আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১০-১৯ ১৬:৫১:১৮

মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা হল সকল শিক্ষার ভিত্তি। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের আর্শীবাদ আজ এ স্তরেও লেগেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চলছে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান। এ লক্ষ্যে সারাদেশে তৈরী হয়েছে প্রায় ৭০০০ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। কাজটি চলমান এবং আশা করা যায় শীঘ্রই প্রায় সকল বিদ্যালয়ের সব শ্রেণীকক্ষে পাঠদান এই ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়ার আওতায় আসবে।

অতীতে পাঠদান ছিল পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষকের মেধা নির্ভর। ফলে বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠেও তেমন কোন প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ দেখানো সম্ভব ছিল না। বর্তমানে এ ধারণায় অনেক পরিবর্তণ এসেছে। এখন সকল বিষয় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে তৈরীকৃত কনটেন্ট দ্বারা পাঠদান করা হয়। একসময় শিক্ষকরা উপকরণ হিসেবে চার্ট, মডেল, ছবি, পাঠ্যবই, পোষ্ট কার্ড, স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত বা তৈরীকৃত নানা উপকরণ এবং স্বল্পমূল্যের কিছু উপকরণ ব্যবহার করে পাঠকে আকর্ষনীয় ও বোধগম্য করার চেষ্টা করতো। বর্তমানে সরকার তথ্য প্রযুক্তিতে অধিক গুরুত্ব আরোপ করার ফলে শুরু হয়েছে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার এখন পাঠভিত্তিক কনটেন্ট তৈরী করে ইহা শ্রেণীতে উপস্থাপন করা হয়। ফলে অধিক মাত্রায় শিক্ষার গুনগত মান বেড়েছে।
মাল্টিমিডিয়া হল একটি সমন্বিত বিষয়। এতে ব্যবহার করা হয় কম্পিউটার, ইন্টারনেট, প্রজেক্টর, অডিও-ভিডিও, স্ক্রীণ ইত্যাদি। এতে কনটেন্ট তৈরী, সংরক্ষণ এবং পরবর্তীতে উপস্থাপন কিংবা সম্পাদনা করার সুযোগ আছে। প্রয়োজনে তথ্য মুছে দিয়ে নতুন তথ্য যোগ করা যায়। মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্টে এ্যানিমেশন ব্যবহার করে প্রজেক্টরের সাহায্যে পাঠ উপস্থাপনের কাজ করা যায়। এই সামগ্রীক বিষয়কে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস বলে।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়ার জন্য শিক্ষকদের ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তৈরী হয়েছে কিছু দক্ষ শিক্ষক। তারা তাদের বিদ্যালয়ে সকল শিক্ষককে হাতে কলমে শিখিয়ে যোগ্য ও দক্ষ করছে। ফলে বর্তমানে প্রায় সকল শিক্ষক ডিজিটালের সংস্পর্শে এসেছে। নিজেদের মধ্যে বেড়েছে ডিজিটাল প্রতিযোগিতা। কার পাঠ কতটা তথ্য নির্ভর, আকর্ষনীয় এবং বোধগম্য তার জন্য মেধা মনন খাটিয়ে তৈরী হচ্ছে ডিজিটাল কনটেন্ট। পাঠের সাথে যুক্ত হচ্ছে নানা ভিডিও ক্লিপস ও ছবি এবং সাথে থাকে এ্যানিমেশনের খেলা অর্থাৎ এক কথায় পাঠে যেন চমৎকার জাদুর ছোঁয়া।

মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান করায় শিক্ষার্থীদের পাঠের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। পাঠটি বোধগম্য ও চিত্তাকর্ষক হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাও এই সরঞ্জামাদি ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি স্লাইডের পরে অন্য স্লাইড দেখার কৌতুহলী ভাব বেড়েছে। অসংখ্য ছবি বা উদাহরণ দিয়ে দূবোর্ধ্য পাঠকে সহজবোধ্য করা হচ্ছে। ছবি, অডিও-ভিডিও যেন বলে দিচ্ছে পাঠে কি আছে। শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামাদির নাম জানতে পারছে এবং নিজেও কনটেন্ট তৈরীতে অংশ নিয়ে হাতে কলমে শিখছে। এই অসাধারণ সুযোগ করে দিয়েছে মাল্টিমিডিয়া।
 
অধিক তথ্য থাকায় যেকোন সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়া ভীতি দূর হয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরী হচ্ছে। মুহুর্তের মধ্যে সারা বিশ্বকে শিক্ষার্থীর সামনে হাজির করা যায়। যেমন- কোন শিক্ষার্থী বলল, আমি কালো ঘোড়া দেখেছি। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এধরণের ঘোড়া না দেখায় তাকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে চাচ্ছে। শিক্ষক মুহুর্তে গুগলে সার্চ দিয়ে কালো ঘোড়ার ছবি ও ভিডিও রের করে শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে দিল। বিশ্বের কোথাও না কোথাও কালো ঘোড়া আছে। সাথে সাথে প্রমাণ হয়ে গেল যে, সে সত্যিই কালো ঘোড়া দেখেছে এবং কালো ঘোড়া আছে।

অনেক সময় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এসকল মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামাদির কাছে যেতে বারণ করেন। বিদ্যুতের ভয় দেখান কিংবা দামী যন্ত্রপাতি নষ্টের আশংকায় তাদেরকে দূরে থাকতে বলেন। এতে শিক্ষার্থীদের ভয় বেড়ে গিয়ে মাল্টিমিডিয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে। যেহেতু গ্রামাঞ্চলে সকল বাড়ীতে কম্পিউটার নেই তাই শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দ্বারা হাতে কলমে পাঠ তৈরী, উপস্থাপন এবং মূল্যায়নে কাজে লাগিয়ে করিয়ে আগ্রহ ও কৌতুহলী ইচ্ছাকে নিবৃত্ত করতে পারেন।

আশা করা যায় সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন সকলের বাড়ীতে কম্পিউটার এসে যাবে এবং সবাই একাজে দক্ষ হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।   


লেখক
উপজেলা নির্বাহী অফিসার,
জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন