Sylhet View 24 PRINT

মাস্কের ব্যবহারে যক্ষ্মা রোগী কমেছে?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০১-৩১ ০৯:৪১:১৪

সিলেটভিউ ডেস্ক :: করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু। আবার ফিরিয়ে দিয়েছে মাস্ক পরার মতো কিছু অভ্যাসও। আর তাতেই নাকি কমেছে যক্ষ্মার মতো সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ। দাবি কলকাতা পৌরসভার। বায়ুবাহিত রোগ যক্ষ্মা (টিবি) হাঁচি-কাশির মতো ড্রপলেট পেলেই ছড়িয়ে পড়ে। অনেকটা করোনার মতো। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনো যক্ষ্মারোগী সঠিক চিকিৎসা না করালে তার থেকে বছরে ১৫ জনের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগ সংক্রামক ও এতে মৃত্যুহার বেশি। খবর ডয়চে ভেলের।

যক্ষ্মা রোগী কমেছে

করোনা ঠেকাতে মাস্ক পরার প্রবণতা বেড়েছে। তার ফলে ফ্লু, নিউমোনিয়া, হাম ও যক্ষ্মা প্রভৃতি ব্যাকটিরিয়াঘটিত রোগ ক্রমশ কমেছে। ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে ও কলকাতায় যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৪০ হাজার ও ১৬ হাজার। ২০২০-তে তা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৮০ হাজার ও ৯,৯৭৫। কলকাতা পৌরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটা মাস্ক পরার সুফল। কিন্তু তার জন্যই কি যক্ষ্মা এতটা কমে গেল?
বিশিষ্ট বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম ভট্টাচার্য বলেন, ‘মাস্ক পরলে সংক্রমণ কমতে পারে। তবে কলকাতা পৌরসভা এই তথ্য কীভাবে সংগ্রহ করেছে, সেটাও দেখতে হবে। কাশির সঙ্গে যাদের টিবির জীবাণু বেরোচ্ছে, তেমন কতজন মাস্ক পরেছেন, বাড়িতে পরেছেন কি না, বাড়ির লোকদের সংক্রমণ হয়েছে কি না, এসব ভাবার ব্যাপার আছে। লকডাউনের জন্য অনেক জায়গায় ভিড় কম হয়েছে। ভিড়ে টিবি রোগীরা যাননি, সেজন্যও টিবি কম ছড়াতে পারে।’

করোনায় যক্ষ্মার চিকিৎসা

অথচ গত জুন মাসে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এবং ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষকরা যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, তা উদ্বেগের। আগে ভারতে যক্ষ্মায় প্রতিদিন চার হাজার রোগী মারা যেতেন। গবেষকদের দাবি, সেই সংখ্যা আগামী পাঁচ বছরে ৯৫ হাজার হয়ে যাবে। কারণ, মহামারি মোকাবিলাতেই চিকিৎসকরা ব্যস্ত। অন্যান্য রোগের তেমন চিকিৎসা হয়নি। এর প্রভাব পড়বে আগামী পাঁচ বছরে। ফলে যক্ষ্মা আরও মারাত্মক হবে। ডাব্লিউএইচও-এর প্রাক্তন পরামর্শদাতা ও সিনিয়র ভাইরোলজিস্ট ডা. অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘‘প্রত্যক্ষ সমীক্ষা, অর্থাৎ ঘরে ঘরে গিয়ে টিবি রোগী শনাক্ত করা এবং পরোক্ষ সমীক্ষা, অর্থাৎ চিকিৎসকের কাছে আসা যক্ষ্মারোগীর হিসেব, এই দুটিই লকডাউনে ব্যাহত হয়েছে। টিবি একটা ক্রনিক রোগ। এর সম্পূর্ণ প্রকাশ পেতে কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর সময় লাগে। মার্চ-এপ্রিল থেকে মাস্ক পরলাম আর তৎক্ষণাৎ সুফল পেয়ে যাব, এটা হয় না।”

তার বক্তব্য, ‘‘যত্রতত্র থুতু ফেলা বা বাইরে খাওয়াদাওয়া কমেছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। বাড়িতেও রোগীরা মাস্ক পরে থাকেন না। আবার রোগীদের একাংশ দূরে যাতায়াত করছেন না। ফলে আগামী পাঁচ বছরে টিবি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছড়িয়ে না-ও পড়তে পারে, রোগটা স্থানীয় স্তরে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।’’

ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ গোবিন্দচন্দ্র মল্লিক বলেন, ‘মাস্ক পরলে টিবি হয়তো ছড়াবে না। তবে অনেক রোগী বুঝে ওঠার আগেই বাড়ির সদস্যদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে দেন। গ্রামীণ এলাকায় অনেক রোগী ছ-মাস ধরে নিয়মিত চিকিৎসাও করান না। পরিযায়ী শ্রমিকেরা কতটা রোগনির্ণয় করিয়েছেন বা ওষুধ খাচ্ছেন, সেটাও দেখতে হবে।’’

স্বাস্থ্য দফতর প্রতি বছর ১ লাখ ৪০ হাজার যক্ষ্মারোগী চিহ্নিতকরণের লক্ষ্য নিয়ে এগোয়। এবার তার অর্ধেকের বেশি চিহ্নিত করা গিয়েছে। লকডাউনের মধ্যে শহরের ১৮০টি জায়গায় যক্ষ্মার চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা ছিল। রোগীদের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছানো হয়েছে। এখানেই লুকিয়ে আছে সমস্যা। যক্ষ্মা নির্ণয়ের জেনএক্সপার্ট মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে করোনা (আরটিপিসিআর) পরীক্ষার জন্য। ফলে চিহ্নিতকরণ থমকে গেছে। তার ওপর লকডাউনের জেরে মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে, এ জন্য অপুষ্টি বাড়বে। ২০২৫ সালের মধ্যে ‘ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস এলিমিনেশন প্রোগ্রাম’ (এনটিইপি) প্রকল্পে ভারতকে যক্ষ্মামুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কোভিডের জেরে এক লক্ষের মধ্যে অন্তত একজন যক্ষ্মারোগী থেকে যাবে বলে আশঙ্কা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/বিডিপ্রতিদিন/মিআচৌ-৩

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.