আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটের সালমান শাহ নায়কদের নায়ক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-০৫ ১১:৫২:৫৫

সিলেটভিউ ডেস্ক :: তাঁর সময়ের প্রায় সব শ্রেণির দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছিলেন সালমান শাহ। শুধু দর্শকই নয়, তাঁর পরবর্তী সময়ের প্রায় সব নায়কের প্রেরণা প্রয়াত এই অভিনেতা। ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রিয় নায়ককে নিয়ে বলেছেন এ সময়ের তিন নায়ক—আরিফিন শুভ, সিয়াম আহমেদ ও জিয়াউল রোশান

 ঘরে একমাত্র তাঁরই পোস্টার ছিল

সিয়াম আহমেদ

নায়ক তো বটেই, যদি অভিনেতার কথাও বলি, সালমান শাহ সেরাদের একজন। তিনি অভিনয় না করলে, তাঁর অভিনয় না দেখলে আমার মধ্যে হয়তো কখনোই সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছা জাগত না। এমনকি আমি একটা ছবিও করেছি [পোড়ামন ২], যেখানে আমার চরিত্র [সুজন শাহ] সালমান শাহর অন্ধভক্ত। উনি যখন অভিনয় করতেন, তখন আমি অনেক ছোট। অভিনেতা হিসেবে শিশুদের মনে জায়গা করে নেওয়াটা কিন্তু সবচেয়ে কঠিন। কারণ শিশুরা কোনো যুক্তি মেনে বিচার করে কাউকে পছন্দ করে না। তাদের যেটা ভালো লাগে, সেটাই অন্ধের মতো পছন্দ করে। আমারও তেমন ছোটবেলায় উনাকে ভালো লেগে গিয়েছিল। সেটার কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নেই। তাঁর মধ্যে একটা জাদু, ক্যারিসমা ছিল, যার জন্য তিনি খুব কম সময়ের মধ্যে মানুষের আপন হয়ে গেছেন, মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন। একজন অভিনেতাকে কিন্তু সর্বজনীন হতে হয়। তিনি সবার জন্যই অভিনয় করেন। সে জন্য এই ক্যারিসমাটা খুব দরকার, যেটা তাঁর ছিল। তাঁর অভিনীত অনেক ছবিই আমার খুব প্রিয়। বিশেষ করে ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বিচার হবে’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এর কথা বলব। সালমান শাহর স্টাইল সেন্স খুব ভালো ছিল। যেভাবে সানগ্লাস পরতেন, লেদারের জ্যাকেট পরতেন, এককথায় দুর্দান্ত। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাঁর মতো হয় না। উনার ব্যান্ডানা পরার ব্যাপারটাও খুব পছন্দ আমার। পরতে পারি না কারণ মনে হয় ওটা পরতে যে সাহস দরকার, আমার সেটা নেই, হা হা হা। তবে ‘পোড়ামন ২’-এর একটা গানে আমি তাঁর স্টাইলে তিন-চারটা লুক নিয়েছিলাম। একটা লুকে ব্যান্ডানাও পরেছিলাম। ছবিটা করার সময় ভেতর থেকে একটা ভালো লাগা কাজ করেছিল। ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত আমার ঘরে একজন তারকারই পোস্টার লাগানো ছিল, তিনি সালমান শাহ। তাঁর মৃত্যুর সময়ে আমার বয়স ছয়-সাত বছর। বাবাকে বলেছিলাম একটা পোস্টার এনে দিতে। বাসার সবাই তাঁকে খুব পছন্দ করত। প্রথম যখন শুনেছিলাম উনি মারা গেছেন, ভালো মতো বুঝিইনি। পরে যখন বুঝতে পারি, তাঁর নতুন আর কোনো ছবি দেখতে পাব না, অনেক কেঁদেছিলাম। তাঁর রহস্যজনক মৃত্যুর এখনো সঠিক সমাধান হয়নি। দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। ভক্ত হিসেবে আমি সালমান শাহর মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার চাই।

 তাঁর অভিনয় আমাকে অনুপ্রাণিত করে

আরিফিন শুভ

আমি আজ যে অবস্থানে এসেছি বা যতটুকু অর্জন, সেটা পরিকল্পনা করে হয়নি। পথ চলতে চলতেই এত দূর চলে আসা। তবে আমার ব্যক্তিজীবনে সালমান শাহর একটা প্রভাব আছে। টম হ্যাংকস, আমির খান, কমল হাসান, জাফর ইকবালের প্রতি আমার যে মুগ্ধতা, তেমনই মুগ্ধতা সালমান শাহকে ঘিরে। এই মানুষগুলো আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তাঁদের অসাধারণ কাজ দিয়ে। সেগুলো দেখে মনে হয়, আমিও একদিন এমন কাজ করব যে একজন অপরিচিত মানুষ সেসব দেখে আমার মতো করেই মুগ্ধ হবে, অনুপ্রাণিত হবে। সব শিল্পীরই অনুপ্রেরণার প্রয়োজন হয়। আমরা শিল্পীরা অন্যের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হই। নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করি। ভাবি, আমিও ও রকম কাজ করব। সালমান শাহর অভিনয় দেখে, তাঁর ছবি দেখে আমারও সেই অনুভূতি হয়। তিনি যখন অভিনয় করেছেন, তখন আমি ইন্ডাস্ট্রি কেন, ঢাকা থেকেই অনেক দূরে ছিলাম। তখন আমি খুব ছোট। সেই ছোটবেলায়ই তাঁর ছবিগুলো দেখেছিলাম। কিন্তু তখনো সিনেমা, অভিনয় এসব বোঝার মতো বয়স আমার হয়নি। পরে নিজে যখন অভিনয় শুরু করলাম, তখনই আসলে তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্ত বনে গিয়েছি। জনপ্রিয় তারকা, সুপারস্টার, গুণী অভিনেতা এমন অনেকেই আছেন। তবে আমার মনে হয়, সালমান শাহ ‘বাই বর্ন গিফটেড’ ছিলেন, যাকে বলে গিফটেড ন্যাচারাল ট্যালেন্ট। এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। সর্বসাকল্যে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সবই আমার ভীষণ পছন্দের। বিশেষ করে ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘এই ঘর এই সংসার’-এ তাঁর অভিনয় এককথায় অসাধারণ। তাঁর মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করা আইনের কাজ। আইন আইনের মতো করে সেটা করবে। ভক্ত হিসেবে আমি চাই সেটা সঠিকভাবে হোক। তবে আমরা যা-ই বলি বা করি না কেন, তিনি কিন্তু আর ফিরবেন না। তাঁর কাজগুলো থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করাটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আমার ভেতরেই আছেন

জিয়াউল রোশান

আমার সিনেমা দেখা, সিনেমাকে ভালোবাসার অন্যতম অনুপ্রেরণা সালমান শাহ। যখন স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ছিল না, ছিল শুধু বিটিভি, সেখানে প্রতি শুক্রবার ছবি দেখাত। যে সপ্তাহে সালমান ভাইয়ের ছবি দেখাত, দীর্ঘ অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকতাম। ঈদের মতো একটা উৎসবের আমেজ চলে আসত। সালমান ভাইকে পর্দায় দেখার আনন্দটা অন্য রকম ছিল। আমার বাবা রাজনীতি করতেন। আমাদের বাড়িতে [আখাউড়া] একবার তাঁর মা [নীলা চৌধুরী] প্রচারণায় এসেছিলেন। বাবার সঙ্গে আমিও উঠেছিলাম স্টেজে। সালমান ভাইয়ের মায়ের পাশে বসেছিলাম। উনি তখন সালমান ভাইয়ের গল্প শুনিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘ছোটবেলায় তোমার মতো ইমনও [সালমান শাহ] আমার অনুষ্ঠান-সিম্পোজিয়ামে যেত। ও মাটিতে বসে বসে প্রগ্রাম দেখত।’ আমি যখন ছবিতে অভিনয় শুরু করলাম, তখন থেকেই বলে আসছি, সালমান ভাই আমার আইকন। তাঁর ছবি নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই, তিনি আমার ভেতরেই আছেন। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ আমার খুব পছন্দের। তাঁর অভিনয়, বাচনভঙ্গি, এক্সপ্রেশন, ইনোসেন্ট লুক—সবই খুব ভালো লাগে। ‘ধ্যাততেরিকি’ ছবির অ্যাকশন দৃশ্যে তাঁর একটা স্টাইল অনুকরণও করেছি। তাঁর আবিষ্কৃত স্টাইল পরে বলিউডের সালমান-শাহরুখ খানদেরও করতে দেখা গেছে। ক্যারিয়ার লম্বা হলে তিনি নিশ্চিত আন্তর্জাতিক তারকা হয়ে উঠতেন। তাঁর মৃত্যু এখনো রহস্যাবৃত। মাঝেমধ্যে আলোচনা হয়, তারপর আবার ধামাচাপা পড়ে যায়। দেশে তাঁর কোটি ভক্ত। তাদের মতো আমিও চাই প্রকৃত আসামিদের শাস্তি হোক।

সৌজন্যে :কালের কণ্ঠ

সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মিআচ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন