আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন তিন লাখ টাকা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১০-০৬ ০০:৩৮:২৮

আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা। সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা শুরু হয়ে চলবে বেলা ১১টা পর্যন্ত।

এ ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৎপর হয়েছে একটি চক্র। চক্রটি প্রশ্নফাঁসের আশ্বাস দিয়ে ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে- ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল প্রশ্নফাঁসের বিভিন্ন চক্র। 'মেডিকেল এক্সাম কোয়েশ্চন ২০১৭' নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রশ্নফাঁসের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে ভর্তিচ্ছুকে মেডিকেলে কয়েকটি প্রশ্নের সেট সরবরাহের কথা বলা বলছে তারা। সকালে পরীক্ষার আগেই একটি সেট পরীক্ষার জন্য নিশ্চিত করে দেওয়ার কথা বলছে চক্রটি। এ প্রতিবেদক নাম-পরিচয় গোপন করে মেডিকেলের প্রশ্ন চাইলে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। 

পরীক্ষার আগেই অগ্রিম ৩০ হাজার টাকা ভর্তিচ্ছুদের কাছে হাতিয়ে নিচ্ছেন চক্রটি। মোবাইল নম্বর চেয়ে মেসেজ পাঠালে এই চক্রের সদস্য দুইটি (০১৫৫৬৫৭২২৩৯, ০১৭৬৪৪৩৯১০০) নম্বর দেন যোগাযোগের জন্য। ০১৭৬৪৪৩৯১০০ নম্বরে ফোন করে পরিচয় দিয়ে এ প্রতিবেদক প্রশ্নফাঁস চক্রের নাম জানতে চাইলে তিনি ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।

মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে একের পর এক ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিলেও সেসব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ, পেইজ বন্ধ করা হচ্ছে না। মাঝে-মধ্যেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব চক্রের কোন কোন সদস্যকে গ্রেফতার করলেও তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই।

নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধনবিহীন সিমকার্ড ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। যদি চক্রটির ব্যবহার করা সিমগুলো নিবন্ধন করা হয়েই থাকে, তবে কেন তাদের খুঁজে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না, এমন প্রশ্ন অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশ্বাস দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ ও পেজ বন্ধ না হওয়ার ব্যাপারে জানতে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এ ধরনের কোন অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর আগে প্রশ্নফাঁস চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

দেশের সর্বোচ্চ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ মেলে হরহামেশাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁসের ফাদে পড়লে অসাধু কিছু শিক্ষার্থী উপকৃত হলেও বিপাকে পড়ছেন মেধাবী ভর্তিচ্ছুরা। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অসাধু শিক্ষক, কর্মকর্তা অথবা কর্মচারীর সহায়তায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে চলে যাচ্ছে জালিয়াত চক্রের হাতে। আর চক্রটি স্বল্প সময়ে প্রশ্নপত্র সমাধান করে পৌঁছে দিচ্ছে ভর্তিচ্ছুদের কাছে। 

রাজধানীসহ সারা দেশের ২০টি কেন্দ্রে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে মেডিকেলের আগামীকালের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ৫ নম্বর কেটে নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ভর্তি পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, এবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ৮২ হাজার ৮৫৬ শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। দেশে সরকারি ৩১টি মেডিকেল কলেজের মোট আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৩১৮টি। আর বেসরকারি মেডিকেলে আসন রয়েছে ৬ হাজার ২৫টি।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন