আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

ইব্রাহিম পাশার মৃত্যুদণ্ডে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০১-১২ ০০:২৯:২৮

বাকের ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল দর্শক। প্রতিবাদ মিছিল করেছিল। পোস্টারিং হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড ঠেকানো যায়নি। নাটকের চরিত্রের মৃত্যুদণ্ডে বাস্তবে এমন প্রতিবাদের ঝড় নজিরবিহীনই বলা যায়।   হুমায়ুন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্র বাকের ভাইকে আজও মানুষ মনে রেখেছে। অনেকদিন পর আরেকটি ঘটনা ফের আলোড়ন তুললো। এবার মানুষ রাস্তায় না নামলেও ফেসবুক, ট্যুইটারে প্রতিবাদী ঝড় তুলেছে। আর সেটি হলো 'সুলতান সুলেমান' সিরিয়ালের ইব্রাহিম পাশার মৃত্যুদণ্ডকে ঘিরে।

একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত সুলতান সুলেমান সিরিয়ালের একটি পার্শ্বচরিত্র ইব্রাহীম পাশা। অটোমান সম্রাজ্যের উজির-এ-আজম। গতকাল মঙ্গলবারের পর্বে মৃত্যু হয়েছে ইব্রাহীম পাশার। ষড়যন্ত্রের দায়ে তার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন অটোমান সম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্রাট সুলতান সুলেমান। ঘুমের মধ্যেই কার্যকর করা হয়েছে এই মৃত্যুদণ্ডাদেশ। চরিত্রটি এতই জনপ্রিয় হয়েছে যে, কাহিনীতে তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফেসবুক, টুইটারে দর্শকরা বিভিন্নভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। পাশাভক্তরা মনে করছেন, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বলি হয়েছেন ইব্রাহিম পাশা। কারণ, সে ছিল সুলতান সুলেমানের সবচেয়ে বিশ্বস্থ সহচর। সম্রাট তাকে ভাই বলে সম্বোধন করতেন। একইসঙ্গে সুলতান সুলেমানের ভগ্নিপতি ছিল সে। পাশা আদতে সবকিছুই সুলতানের মঙ্গলের জন্য করতেন।

তুরস্কের ঐতিহাসিক ওসমানীয় খিলাফাতের(অটোমান সম্রাজ্য) সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্রাট ছিলেন সুলতান সুলেমান। তার বীরত্ব আর রাজ্য শাসনের কাহিনীর সাথে রাজপ্রাসাদের প্রেম, ষড়যন্ত্রের কাহিনী নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই সিরিয়াল। মঙ্গলবারের পর্বে পাশার মৃত্যুর ব্যাপারে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল টিভি কর্তৃপক্ষ।

রম্য লেখক মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ বেশ কয়েকটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে এর প্রতিবাদ জানান। নিজেকে পাশাভক্ত পরিচয় দিয়ে তিনি লিখেন, 'তোমার হাসতে হাসতে কঠিন কথা বলা, দায়িত্বের প্রতি অবিচলতা, আনুগত্য, বাজপাখির মতো দৃষ্টি আর শীতল চোখের প্রেমে পড়েছি। .... .......... তোমার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করার পর থেকেই তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় ছিলাম। ব্যাপার না পাশা, পৃথিবী তোমাকে মনে রাখবে। পৃথিবী তোমার মতো হতে চাইবে। এটাই বা কম কী?.. ........ ভালো থেকো ইব্রাহিম। ইতিহাসকে হত্যা করে কেউ জিততে পারে না, বরং নিজের করুণ পরিণতির পথ খুলে দেয়। ’

পর্ব শেষ হওয়ার পর আরেক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘ওরা তোমাকে নয়; ইতিহাসকে হত্যা করেছে...। ’

কথা সাহিত্যিক ইশতিয়াক আহমেদ কবিতার ছন্দে লিখেছেন, ‘এই ভালোবাসা?/মন খারাপের কারন তোমার;/ওই, ইব্রাহীম পাশা...’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহবুব হোসেন অর্ক লিখেছেন,'এমন ইতিহাস মানতে কষ্ট হয়। '

তরুণ সাংবাদিক ও ছড়াকার আবিদ আজম লিখেছেন, ‘খুব দ্রুত একটা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে যাচ্ছে। প্রস্তুত, ইব্রাহীম পাশা?’

সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু লিখেছেন, ‘ইব্রাহিম পাশা পারগালীকে হত্যা করলেন সুলতান সুলেমান। দীর্ঘদিনের বিশ্বাসী বন্ধু, পরামর্শক, ইব্রাহিমের প্রাণ গেল কেবল সন্দেহ আর ভুলবোঝার ফসল হিসেবে। বিশ্বস্ত বন্ধু, পরামর্শক হারালে প্রবল পরাক্রমশালীর জীবনও অন্ধকারে ডুবে যায়, ডুবতেই থাকবে। ইব্রাহীমদের অভাব ইব্রাহীমদের হারালেই টের পাওয়া যায়। ইব্রাহীমরা একবার চলে গেলে আর আসে না। তোমার জন্য করুণা, কেবল করুণা রইল সুলতান সুলেমান’।

এক নজরে ইব্রাহিম পাশা
উত্তর-পশ্চিম গ্রিসের একটি জায়গা পারগা। তখন ছিল ভেনিস সাম্রাজের অংশ। পারগার একটি খ্রিস্টান পরিবারে ১৪৯৩ সালে জন্মেছিলেন ইব্রাহিম। তার পিতা নাবিক অথবা জেলে ছিলেন। ১৪৯৯-১৫০২ এর মধ্যে কোনো একসময় তিনি বসনিয়ার অটোমান গভর্নর ইস্কান্দার পাশার দরবারে চালান হন। পারগালি শব্দটি তার জন্মস্থানের প্রতিনিধিত্ব করে। রাজপুত্র সুলেমানের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয় ইস্কান্দার পাশার বাড়িতে, সম্ভবত ১৫১৪ সালে। এরপর থেকেই পারগালি সুলেমানের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। সুলেমান তাকে ভাই বলে সম্বোধন করতেন। সুলেমান গদিতে আসীন হন ১৫২০ সালে। ইব্রাহিম সুলেমানের কূটনৈতিক দপ্তর, সামরিক দপ্তরসহ আরো অনেক দপ্তর সামলেছেন। একপর্যায়ে তাকে প্রধান উজির নিযুক্ত করেন সুলেমান। নিজের বোনের সঙ্গে বিয়ে দেন। পারস্য অভিযানের সময় ইব্রাহিম পাশার সঙ্গে ইস্কান্দার চেলেবি নামের আরেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি হয়। সুলেমান-পত্নী হুররেম সুলতানও ইব্রাহিম পাশাকে ঈর্ষা করতেন। যদিও পাশাই দাসী হুররেমকে প্রথম সুলেমানের কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। দাসী থেকে সুলতানা হওয়ার পর ইব্রাহিমকে অনেক ক্ষেত্রে তার ক্ষমতা ব্যবহারের পথে বাধা হিসেবে দেখতে শুরু করেন হুররেম। বিভিন্ন দিক থেকে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে শুরু করে। এমনকি ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আসায় কাউকে কাউকে প্রাণদণ্ডও দেন সুলেমান। অভিযোগের পাল্লা ভারী হতে থাকায় একপর্যায়ে সুলতান সুলেমান ইব্রাহিম পাশাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ১৫৩৬ সালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন