আজ বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সালমান শাহ যেসব কারণে ছিলেন অন্যদের চেয়ে আলাদা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-০৬ ১১:৩৭:৫২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: চলচ্চিত্র বিশ্লেষক এবং বেসরকারি ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাকির হোসেন রাজু মনে করেন, সালমান শাহ যে সময়টিতে অভিনয়ে এসেছিলেন, তখন ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে পালাবদলের সময়।

সালমান শাহ ছিলেন একজন বাংলাদেশি অভিনেতা ও মডেল। তাঁর প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন টেলিভিশন নাটক দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু হলেও ১৯৯০-এর দশকে তিনি চলচ্চিত্রে অন্যতম জননন্দিত শিল্পী হয়ে উঠেন। তার এই জনপ্রিয়তা দিনকে দিন মাত্রা ছাড়িয়েছে। মৃত্যুর পরেও কমেনি।  

১৯৯২ সালে 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন সালমান শাহ। জনপ্রিয় একটি হিন্দি সিনেমার অফিসিয়াল রিমেক ছিল 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত'। এ সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই চলচ্চিত্রে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন সালমান।

পর্দায় তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়-দক্ষতা - সবকিছু মিলিয়ে দর্শকের মনে স্থান করে নিতে সময় লাগেনি এ নায়কের। বাংলাদেশের সিনেমায় তিনি 'রোমান্টিক হিরো' হিসেবে পরিচিত পান।

পরিচালক শাহ আলম কিরণ বলেন, ও যাই করতো, সেটাই ভালো লেগে যেত। অল্প সময়ের মধ্যে এ ছেলেটা চলচ্চিত্রমোদীদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল।

মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে ১৯৯০'র দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আলোড়ন তুলেছিলেন নায়ক সালমান শাহ। সাতাশটি সিনেমার বেশিরভাগই ছিল আলোচিত এবং ব্যবসা সফল।

২৭টি সিনেমার মধ্যে ১৪টিতেই জুটি বেঁধে অভিনয় করেছিলেন নায়িকা শাবনুরের সাথে। কবরী-রাজ্জাক জুটির পর সালমান-শাবনুর জুটিটাই এদেশের দর্শকদের পছন্দের শীর্ষে এখনও রয়ে গেছে। শাবনুর ছাড়াও মৌসুমী, শাহনাজ, লিমা, কাঞ্চি, শাবনাজ, বৃষ্টিসহ কয়েকজন নায়িকার সাথে জুটি বেঁধেছেন। রোমান্টিক ও মেলোড্রামায় বেশি কাজ কারলেও তার চরিত্রগুলোতে বৈচিত্র ছিলো দেখার মতো। কখনও ছাত্রনেতা, কখনও প্রতিবাদী যুবক, কখনও গ্রামের ছেলে, কখনও প্রেমের জন্য ঘরছাড়া তরুণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।


চলচ্চিত্র বিশ্লেষক জাকির হোসেন রাজু বলছিলেন, ১৯৭০-৮০'র দশকের নায়কদের পরে চলচ্চিত্রে সালমানের আবির্ভাব এক ধরণের তারুণ্যের উচ্ছ্বাস তৈরি করেছিল। নায়ক রাজ্জাক, আলমগীর এবং ফারুকের পর সে সময় নতুন একদল তরুণ অভিনেতার আবির্ভাব হয়েছিল ঢাকার সিনেমা জগতে।

নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যত নায়কের আবির্ভাব ঘটেছিল তাদের মধ্যে সালমান শাহ সবচেয়ে প্রমিজিং (প্রতিশ্রুতিশীল) ছিলেন বলে উল্লেখ করেন জাকির হোসেন রাজু। তাঁর বর্ণনায়, সালমান শাহ'র অভিনয়ের মধ্যে দর্শক একটা ভিন্নধারা খুঁজে পেয়েছিল। অনেকে আবার সালমান শাহ'র মধ্যে বলিউড নায়কদের ছায়াও খুঁজে পেয়েছিলেন।

অনেকে সালমানকে শুধু স্টাইল আইকন হিসেবেই বিবেচনা করেন। অথচ তার সহজাত অভিনয় দক্ষতা ও চরিত্রের ভেতরে ঢুকে গিয়ে একদম চরিত্রে মিশে যাওয়ার গুণটা ছিলো প্রবল। তার প্রথম ছবি কেয়ামত থেকে কেয়ামত যারা দেখেছেন, তারা খেয়াল করে থাকবেন যে সেখানে সালমান এতটাই সপ্রতিভ ও সহজাত ছিলেন যে কারও মনে হওয়ার উপায় ছিলো না ওটাই ছিলো তার প্রথম চলচ্চিত্র। অনেক বড় বড় অভিনেতার প্রথম সিনেমায় জড়তা থাকে, দেখলেই বোঝা যায় নতুন এসেছেন। কিন্তু সালমান শাহ কোনো জড়তা ছাড়া অভিনয় করে গেছেন প্রথম সিনেমাতেই।

সালমান শাহকে নিয়ে আলোচনা কখনোই থামেনি। মাত্র চার বছরের সিনেমা ক্যারিয়ারে সালমান শাহ বাংলা সিনেমার অভিনয় জগতে নিজের এমন একটি স্থানটি করে নিয়েছিলেন যে তাঁর অভাব এখনো অনুভব করেন দর্শক, পরিচালক, প্রযোজক - সবাই।

এখনো প্রতি বছর সালমান শাহ'র মৃত্যু দিবসে তাঁর অনেক ভক্ত তাঁকে স্মরণ করেন ভালোবাসার সঙ্গে। আর সালমানের অনেক ভক্তের কাছে তাঁর মৃত্যু এখনো একটি বড় রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।


সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মিআচ


শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন