরস্কার বাছাই, দাওয়াতপত্র ডিজাইন, “স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা” ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন ইত্যাদি নানান কাজে সারাদিন ব্যস্ত থাকতাম। কখন যে সন্ধ্যা হতো, ইফতারের সময় চলে আসতো টেরই পেতাম না। একসাথে বসে ইফতার খাওয়া, ফান্টা খাওয়া, আলুর চপ্, সমছা, পিয়াজো, চা ইত্যাদি লেগেই থাকতো।আমরা সকালে বসে আগে লিষ্ট করতাম কি কি কাজ করবো। কাজ করতে করতে কখন যে বেখায়ালে পা লম্বা করেছি, ম্যাম স্যারদের সামনে বেয়াদবের মতো বসেছি, কত আজাইরা কথা বলেছি তার কোন ঠিক নেই। তাই ম্যাম ও স্যারদের কাছে অনুরোধ এই কয়েকদিনের চাল-চলন ও কথা বার্তায় কোন কষ্ট পেয়ে থাকলে অবশ্যই কমা করে দিবেন প্লিজ। আমরা ভুল করেছি এটা মনে রাখবেন না প্লিজ।
৯.মোটামুটি ৯৫% কাজ শেষ করে ঈদের উদ্দেশ্যে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। তবে ম্যামের কথা অবশ্যই ৩০ অথবা ১ তারিখের মধ্যে সিলেটে আসতে হবে। ঈদের পর ২৮ তারিখ ম্যাম হাবিবকে ফোন করে বললেন আমার বিশ্বাস আলমগীর ৩০ তারিখের মধ্যে চলে আসবে, তোমরাও চলে আসো। ২৯ তারিখ রাতে ম্যাম ফোন দিয়ে আসতে বললেন বিকেল ২টার মধ্যে। কলেজে কিছু শ্যুট নিতে হবে। ঐ দিন অবশ্য বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ক্যাম্পাসের কিছু শ্যুট নিয়েছিলাম। আবার প্রেসের কাজ, সাক্ষাৎকার, ইডিটিং এর কাজ, সব মিলিয়ে আমাদের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে আনন্দ গ্রাফিক্স মুখোরিত। এদিকে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ সাজসজ্জায় আস্তে আস্তে ভরে উঠলো সকর শীক্ষার্থীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায়। প্রায় সময় ম্যামকে বলতাম- ম্যাডাম, আমরা এই ক‘দিন সোনালি দিন হিসেবে পার করছি। এই দিনগুলোকে মিস করবো। মনে পড়বে এই দিনগুলোর কথা। ম্যাম নিজেও বলতেন। আমরা কাজ করেছি কিন্তু খাওয়া নিয়ে কখনো চিন্তা করতে হয় নি। বাসায় আসলে সময় নষ্ট হবে বলে কখনো ভোজন বাড়ী, কখনো পানসী, পাঁচ ভাই, প্রীতিরাজে খেয়েছি। আমার যতদূর মনে পড়ে অনুষ্ঠানের পরের দিন রবিবার দুপুর থেকে মেসে খাচ্ছি। তারপূর্বে বাহিরে খেতে হয়েছে। একদিন নুরুজ্জামান আমাকে বলল- ভাই এতো মজার মজার খাবার খাচ্ছেন আর মজার মজার সময় পার করছেন, আমি আগে জানলে প্রথম থেকে সাথে সাথে থাকতাম।
১০.আমাকে কেউ একজন বলেছিলো- পড়াশুনা রেখে এই কাজ করছো? আমি কোন উত্তর না দিলেও মনে মনে বলেছিলাম- জব পড়াশনা হিসেবে তো বাংলা বানান শুদ্ধিকরন, বাক্য শুদ্ধিকরন ইত্যাদি পড়বো। আমি তো এইগুলো ম্যাগাজিন করতে গিয়ে শিখতেছি। তাছাড়া, একটি প্রকাশনা কিংবা অনুষ্ঠান আয়োজনের যে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন হচ্ছে তা কি পাঠ্য পুস্তক থেকে শিখতে পারবো? সত্যি, কোন অনুষ্ঠান আয়োজন বা প্রকাশনার যে দীক্ষা ম্যাম-স্যারদের কাছ থেকে পেয়েছি এবং কিছুটা শিখার চেষ্টা করেছি তার ‍ঋণ কখনো শোধ কবার নয়। তাছাড়া, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আমি এই কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পেড়েছি বলে নিজেকে ধন্য মনে করি। ম্যাম যখন ছবি সহ পোষ্ট করতেন তখন দেখেছি কমেন্টে অনেক ছাত্র-ছাত্রী এই কাজে সম্পৃক্ত হতে না পেড়ে আফসোস করেছে।
আমি নিজেকে আরো ধন্য মনে করি এই কারনে যে- আমাদের বর্তমান স্যার-ম্যামদেরও স্যারদের সাথে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, আশীর্বাদ পেয়েছি তাদের, প্রাণ ভরে দোয়া করেছেন আমাদেরকে।গোলাম রব্বানী স্যার- আমাদের বিভাগীয় প্রধান ম্যমের স্যার। একজন সুদর্শন ব্যক্তিত্ত্ব।মাহবুব স্যার- আমাদের বিভাগীয় প্রধান ম্যমের স্যার। স্যার তো একদিন বলেই দিয়েছেন, “তোমরা শামীমা চৌধুরীকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে পেয়েছো। তোমরা সৌভাগ্যবান।”
১১.কাজের চাপ বেড়েছিলো যখন তখন ম্যাম এমনও বলেছেন- আব্বাজান, ঘুম শেষ? যে অবস্থায় আছো চলে আসো।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে ম্যামের উক্তি--------
# “আমার প্রিয় একটি টিম, তাদের কোন রাগ নেই, অভিমান নেই, ধৈর্য্য হারা হয় না, অবশ্য ইমরান মাঝে মাঝে রাগ করে ফেলে।”
# “আমার কেন জানি মনে হয় তোরা চারজন থেকে একজন ক্যাডার হয়ে আসতেছিস। এই, তোরা চারজন ক্যাডার হয়ে চলে আয়।”
---------------------------------------------------
ম্যাম আপনাকে______আমার দেখা একজন ক্লান্তিহীন নাবিক আপনি। দুঃসময়েও আপনার সঠিক নেতৃত্বে আমাদের বিভাগ কখনোই পথ হারবে না। আমরা ঈদের ছুটিতে চলে যাবার পরও আপনি শুধু ঈদের দিন বাদে টানা কাজ করেছেন। আপনার এতো ধৈর্য্য এবং সাহস আমাকে, আমাদের সবাইকে বার বার অনুপ্রাণিত করেছে। যখনই ক্লান্তি আসতো তখনই আপনার কথা মনে করে সব ক্লান্তি নিমিষেই হাওয়া হয়ে যেতো। আমি, এম. সি কলেজের দু’জন শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের বক্তব্য শুনার জন্য আগ্রহ নিয়ে বসে থাকি। আমাদের ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার ও আপনি। আরেকজন ম্যাম এর বক্তব্য আগে প্রায়ই অনুপ্রেরণা দিতো। তিনি হলেন শ্রদ্ধেয় মাহমুদা চৌধুরী ম্যাম। দঃখের বিষয় ম্যাম আমাদের কলেজ ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই। আশা করি উনিও খুব শিগ্রই আমাদের কলেজে আবার ফিরে আসবেন।আপনি দু ‘হাত ভরে কলেজকে যা দিচ্ছেন, তা পরবর্তী অনুজ শিক্ষার্থীরা প্রাণ ভরে স্মরণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। আমার অনুজ ভাই-বোনদেরকে বলবো, ম্যাম যতদিন বিভাগে আছেন ততোদিন নতুন নতুন কিছু করার চেষ্টা করো। তোমাদের ভাবনাগুলো ম্যামের সাথে শেয়ার করো। তোমাদের ভাবনার বাস্তবায়নের জন্য কোন টেনশন করতে হবে না।
পরিশেষ শুধু এটুকুই বলবো- ম্যাম,_______
ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান তরীআপনার সোনার ফসলে গিয়াছে ভরি।
আলবিদা____ভালো থাকুক আমাদের প্রাণের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগভালো থাকুন আমাদের বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দভালো থাকুন আমাদের প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দভালো থাকুন আমাদের বর্তমান অগ্রজ-অনুজ শিক্ষার্থী বৃন্দভালোবাসায় ভরে উঠুক প্রানের ক্যাম্পাস।'
সিলেটভিউ২৪ডটকম /২৬জুলাই/এইউএস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন