আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সালমান শাহ’র নায়িকারা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৫-০৯-০৭ ০১:০১:৫৪

পরিচলক সোহানুর রহমান সোহান ১৯৯৩ সালে রেকর্ড পরিমান ব্যবসাসফল ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ এ নতুন একটি জুটিকে দর্শকদের সামনে হাজির করে। ছবিটি সুপার ডুপার হিট হওয়ায় প্রথম সাক্ষাতেই দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয় নতুন সুদর্শন তরুণ নায়ক সালমান শাহ আর প্রিয়দর্শিনী নায়িকা মৌসুমী । এরপর যতই ছবির গল্প এগোতে থাকে ততই যেন দর্শকদের ভালো লাগতে থাকে সালমান–মৌসুমি জুটিকে ।

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির সুপারহিট সালমান মৌসুমির ২য় সুপারহিট ছবি শিবলি সাদিক এর ‘অন্তরে অন্তরে’। ‘অন্তরে অন্তরে ‘ ছবির আলম খানের গানগুলো ছিল সেই সময়ের রেডিও ও টেলিভিশনের ছায়াছবির গানের মধ্য তুমুল জনপ্রিয় গান। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ও ‘অন্তরে অন্তরে’ ছায়াছবি দুটি সুপারহিট হওয়ার সুবাদে সালমান- মৌসুমি জুটির চাহিদা আকাশতুঙ্গে। ঠিক এমন সময়ই কি এক অজানা কারনে সালমান–মৌসুমি আর জুটি বাঁধতে রাজি হননি। তাঁরা দুজনেই নিজেদের চেনাতে সিদ্ধান্ত নিলেন যে আর একসঙ্গে কোন ছবিতে অভিনয় করবেন না যা পরবর্তীতে মাত্র আরও ২ টি ছবি ছাড়া দুজনের দেখা একসঙ্গে দর্শকরা পায়নি। ফলে পরিচালকরা বেশ বিপাকে পড়ে যান ,কারন ঐ সময় মৌসুমি ছাড়া প্রতিষ্ঠিত সব অভিনেত্রীই ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে সালমানের সিনিয়র যারা তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। বিশেষ করে চম্পা ও দিতি। এদের সাথে জুটি করেও লাভ হবেনা। সালমান হয়ে পড়েন মৌসুমি বিহীন একা।

প্রয়াত অভিনেতা ও পরিচালক জহিরুল হক সিদ্ধান্ত নেন যে ইন্ডাস্ট্রির আরেক নতুন মুখ ‘শাবনুর’কে নিয়ে সালমান এর সাথে ছবি বানাবেন। ‘তুমি আমার’ ছবিটি সালমান ও শাবনুর জুটির প্রথম কাজ। তুমি আমার ছবির সাফল্যর পরপরেই পরিচালক জহিরুল হক সালমান-শাবনুর জুটিকে নিয়ে ৭০র দশকের সুপারহিট খান আতাউর রহমান এর ‘সুজন সখী’ (ফারুক কবরী) রিমেক বানানোর ঘোষণা দেন যা পরবর্তীতে তিনি শেষ করে যেতে পারেননি । ছবিটির শুটিং শুরু করার পরপরেই পরিচালক জহিরুল হক মৃত্যুবরণ করেন যার ফলে ছবিটির কাজ থেমে যায়। পরবর্তীতে পরিচালক তমিজ উদ্দিন রিজভি ছবিটির কাজ শেষ করে পরিচালক জহিরুল হক এর নাম দিয়েই ছবিটি মুক্তি দেন। পরিচালক মোহাম্মদ হান্নান তিন সুপারহিট রোমান্টিক ছবির নায়ক সালমান কে নিয়ে তৈরি করেন বাংলাদেশের অন্ধকার ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ ‘বিক্ষোভ’ ছবিটি।

মৌসুমি ও শাবনুরের পর সালমানের সাথে জনপ্রিয় জুটি হিসেবে শাবনাজকে বেশী দেখা গিয়েছিল । সালমান শাবনাজের ছবিগুলো ছিল হাফিজ উদ্দিনের ‘আঞ্জুমান’ (১৯৯৫ সালের ১৮ আগস্ট) , তমিজ উদ্দিন রিজভির ‘আশা ভালোবাসা’ (১৯৯৫ সালের ১ ডিসেম্বর) ও শিবলি সাদিকের ‘মায়ের অধিকার’ (১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর) ছবিগুলো যার মধ্য ‘মায়ের অধিকার’ ছবিটি ছিল একমাত্র সুপারহিট ছবি । শাবনুরের বিপরীতে বারবার একঘেয়ে লাগায় পরিচালকরা চেষ্টা করেছিলেন শাবনাজের সাথে সালমানের একটি সফল জুটি গড়ার কিন্তু সালমানের মৃত্যু সেই জুটিটি আর বেশীদূর এগিয়ে নিতে দেয়নি । অন্যদিকে নায়িকা লিমার সাথেও সালমানের দুটি ছবি ছিল যা হলো দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘কন্যাদান’ (১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ ) ও জীবন রহমানের ‘প্রেমযুদ্ধ’ (১৯৯7৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর)।

এরমধ্যে ‘কন্যাদান’ ছবিটি ঈদের ছবিগুলোর মাঝে ছিল সবচেয়ে পিছিয়ে বা ব্যর্থ এবং ‘প্রেমযুদ্ধ’ ছবিটি ছিল হিট ফলে লিমার সাথে সালমানের জুটিটি বেশি এগোয়নি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো নায়িকা শিল্পী ও শাহনাজের সাথে একটি ছবি করেই সুপারহিট দুটি জুটি হওয়ার আরেকটি সম্ভাবনা ছিল । শিল্পীর সাথে মোহাম্মদ হোসেনের ‘প্রিয়জন’ ও শাহনাজের সাথে ছটকু আহমেদ এর ‘সত্যর মৃত্যু নেই’ ছবি দুটো ছিল সুপারহিট এর মধ্যে শাহনাজের সাথে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল সালমানের মৃত্যুর পর। নায়িকা বৃষ্টির সাথে মালেক আফসারির ‘এই ঘর এই সংসার’ (১৯৯৬ সালের ৫ এপ্রিল) এর মতো খুব দারুন একটি ছবি থাকলেও দর্শক সালমান বৃষ্টি জুটিকে ভালোভাবে নিতে পারেনি যা ছবিটির ব্যবসায়িক ব্যর্থতাই বলে দেয় । অথচ আমার কাছে রোমান্টিক সালমানের বাহিরে শ্রেষ্ঠ চারটি ছবির একটি হলো ‘এই ঘর এই সংসার’ ছবিটি যে ধরনের গল্পে সালমানকে সচরাচর পাওয়া যেতো না ।

যে নয়িকাই জুটি বাধে সালমানের সাথে দর্শকরা লুপে নেয় জুটিকে। শিবলি সাদিক ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবিতে সালমান শাহ’র সাথে শাবনুরের পাশাপাশি কাঞ্চি নামের আরেক নায়িকাকে দর্শকদের সামনে হাজির করে। ছবিটি হিট হওয়ায় শিবলি সাদিক ‘মায়ের অধিকার’ ও ‘আশা ভালোবাসা’ ছবিতে সালমান শাহ’র সাথে শাবনাজকে নিয়ে কাজ করেন। ঐ ছবিতে সালমান শাহ’র সাথে সাবরিনা নামে এক নায়িকাও কাজ করেন। সেগুলোও সুপার হিট ব্যবসা করে।

পরিচালক জীবন রহমান ‘প্রেমযুদ্ধ’ ছবিতে সালমানের সাথে নায়িকা হিসেবে কাজ করে লিমা। এছাড়াও নায়িকা শাহনাজ কাজ করেন ‘সত্যের মৃত্যু নাই’ ছবিতে। ‘শুধু তুমি’ ছবিতে সালমানের নায়িকা ছিলেন শ্যামা। নায়িকা সোনিয়া সালমান শাহ’র সাথে জুটি হিসেবে কাজ করেন ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ ছবিতে। নায়িকা বৃষ্টি কাজ করেন ‘এই ঘর এই সংসার’ ছবিতে এবং নায়িকা শিল্পী কাজ করেন ‘প্রিয়জন’ ছবিতে।

মূলত ১১ জন নায়িকা সালমানের সাথে নায়িকা হিসেবে কাজ করেছেন ২৭ টি ছবিতে। প্রতিটি ছবিই ব্যাবসা সফল এবং প্রতিটি জুটিকেই দর্শক মেনে নিয়েছে ।

আজ সালমান নেই কিন্তু সালমানের সাথে সফল হওয়া অনেক নায়িকা আজও চলচ্চিত্রে আছেন, অনেকে চলচ্চিত্র থেকে দূরে আছেন । সালমান ছিলেন এমনই এক নায়ক যিনি যে কোন নায়িকার ছবিতে নিজেকে সহজে মানিয়ে নিতে পারতেন তা তাঁর সব ভক্ত গ্রহণ করুক আর নাই করুক । ২৭ টি ছবি দিয়েই ২৬ বছর বয়সী সালমান চিরদিন দর্শকদের কাছে তারুণ্যের জয়গানের নায়ক হয়ে থাকবেন  বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের ইতিহাসে, এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।  সালমানের নায়িকারাও এই ইন্ডাস্ট্রিতে বুড়ো হবেন, কিন্তু চলচ্চিত্রের সালমান কোনদিন বুড়ো হবেন না। তিনি থাকবেন যুগে যুগে টগবগে তারুণ্যর প্রতীক হয়ে।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন