আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ব্যাংকে অলস পড়ে আছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০২-১৫ ১২:৫২:৩৭

সিলেটভিউ ডেস্ক :: দেশে করোনা সংক্রমণের ভীতি কাটলেও পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ফলে অনিশ্চয়তা থেকে নতুন বিনিয়োগে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কেউ। এতে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ ব্যাংকের হাতে অলস টাকা পড়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে কোনো ধরনের বিনিয়োগে নেই এমন অর্থের পরিমাণ (অলস টাকা) প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। গত তিন মাসের ব্যবধানে অলস টাকা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি সব খাতের ব্যাংকেই অলস টাকা পড়ে আছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনেক খাতের পণ্য ও সেবার চাহিদা কমে গেছে। ফলে নতুন বিনিয়োগ দূরে থাক, বিদ্যমান উৎপাদনের সক্ষমতারও পুরোপুরি ব্যবহার হচ্ছে না।  এটা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো লক্ষণ না। কারণ অর্থনীতিতে স্বাভাবিক গতি বজায় থাকলে এই অর্থ বিনিয়োগ হতো।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই বেসরকারি ঋণের গতি ছিল মন্থর। করোনার পর থেকে তা আরো নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। কারণ উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। ফলে মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী আমদানিও কমছে। এর মানে উৎপাদনের যে সক্ষমতা রয়েছে, সেটার পুরোপুরি ব্যবহার হচ্ছে না। এসব কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাও কম। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর হাতে অতিরিক্ত তারল্য ও অলস টাকা বেড়ে গেছে। এটা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো লক্ষণ না।

করোনা সংক্রমণ শুরু হলে অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়াতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। আবার করোনার মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে অনেক বেশি। ব্যাংকের আমানত সংগ্রহেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু প্রণোদনা ঋণের বাইরে গত কয়েক মাস নতুন ঋণের চাহিদা নেই। সব মিলিয়ে ব্যাংকের হাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ও অলস টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখ চার হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। তিন মাসে আগে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল এক লাখ ৬৯ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। আর গত তিন মাসের ব্যবধানে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে একই সময়ে ব্যাংকগুলোর হাতে পড়ে থাকা অলস টাকার পরিমাণও বেড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে অলস টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। এই অঙ্ক অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি, তিন মাস আগে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যা ছিল ২১ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে অলস টাকার পরিমাণ ছিল মাত্র ছয় হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগ করতে চাই; কিন্তু বিনিয়োগ যে করব, সেই চাহিদা তো থাকতে হবে। করোনার কারণেই সব কিছু ধীর হয়ে গেছে। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না।’ করোনার কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, কিছুটা বাড়তি সতর্কতা তো থাকবেই। এটা করতেই হবে। আমরা ঋণ দিতে চাই; কিন্তু সেটা যদি উপযুক্ত জায়গায় দিতে না পারি, তাহলে ফেরত আসার শঙ্কা থেকেই যায়।’

বেসরকারি খাতের ঋণের সাম্প্রতিক গতিধারা এবং শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়ার পরিসংখ্যানেও বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার বিষয়টি প্রতিফলিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরের ১৪.৮ শতাংশ বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছিল মাত্র ৮.৬১ শতাংশ। এটি গত আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। চলতি অর্থবছরেও বেসরকারি খাতের ঋণে শনির দশা চলছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ১১ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৮.৩৭ শতাংশ। এটি স্মরণকালের সর্বনিম্ন। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৩৭.৫৮ শতাংশ। কারখানা সম্প্রসারণ, সংস্কার ও নতুন কারখানা স্থাপনের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়। শুধু মূলদনী যন্ত্রপাতিই নয়, এ সময়ে শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি কমেছে প্রায় ১৬.২২ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও কমেছে ৩.৩৩ শতাংশ।

এদিকে করোনার মধ্যেও ব্যাংকের বিনিয়োগযোগ্য তহবিল আসার উৎসগুলো স্বাভাবিক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত নভেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.২৭ শতাংশ। করোনা শুরুর আগের মাস গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বার্ষিক আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৮২ শতাংশ। এ ছাড়া করোনার ক্ষতি পোষাতে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো যাতে সংকটে না পড়ে, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশ কয়েকটি পুনরর্থায়ন তহবিল গঠন এবং বিদ্যমান তহবিলের আকার বাড়ানো হয়েছে। এর আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকার মতো তহবিলের জোগান পায় ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া সিআরআর দুই দফায় দেড় শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে আরো ১৯ হাজার কোটি টাকা নতুন করে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি ব্যাংকে তারল্য বাড়াতে তিন দফায় রেপো রেট কমিয়ে ৪.৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে এক বছর মেয়াদি বিশেষ রেপো। ১৭ বছর পর ব্যাংক রেট ১ শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে করোনার সময় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে চাঙ্গাভাব অব্যাহত আছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে কয়েক মাস ধরে বাজার থেকে প্রচুর ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ডলার কেনা বাবদ নগদ টাকাও ব্যাংকের হাতে যাচ্ছে।

সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/মিআচৌ-১৯

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন