আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

আব্দুর রাজ্জাক: একজন কিংবদন্তীর গল্প এবং পরজীবী রাজনীতির অপ্রকাশিত কথা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১২-০২ ০০:১৫:০৬

ছরওয়ার আহমদ :: মানুষ মরণশীল। কিন্তু কিছু মানুষ তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে অমরত্ব লাভ করে। সিলেট এর বিয়ানীবাজারের কৃতি সন্তান, দানশীল, পরোপকারী সমাজসেবী ও রাজনীতিবিদ আব্দুর রাজ্জাক তেমনি এক ব্যক্তিত্ব; যিনি ছাত্রাবস্থা থেকে তার যাপিত জীবন মানুষের কল্যানে উজাড় করে দিয়েছেন।

বিয়ানীবাজারের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে আব্দুর রাজ্জাক এক অনন্য ব্যক্তি, যিনি জনসেবাকে রাজনীতির মাধ্যম হিসেবে গ্রহন করেছিলেন। ভালো কাজে দলমত নির্বিশেষে মানুষের উপকার করাই তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ। তার মহৎ গুনাবলীকে যারা হিংসার চোখে দেখেছেন কিংবা তার কাছের রাজনৈতিক বিরুদ্ধাচারণকারীরাও স্বীকার করবেন যে, তিনি মানুষের দুর্দিনে, মানুষের পাশে স্বার্থহীন ভাবে পাশে থাকতেন,তাদের সাধ্যাতীত সহযোগীতা করতেন হাসি মুখে। ফলত স্বাভাবিকভাবেই তিনি মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দুটোই অর্জন করেছেন। বিয়ানীবাজারের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে আব্দুর রাজ্জাক একজন কিংবদন্তী। বর্তমানে বার্ধক্যজনিত কারণে পারিবার নিয়েই তাঁর সময় কাটছে। সবার মতো, কালের যাত্রাপথে একদিন ধরনী ত্যাগ করলেও তিনি গণমানুষের মাঝে শ্রদ্ধার আসনে সমাসীন থাকবেন। তাঁর মতো মহৎপ্রাণ,আদর্শিক ব্যক্তিত্ব সমাজের নিয়ন আলো।

অনেকদিন থেকে বিয়ানীবাজারের কয়েকজন কিংবদন্তী আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের মহান সংগঠকদের উপর কিছু লিখবো বলে ভাবছি। ব্যস্ততার কারণে সময় হয়ে ওঠেনি। গত ১৬ই অক্টোবর ২০১৭ইং স্যোসাল মিডিয়া ফেসবুক এ একটি ষ্ট্যাটাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক ছাত্রলীগনেতা ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি অনুজ ছরওয়ার হোসেন দীর্ঘদিন পর লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা মহান ব্যক্তি আব্দুর রাজ্জাক; যাকে আমি ’চাচা‘ বলে সন্মোধন করি, তাঁর কর্ম ও দানের প্রতি বিনম্র কৃতজ্ঞতাবোধ জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে বাসকরা প্রবাসী এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের দ্বারা ষ্টেটাসটি সমাদৃত হয়েছে। যা রাজ্জাক চাচার প্রতি মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ বলে প্রমানিত।

এছাড়া কয়েকদিন পূর্বে বিয়ানীবাজারের সাপ্তাহিক 'আগামী প্রজন্ম'ও অসুস্থ আব্দুর রাজ্জাক চাচাকে নিয়ে একটি চমৎকার রিপোর্ট করেছেন, যা অনেকের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। ধন্যবাদ জানাচ্ছি স্নেহের ছরওয়ার হোসেন ও সাপ্তাহিক আগামী প্রজন্মকে। লক্ষ্য করেছি, অনেকে মুক্ত ও উদার মনে রাজ্জাক চাচার অবদানকে স্বীকার করে কৃতজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। এইসকল মানবিক বোধের মানুষদের কৃতজ্ঞতাবোধকে আমাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা মনুষ্যত্বের স্বরুপ ও জাগরণ হিসাবেই আমি দেখি। আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং সকলের সাথে আমিও ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মূলতঃ একজন উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞচিত্ত মানুষের এই উদার জাগরণ আজ নিবেদিত রাজনীতিবিদ,সমাজসেবি আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে লিখতে আমাকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করেছে।

আব্দুর রাজ্জাকের রাজনৈতিক জীবনকে আমি দু ভাগে দেখতে পাই। প্রথমত; তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান এবং দ্বিতীয়ত; ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক তাঁকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা। এই দুটি বিষয়কেই আমি পর্যবেক্ষণ করেছি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান ও রাজনৈতিক সামাজিক কাজের পর্যবেক্ষণ হিসাবে। কেউ লেখা পড়ে মনঃক্ষুন্ন হলে আমি বিনীতভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

এক.
বিয়ানীবাজার আওয়ামী পরিবারে রাজ্জাক চাচার অবদান অপরিসীম। আব্দুর রাজ্জাক ১৯৬৮সালে বিয়ানীবাজারে কলেজ প্রতিষ্টার পরে এই জনপদে ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা (যদিও তিনি তখন সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্র ছিলেন), যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি (১৯৭৪), বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও পরবর্তীতে সিলেট জেলা কৃষকলীগের সভাপতি হওয়াসহ বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগের একজন শক্তিমান,সৎ ও দক্ষ সংগঠক ছিলেন। তিনি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য এবং কিংবদন্তি নেতা শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির ঘনিষ্টজন। এছাড়াও তিনি ঢাকাস্থ বিয়ানীবাজার জনকল্যান সমিতি ও জালালাবাদ সোসাইটির অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দানশীল ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবান ব্যক্তি। ফলত বিয়ানীবাজারের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, খেলাধুলাসহ নানাবিধ কর্মকান্ড সমান্তরালভাবে তাঁর দান ও সহযোগিতায় পরিপূষ্ট হয়েছে। একজন ট্রেভেলস বা ওভারসীজ ব্যবসায়ী হিসেবে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অনেকেই তাঁর সাহায্য সহায়তা লাভে কৃতার্থ হয়েছেন। আপাদমস্তক তিনি ছিলেন একজন মহৎপ্রাণ ব্যক্তি।

আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের কাছে বিয়ানীবাজারের অনেকের মতো আমিও ঋণী। পূর্বে আমাদের প্রবাসী অধ্যুষিত এই এলাকার লোকজন ইউরোপ বা আমেরিকায় যারা কন্ট্রাকের মাধ্যমে যেতেন, তাদের সকলকে ৮/১০ লক্ষ টাকা মধ্যস্থ হিসাবে কারো কাছে জমা রাখতে হতো। ঢাকায় বলা যায় শতভাগ বিশ্বাসী হিসাবে আমাদের এলাকার একমাত্র আমানতদার ছিলেন এই রাজ্জাক চাচা। বৃহত্তর সিলেটের শত শত মানুষের তিনি আমানত রেখেছেন। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য, তিনি কারো আমানতকে খিয়ানত করেছেন, তা ঘুর্ণাক্ষরেও কোনদিন শুনিনি । অসুস্থতার কারণে রাজ্জাক চাচা দীর্ঘদিন থেকে ঘরবৈঠকি। কিন্তু আজো এই আস্থার জায়গা কেউ পূরণ করতে পারেনি।

আমি নিজে একবার আমেরিকা ও একবার কানাডার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলাম। দু'বারই চাচাকে আমানতদার হিসেবে মধ্যখানে রেখেছি। কিন্তু কোনবারই উনার কাছে টাকা জমা রেখে যাইনি। কারণ, তখন ঢাকায় টাকা আনা নেওয়া ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। চাচা আমাকে এই ঝুঁকিতে যেতে বারণ করতেন। আমার ও আমার পরিবারের প্রতি এক ধরনের অন্ধ বিশ্বাসে এতগুলো টাকার দায়িত্ব নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয় ! চাচার এই মহত্বের কথা আমার চিরকাল মনে থাকবে।

রাজ্জাক চাচা ঢাকায় শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য ছিলেন না। তিনি অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি ঢাকায় এলাকার অসহায় মানুষের অনেক কল্যাণ সাধন করেছেন। ২০০০ সালের একটি কথা মনে পড়ছে। আমরা বিয়ানীবাজার এর সামাজিক সংগঠন কন্ঠকলি সংসদ কর্তৃক পরিচালিত অন্তরা সংগীত বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকায় যাবো বাংলাদেশ টেলিভিশন (ইঞঠ) ত্রিশ মিনিটের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রেকর্ডের জন্য। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, তখনকার বাংলাদেশে মূলতঃ বাংলাদেশ টেলিভিশন ছিলো একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল, যদিও তখন 'এটিএন বাংলা' ছিলো তথাপি তা শুধুমাত্র শহরাঞ্চলে ডিশ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেখা যেতো। তাই বিটিভি‘ই ছিলো মানুষের শেষ ভরসাস্থল।

আমাদের টাকার উৎস ছিল আমাদের সঙ্গীত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংগঠকদের উপর অর্পিত চাঁদা। টিভির রেকর্ডিংয়ের দু'দিন পূর্ব পর্যন্ত আমরা ঢাকায় যাতায়াত ও থাকা খাওয়ার প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে ব্যর্থ হই ।
এমতাবস্থায় আমাদের পক্ষথেকে প্রথমে আমাদের এলাকা থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেবের কাছে সাহায্য প্রাথৃনা করা হয়। তিনি সাহায্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পরে,আমাদের গ্রুপের সবাই বললেন, রাজ্জাক সাহেবকে বলে দেখার জন্য, উনি কোন সাহায্য করতে পারেন কি না। আমি চাচাকে ফোন করলাম এবং সমস্যার কথা বললাম। চাচা প্রশ্ন করলেন "তোমাদের টিমে লোকসংখ্যা কত জন"? আমি বললাম, প্রায় ৫০ জন হবে। তিনি বললেন, "কোন সমস্যা নেই, তোমরা ঢাকায় চলে আসো, আমি তোমাদের থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করবো"। চাচা আমাদের জন্য উনার ধানমন্ডির বাসায় থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করলেন। বর্তমানে তিনি যে বাসায় থাকেন, সেসময় এই বাসার পাঁচতলা পর্যন্ত কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। এই বাসার গ্রাউন্ড ফ্লোরে উনার পরিবার থাকতেন এবং অন্যান্য ফ্লোরও খালি ছিলো। আমাদের জন্য উপরের ফ্লোরগুলোতে থাকার ব্যবস্থা করলেন এবং খাবারের জন্য বাবুর্চি রাখলেন। এখানে উল্লেখ করতে হয়, আমাদের এই ৫০জনের গ্রুপে বর্তমান বিয়ানীবাজার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু অধ্যক্ষ দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ ও ছিলেন। এছাড়াও পি এইচ জি হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক শ্রদ্ধেয় শ্রী বিরাজ কান্তি দেব যাঁর কাছে আমি প্রাইভেট পড়েছি, কন্ঠকলি সংসদের পরিচালক মীর হোসেন আল মোহাম্মদী খোকন ভাইসহ অনেকে।

 প্রসঙ্গত কণ্ঠকলি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মীর হোসেন আল মোহাম্মদী খোকন এর দীর্ঘ দিনের ধারাবাহিক প্রচেষ্ঠায় বিয়ানীবাজারকে জাতীয়ভাবে প্রকাশের এই আলোকিত উদ্যোগটি নেন। আমাদের সবার প্রিয় ’খোকনভাই‘ বিয়ানীবাজারে সাহিত্য-সংস্কৃতি আন্দোলনে ৮০ দশকে অন্যতম একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন।যিনি নিজের পয়সা খরচ করে বিয়ানীবাজারে সংস্কৃতিবান্ধব বিভিন্ন অনুষ্ঠান,শিশুদের বিনামূল্যে সঙ্গীত শিক্ষাদান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে এদতঅঞ্চলে অগ্রনী ভুমিকা রাখেন।

 বিটিভিতে আমাদের অনুষ্ঠানের নাম ছিল ’নিবেদন’। অনুষ্ঠানের কাজে রাজধানীতে, আমরা রাজ্জাক চাচার বাসায় তিন দিন ছিলাম। সেই সময়ের চোখে পড়েছে তার মানবিক হ্রদ্যতার চিত্র। এই সময়েই তাঁর বাসায় আসেন বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি কুতুব উদ্দিন ও তাঁর দুজন আতœীয়। বাসাভর্তী আমরা পঞ্চাশজন, থাকা ও খাবার দাবার ইত্যাদিতে আমরা এমনিতেই বড় ঝামেলায় ফেলেছি তাকে। তিনি বাসায় এতো ঝামেলার মধ্যেও আমাদের সাথে কুতুব উদ্দিন সাহেবদেরকেও হাসিমুখে থাকতে দিয়েছিলেন। সেদিন আমরা অনেকে তার এ মহানুভবতায় অসম্ভব মুগ্ধ হয়েছিলাম। নিজ অঞ্চলের মানুষের প্রতি অপার ভালোলাগা দেখে বলা যায় আমরা বাকরুদ্ধ ছিলাম। সেই সময়ের স্মৃতি গুলো আজও মনে স্বচ্ছ ভাসে। সর্বোপরি বিয়ানীবাজার অন্তরা সংগীত বিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী ও পরিচালকগণ রাজ্জাক চাচা ও তাঁর পরিবারের আতœীয়তায় অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমাদের পক্ষে তিনি ও তাঁর পরিবারের অশেষ ঋণ পরিশোধ হবার নয় ।

এতো আনন্দের মাঝে ঘটে একটি দুঃখজনক ঘটনা । বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমাদের এই অনুষ্ঠানের প্রস্তাবনায় বিয়ানীবাজারের পরিচিতি নিয়ে শুরুতেই পাঁচ মিনিটের একটি বক্তব্য ছিল । আমরা বিয়ানীবাজারে বসেই কর্মকর্তাবৃন্দ সিদ্ধান্ত নিলাম, এই বক্তব্যটি রাজ্জাক চাচার কন্ঠে রেকর্ড হবে এবং আমাদের রেকর্ডকৃত অনুষ্ঠানের সূচনাতেই পাঁচ মিনিট এই বক্তব্যটি প্রচার হবে। আমরা ঢাকায় যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই বিষয়ে রাজ্জাক চাচাকে কিছু বলিনি। ঢাকায় যাওয়ার পরদিন সকালবেলা আমরা তিন/চারজন প্রথমে বৈঠক করি এবং পরে রাজ্জাক চাচার সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে বিয়ানীবাজার অঞ্চল বিষয়ে বলতে অনুরোধ করি। প্রস্তাবটি তাঁর মনোপূত হয় এবং তিনি সানন্দে রাজি হন। আমরা আমাদের লেখা বক্তব্যের স্ক্রিপ্ট তাঁকে দিলাম। তিনি স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী যথারীতি বক্তব্য রাখলেন এবং ১৮ জুলাই ২০০০ সালে তা রেকর্ডও হলো।

ঐ সময়ে আমাদের প্রতি রাজ্জাক চাচার মহানুভবতা ছিলো নিখাঁদ ও অনেক বড়। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি যেহেতু জনবান্ধব রাজনীতি করেন এবং আমাদের প্রতি বিশাল আন্তরিকতা প্রকাশ করে অনেক কিছু করছেন সেহেতু তাঁর প্রতি এই সামান্য মূল্যায়নে হয়তো তিনি আমাদের প্রতি একটু খুশী হবেন। বস্তুত, তাঁকে দিয়ে বক্তব্যটি প্রকাশের সুযোগ পেয়ে আমরাও খুব আনন্দিত ছিলাম। অবশেষে রাজ্জাক চাচার সহযোগীতায় আমাদের অনুষ্ঠান সফলভাবে রেকর্ড করে বাড়ীতে চলে আসি এবং ইঞঠ কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে প্রচারের দিনক্ষন জানিয়ে দেন।

তখনকার সময় আমাদের এই টেলিভিশন প্রোগ্রামের খবর সমগ্র বিয়ানীবাজার জুড়ে প্রচার হয়ে যায় এবং প্রোগ্রামটি দেখতে বিয়ানীবাজারের মানুষের মাঝেও ব্যাপক উৎসাহ ও অনুপ্রেরনার জন্মলাভ করে। অন্যদিকে রাজ্জাক চাচা ছিলেন পরবর্তী নির্বাচনের সম্ভাব্য এমপি পদপ্রার্থী, তাই অনুষ্ঠান প্রচারের বিষয়টি তাঁর কর্মী সমর্থকদের মাঝেও প্রচুর আগ্রহ জন্মায়। আমাদের সঙ্গীত বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও প্রচারের দিন বিয়ানীবাজারে মাইকিং করানো হয়।

উল্লেখ্য, সেই সময় বাংলাদেশ টেলিভিশন শুধুমাত্র বিকেল ছয়টা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান প্রচার করতো । অনুষ্ঠান প্রচারের দিন অনেক আগ্রহ নিয়ে আমরা টিভি'র সামনে বসেছিলাম। প্রতীক্ষার পর আসলো সেই আনন্দের দিন ৫ আগষ্ট ২০০০ সাল। আমাদের রেকর্ডকৃত অনুষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ে প্রচার হলো। কিন্তু বিয়ানীবাজার উপজেলাকে নিয়ে রাজ্জাক চাচার বক্তব্য অংশটি প্রচার হলোনা! যা ছিলো ইতিহাস ঐতিহ্যের আলোকে বিয়ানীবাজারকে উপস্থাপিত বক্তব্য । সঙ্গত কারণেই তাঁর বক্তব্য ছাড়া এবং এটি ছিল অনুষ্ঠানের মূখবন্ধও, আমাদের অনুষ্ঠানই সাদামাটা হয়ে গেলো। যা বিয়ানীবাজার অন্তরা সংগীত বিদ্যালয় পরিবারকে আনন্দের পরিবর্তে চরমভাবে ব্যথিত করলো। একটি সুবর্ণ সুযোগে আমরা মূলতঃ ইতিহাস-ঐতিহ্যের আলোয় শিল্প, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা, রাজনীতি, আন্দোলন- সংগ্রামের বীরদর্পী আলোকস্নাত বিয়ানীবাজারকেই সমগ্র বাংলাদেশের সামনে উপস্থাপন করতে উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। যা হঠাৎ করে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত ছিলোনা। অনেক ভেবেচিন্তে, রিহার্সেল এবং স্ক্রিপটি অনেক তথ্যউপাত্বে সমৃদ্ধ করেই আমরা অনুষ্টানে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্তে উপণীত হয়েছিলাম। আমাদের চিন্তা চেতনা ও মননে ‘আলোকিত বিয়ানীবাজার‘ যাকে ইতিহাসে সাহিত্য সংস্কৃতি ও সামাজিক প্রাচুর্যতার কারণে এই অঞ্চলকে ‘নবদ্বীপ’ বলে অভিহিত করা হতো।


অনুষ্ঠান প্রচারের পর সার্বিক পরিস্থিতিতে রাজ্জাক চাচা ও তাঁর সমর্থকদের কাছে আমরা অনেকেই প্রচন্ড লজ্জায় নিপতিত হই। নিজে লজ্জায় যেন মুখ ঢাকতে পারছিলামনা। ভাবনায় আসতো রাজ্জাক চাচা হয়তো আমাকে প্রতারক ভাববেন। যিনি দু'বার বিদেশ যেতে তাঁর হাতে টাকা না পেয়েও আমার আমানতদার হয়েছেন। আমাদের এতগুলো মানুষকে নিজ বাসায় রেখে বাবুর্চি দিয়ে রান্না করিয়ে সমাদর করলেন,আর আমরা একটি অনুষ্ঠানে তার মাত্র পাঁচ মিনিটের একটি বক্তব্য প্রকাশ নিয়ে তাঁর সাথে কিনা এতোবড়ো তামাশা? তিনি একজন নিপাট ভদ্রলোক। আমাদের কাছ থেকে কোন কিছু না চেয়ে, শুধু নিজ ভূমি বিয়ানীবাজারের প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত দায় মনে করে এবং তার রাজনৈতিক দলের প্রতি আন্তরিকতার বশেই আমাদের ইচ্ছাপুরণে সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছিলেন। সেই ব্যক্তির সাথে কি এ ধরনের প্রতারণা সম্ভব? এ রকম নানা প্রশ্ন আমাকে প্রতিনিয়ত দংশন করতো। এরপর আমি অনেকদিন লজ্জায় তাঁর সামনে যাইনি। তবে ক্ষুব্ধ মনে বিটিভি'তে তাঁর বক্তব্য প্রচার না করার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করি। অবশেষে জানতে পারলাম, যে মানুষটি ছিলেন আমাদের আস্থার ঠিকানা, যাকে আমরা আবেগ ও উৎসাহে উদ্বেলিত হয়ে এক অসম্ভব বৈরী পরিবেশ পরিস্থিতিকে জয় করে সিলেট-৬ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী করে নেতার আসনে বসিয়েছিলাম, সেই ভদ্রলোকই এই অসম্ভব অমানবিক ও নিষ্ঠুর সত্যকে বাস্তবে রুপায়িত করেছিলেন। ক্ষমতার জোরে বিটিভি’র মহা পরিচালককে বাধ্য করে আমাদের শত প্রচেষ্টার এই অনুষ্ঠান থেকে রাজ্জাক চাচার বক্তৃতার অংশটুকু বাদ দেওয়ানো হয়েছিলো। আমাদের এই আনন্দঘন কাজটিকে বিষাদের চাঁদরে ঢেকে দেওয়ার জন্য আমি আজও তাঁকে ক্ষমা করতে পারিনি। এতো ন্যাক্ষারজনক কাজ তিনি করেছেন বা করতে পারেন তা আজও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। সত্যি বলতে তখন মনকে শান্তনা দেওয়ার জন্যও কোন ভাষা খুঁজে পাইনি। ব্যক্তি স্বার্থ মানুষকে এতো নিচে নিয়ে আসতে পারে এবং এই রকম প্রগতিশীলধারীদের তা আমাদের জীবনে না ঘটলে বিশ্বাসে কষ্ট হতো,সন্দেহ নেই। আসলে কেউ কারো বক্তৃতা প্রচার বন্ধ করে বা মেধার সম্মূখে বালির বাঁধ সৃষ্টি করে তাকে তার নীতি-আদর্শকে হত্যা করতে পারেনা। মানুষের কর্মই তাকে মানবের মাঝে বাঁচিয়ে রাখে।
যা আজ রাজ্জাক চাচার বেলাই প্রযোজ্য ।

দুই:
আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের বিষয়ে লিখতে চাইলে বা চিন্তা করলে সর্বাগ্রে তাঁর জীবনের সর্বাপেক্ষা বিয়োগাতœক ঘটনাটি চোঁখের সম্মূখে আসে। যে বিষয়ে আলোকপাত করতে হৃদয়ে তাড়না অনুভব করছি অনেকদিন থেকে। যা অপরাধী মনের ক্ষমা চাওয়ার অভিপ্রায়ও। অপ্রকাশিত বিষয় গুলো লিখতে অনেক ভেবে চিন্তে সাহস অর্জন করতে হলো বটে।

এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন যে, ১৯৯৬সালের সাধারণ নির্বাচনে বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কর্মকৌশল প্রণয়ন ও সকল কার্যক্রমে দলের একজন নগন্য কর্মী হিসাবে সম্পৃক্ত ছিলাম। কিন্তু ২০০১সালের প্রথমার্ধে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে অভিবাসী হয়ে যাই, বিধায় ২০০১সালের সাধারন নির্বাচনে দলীয় কার্যক্রমে দৈহিকভাবে অনুপস্থিত ছিলাম। কিন্তু প্রবাস থেকে দল ও দলীয় প্রার্থীকে অন্যদের মতো সব সময়, নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছিলাম। এমনিতেই সদ্য প্রবাসে আসা ব্যক্তির নাড়ীর টান সহজে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। তদুপরি দেশে বিশেষতঃ বিয়ানীবাজারে ফেলে আসা দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্লাটফর্মের অগনিত নেতাকর্মীর সাথে আমার যে নিবিড় সম্পর্ক ছিলো, তা নির্বাচনের সময়ে দলের প্রয়োজনে নিজেকে আরো সুনিবিড় করে তুললো। বিয়ানীবাজারে দলের মধ্যকার নানান সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে দলকে বিজয়ের লক্ষে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রবাস থেকে আরো অনেকের মতো আমিও নিবেদিত ছিলাম। ফলে সহজেই ২০০১সালের সাধারণ নির্বাচনে বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যক্রম ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত ছিলাম। তাই ২০০১সালের সাধারণ নির্বাচনের সময়ে যুক্তরাজ্যে থাকলেও দেশের নির্বাচনী কার্যক্রমে যে একেবারেই সম্পৃক্ত ছিলাম না একথা বলার কোন অবকাশ নেই। যেহেতু বঙ্গবন্ধর আদর্শিক কর্মী ছিলাম এবং বিয়ানীবাজারেও দলের কর্মীবান্ধব একজন রাজনৈতিককর্মী ছিলাম, সে হিসাবে সংখ্যাঘরিষ্ট কর্মীরা তা খুব ভালোভাবে জানেন।

দুঃখের সাথে বলতে হয়, ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পরে, ব্যক্তিবিশেষের রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে নেহায়েত খুটকো অজুহাতে এমন একজন মহৎপ্রাণ ব্যক্তিত্ব, প্রতিভাবান সংগঠক ও দক্ষ নেতৃত্বকে বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে ন্যাক্কারজনকভাবে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো। এ প্রসঙ্গে আরেকজন খ্যাতিমান, ত্যাগী ও কিংবদন্তী নেতার নাম আসে অনায়াসে। তিনি বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিভিন্ন মেয়াদে দীর্ঘদিন যিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহসিক্ত, যাকে জাতির পিতা ‘বিয়ানীবাজারী আজিজ’ বলে ডাকতেন। আমাদের বিয়ানীবাজারে বঙ্গবন্ধু এসছিলেন। সেই সময়,তাঁর বাড়িতে স্বানন্দে খাবার খেয়েছেন ( আজিজ সাহেব সব সময় বঙ্গবন্ধুর গল্প করতে গিয়ে বলতেন- বঙ্গবন্ধু আমার স্ত্রীর হাতের রান্না সিলেটিদের প্রিয় হাঁস আর বাশেঁর সমন্ধয়ে তৈরী ‘‘করিল এর তরকারী” জীবনে প্রথম খেয়ে সিলেটি রকমারী রান্নার প্রসংসা করেছিলেন।বঙ্গবন্ধু পরবর্তীতে, বিভিন্ন সময়ে খাবার বিষয়ে তার সহকর্মীদের সাথে আলাপ হলে, সিলেটিদের ‘‘হাঁস ও বাঁশ রেসিপি’র কথা উল্লেখ করতেন এবং বলতেন সিলেটে গেলে এই খাবারের স্বাদ নেবার জন্য বলতেন। উল্লেখ্য সিলেট অঞ্চলে বাঁশের চারার কোমল অংশ কুচি করে কেটে হাঁস দিয়ে রেধে খাওয়া হয়,যা আতিœয়তার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ রেসিপি হিসাবে সমাদৃত।) বঙ্গবন্ধ তাঁর মাঝে উজ্জল লিডারশীপআলো দেখেছেন বলেই তিনি ‘‘বিয়ানীবাজারী আজিজ’’ হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং নিজে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হওয়ার অপরাধে তাঁর ভাই আব্দুল মান্নানকে পাক বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে ও তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেয় এবং আতœীয়-স্বজনদের পাক বাহিনী নির্মম নির্যাতন করে। যিনি তাঁর পুরো পরিবারকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনানুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের দূর্গ বানিয়েছিলেন এবং ১৯৭৫’র ১৫ই আগষ্ট স্বপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘদিন জেল খেটেছিলেন। পরবর্তীতে নানান পার্থিব লোভ লালসার মোঁহেও বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্রের সাথে আপোষ করেননি, সারাটি জীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর আওয়ামী লীগের পতাকাকে সমুড্ডীন রাখতে নিজের জীবন-যৌবন বিলিয়ে দিয়েছেন। সেই সর্বোচ্চ ত্যাগী , সর্বজনশ্রদ্ধেয়, বৃহত্তর সিলেটের বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম এম এ আজিজকেও দল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় চরম অপমাণ করে । যাকে এদতঅঞ্চলে 'আজিজ মিয়া' নামে মানুষ এক নামে চিনতো। বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদকে আমি সম্মান করে ’আজিজ চাচা’ বলে ডাকতাম।

আজিজ চাচা, রাজ্জাক চাচা প্রমূখদের হাতেগড়া সংগঠনে আমার মতো অনেকে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও পাবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যারা এই সংগঠনটি অক্লান্ত পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছিলেন, তাঁদেরকে তাঁদের নিজ হাতে নির্মিত নিবাস থেকে ‘আশ্রিত’ দ্ধারা অপমানিত হয়ে দল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে । আজিজ চাচা, তাঁকে অপমান করার ব্যাথা নিয়ে এই পৃথিবী ত্যাগ করেছেন আর রাজ্জাক চাচা অপমানের যন্ত্রণা সহ্য করে কোনোমতে বেঁচে আছেন। যদিও একসময় তাদের রাজনীতির পথ উন্মুক্ত করা হয়েছিলো তথাপি পূর্বের সেই জৌলুসে ফিরে আসার পথ কৌশলে রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কেননা তখন তাঁরা ছিলেন নিজ গৃহে পরবাসী। পরিস্থিতির আলোকে নিজেদের গুটিয়ে রাখাই ছিলো তাদের পক্ষে অধিকতর মানানসই । এই উভয় নেতার প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে তা ছিলো সংগঠনে তাঁদের অবদানের প্রেক্ষিতে শুধু বেমানান নয় তাঁদের প্রতি অন্যায় ও নিষ্ঠুর অপমান । ছিলো লঘু পাপে গুরুদণ্ড। প্রকৃত মুজিব সৈনিকরা যা আজও মেনে নেয়নি বা নিতে পারেনা। তাঁদের অপমানের কারণে এখনো মানুষ ক্ষুব্ধ, ব্যথিত। সংগঠনে চাপা ক্ষোভ বিরাজমান।

বর্তমান পরাবাস্তবতা হলো –বিয়ানীবাজারের এই দুই পরীক্ষিত নেতাকে তাঁদেরকে শাস্তি দেয়া আর বাস্তবতার অমিলের দরুন মানুষের কাছে তাঁদের আবেদন ও শ্রদ্ধা দুটোই বেড়েছে আকাশছোঁয়া ।

সত্য কোনদিন চাপা থাকেনা। চিরদিন মানুষকে দাবিয়ে রাখাও সম্ভব নয়। কেউ না কেউ মিথ্যার বেড়াজাল ও রাতের অন্ধকার ভেদ করে সত্যের প্রকাশ করবেই। কেননা ইতিহাস তার আপন গতিতে চলে। তাই সৎ সাহস নিয়েই বলছি, সেদিন তাদের বিরুদ্ধে গৃহিত কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ছিলো স্পষ্টত ভুল এবং আশ্রিত রাজনৈতিক নেতা দ্বারা প্ররোচিত। মূলতঃ বিয়ানীবাজারের গোটা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে এককভাবে মুষ্টিবদ্ধ করে সকল রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার মানসেই তাঁদেরকে সংগঠন থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিলো । যাতে বিনা চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবাদে এককভাবে দল পরিচালনা করা যায়। যা একটি দীর্ঘ মেয়াদী গভীর ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার অংশ ছিলো । হ্যাঁ, আমি স্বীকার করছি, সেদিন আমাদের শক্তি ও সাহস থাকা সত্বেও এবং অনেক কিছু বুঝতে পেরেও এমন ন্যাক্ষারজনক ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ আমরা করিনি। এমনকি আব্দুল আজিজ ও আব্দুর রাজ্জাক বিশেষ করে যাদেরকে রাজনৈতিক ও আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করতেন, যাদেরকে বলতে গেলে রাস্তা থেকে তুলে এনে রাজনীতির শিক্ষা - দীক্ষা প্রদান করে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তাদের পক্ষেও কেউ প্রতিবাদের 'টু' শব্দটিও করেনি। সবাই যেন এক অজানা অচেনা ভয়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বলতে দ্বিধা নেই, যদিও এ সিদ্ধান্তে কেউ সুখি ছিলামনা এবং যেহেতু কেউ প্রতিবাদ করিনি, আসলে আমরা সকলেই সেদিন চিরাচরিত পৌরুষত্বকে বিসর্জন দিয়েছিলাম।

২০০১সালের সংসদ নির্বাচনে বিয়ানীবাজার - গোলাপগঞ্জ আসনে অনেক কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় ঘটেছিলো। কিন্তু দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয়ের সমূহ দোষের দোষী বানিয়ে তাঁদেরকে (দুজনই বিয়ানীবাজারের ) দল থেকে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল। তবে সত্যিই কি তাঁরা এত বড়ো মাপের দোষী ছিলেন? দুটি উপজেলার মানুষের উপর কিংবা দলের নেতাকর্মীর উপর সত্যিই কি তাঁদের এতো প্রভাব ছিলো? গোলাপগঞ্জেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলেন, তবে গোলাপগঞ্জের কাউকে কি বহিস্কার করা হলো? এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ে প্রার্থীর নিজের ব্যর্থতা ছিলো কি? নির্বাচনের পূর্বে দুটি উপজেলায় দলের মধ্যকার কোন্দল নিরসনে তাঁর আন্তরিকতা কতটুকু ছিলো? কেন এসব কোন্দল সৃষ্টি হয়েছিলো? সর্বোপরি কেন তিনি পরাজিত হয়েছিলেন? আরো অনেক প্রশ্ন তৃণমূল নেতাদের মুখে মুখে এখন উচ্চারিত হচ্ছে?

আজ যখন তৎকালীন প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ও দলের একজন একনিষ্ট সমর্থক ও নগন্য কর্মী হিসাবে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি, তখন মনে হয় নির্বাচনে পরাজয়ে সমূহ দোষের দোষী হিসাবে এ দুজন নেতাকে দল থেকে নিষ্টুরভাবে বিতাড়িত করা ছিলো একটি দীর্ঘ মেয়াদী ষড়যন্ত্রের অংশ । ২০০১সালের সাধারণ নির্বাচনে সিলেট ৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় সে ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়নে বাস্তবায়নকারীর সম্মূখে একটি সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহারে এ কৃতি নেতাদ্বয়কে দল থেকে নিষ্টুরভাবে বহিস্কার করে ষোলকলা পূর্ন করা হয়েছিলো।

১৯৯৬'র সাধারণ নির্বাচনের একজন একনিষ্ট কর্মী ও ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের একজন একনিষ্ট সহযোগী হওয়ার সুবাদে আমি নিজেই অনেক ঘটনার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। শুধুমাত্র একটি মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে পাক বাহিনীর হাতে নির্যাতিত একটি পরিবারের সন্তান হিসেবে নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগ্রামে সংগঠনের পতাকাকে সমুড্ডীন রাখতে নিজেও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে অবতীর্ণ হয়েছিলাম। তাই ২০০১সালের নির্বাচনে সিলেট ৬ আসনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ে আমাদের ব্যথা-বেদনাও কারো চেয়ে কম ছিলোনা। কারণ এ সংগঠনের মাধ্যমেই তো বিয়ানীবাজারের মাটি ও মানুষের সাথে আমার ও আমার পরিবারের সম্পর্ক নিবিড় হয়েছে।

নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারীর বিএনপির পাঁতানো নির্বাচনকে প্রতিহত করতে গিয়ে চারখাই পল্লী শাসন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের মেধাবী ছাত্র, ছাত্রলীগ নেতা শহীদ হুমায়ুন কবির চৌধুরী নাহিদের নির্মম মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তাঁর রক্তস্নাত শপথে বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ গোটা আওয়ামী পরিবার যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো, তাতে পরবর্তীতে ১২ই জুনের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠের প্রতিটি কর্মীকে মনে হয়েছিলো যুদ্ধের একেকজন সৈনিক। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনী লড়াইয়ের যে যুদ্ধে মূলতঃ নেতৃত্ব দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। বিশেষতঃ কালের শ্রেষ্ট মেধাবী ছাত্রনেতা, বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সংগ্রামী আহ্বায়ক আব্দুল বারীর সুদৃঢ় নেতৃত্বে কাঙ্খিত লক্ষপানে
ছাত্রলীগ ছিলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত এবং শহীদ নাহিদের রক্তের প্রতিশোধের স্পৃহায় অবিরাম ছুটে চলা সূর্য সৈনিকের দল। গোটা সংগঠনের কার্যক্রমে ছিলো যথাযত সমন্নয়। তাই দলের মাঝে নানান সমস্যা থাকার পরও আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করি। যা স্পষ্টতই, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জনপ্রিয়তার কারণে হয়নি। সম্ভব হয়েছিলো গোটা সংগঠনের ঐক্যের ফলে। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে লড়াইয়ের সে দৃশ্য ছিলো বিরল।

কিন্তু, কেন? সংক্ষেপে বলতে পারি এজন্য যে, ৯৬’র নির্বাচনে জয় লাভ করার পর নানান কারণে স্থানীয় এমপি’র সাথে তৃণমূলের ত্যাগী আওয়ামী লীগ পরিবারের (আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য সংগঠনের) দুরত্ব সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় অনেক প্রশ্ন। যার ফলে ২০০১সালের নির্বাচনে দলীয় কার্যক্রমে সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান ছিলো। ৯৬’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী ১০জন কর্মীর সমান কাজ করেছিলো বলেই , নানাবিদ সমস্যা থাকা সত্বেও সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া ব্যক্তিকে আমরা বিজয়ী করে 'নেতা'র আসনে বসিয়েছিলাম। কিন্তু ২০০১সালের নির্বাচনে কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের ১০জন কর্মীও একজনের কাজ করেনি। আরো কিছু প্রশ্নের পুরো উত্তর সে নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী নিজেই ভালো দিতে পারবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করতে অন্য সকল রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশনের চারদলীয় জোটমুখি অবস্থান দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের খ্যাতিমান নেতৃবৃন্দকেও শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে বাধ্য করেছে। উক্ত নির্বাচনে জননেতা জিল্লুর রহমান, সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমদ, আমির হোসেন আমু, আবুল মাল আং মুহিত, মোঃ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রমূখ নেতৃবৃন্দের মতো জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা কালজয়ী বাঘা নেতারাও পরাজিত হয়েছিলেন। তাঁদের পরাজয়েও নানান ফেক্টর কাজ করেছিলো।

কিন্তু সিলেট ৬, বিয়ানীবাজার- গোলাপগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ে সমগ্র দোষের দোষী সাব্যস্ত হলেন দুই কিংবদন্তী আওয়ামী লীগ নেতা, হাজারো কর্মী গড়ার কারিগর, স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক জননেতা এম এ আজিজ ও আব্দুর রাজ্জাক। আমি স্পষ্টত বলবো, এ সিদ্ধান্ত ছিলো ভূল ও প্রশ্নবিদ্ধ। যা আজও মানুষের কাছে শত প্রশ্নের ধারক।

ফলতঃ এর মধ্য দিয়েই বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগে একটি আধিপত্যবাদী রাজনীতির শুরু হয়েছিলো। যা আজকের ন্যাক্ষারজনক পরিস্থিতির জন্য দায়ী। আজ ১৫বছর থেকে বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগে কাউন্সিল নেই, ছাত্রলীগ- যুবলীগের কমিটি নেই ও সাংগঠনিক স্থবিরতা প্রায় এক যুগ থেকে।

বর্তমানে ছাত্রলীগ স্পষ্টত পাঁচ ভাগে বিভক্ত। অসংখ্যবার ছাত্রলীগ এর এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের সাথে রক্তক্ষয়ী সংগর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এবং একজন কর্মী খুনও হয়েছেন। নিজ দলের প্রতিপক্ষের অনেক মামলায় অসংখ্য ছাত্রনেতা আতœগোপনে আছেন। আবার অসংখ্য ছাত্রলীগ নেতাদের কারাবরণও করতে হয়েছে এই বিভক্তরাজনীতির যাতাকলে পড়ে। যা মোটেও কাম্য নয় । এবং এই অসংখ্য ছাত্রলাগী কর্মীদেরও কোন দোষ দেখছিনা। এটা একটি পরিকল্পিত অপরাজনীতি চর্চার অংশবিশেষ; যার প্রধান লক্ষ হলো আওয়ামী পরিবারকে বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত করে বিয়ানীবাজারে ব্যক্তি বিশেষের ‘একক রাজনৈতিক কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্টার চেষ্টা ইত্যাদি।

এভাবে বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অতীতের সমগ্র রক্তস্নাত সোনালী অর্জনগুলোকে কার্যতঃ বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। এভাবে সংগঠন বছরের পর বছর পরিচালিত হওয়ার ফলে আজ সংগঠনে একটি চরিত্রহীন 'মোসাহেবী' নেতা ও তদানুসারে কর্মী বাহিনী গড়ে উঠেছে। যাদের ‘অপার মহীমাময় নেতৃত্ব’ ও ’কলুষিত খপ্পর’ থেকে নিজেদের বাঁচাতে আজ দেশে বিদেশে অবস্থানরত ত্যাগী নেতাকর্মীদের করুন আর্তনাদ মূহুর্মূহু ধ্বনি-প্রতিধ্বনীত হচ্ছে দেশে-বিদেশে, চতূর্দিকে। এ অবস্থার শেষ পরিণতি হচ্ছে নেতৃত্ব শূন্যতা। যার আশু নিরসন জরুরী। অন্যথায় এ স্বার্থান্বেষী পরিবেশ ,যা সংগঠনে চরিত্রহীন রাজনৈতিক কর্মী সৃষ্টি করার পথকে উৎসাহিত করবে এবং এই অ পরাজনীতি প্রকৃত নেতৃত্বগুন সম্পন্ন নেতা সৃষ্টির অন্তরায়। যা দীর্ঘ মেয়াদে সংগঠনের জন্য ক্যান্সার ব্যাদির মতো ক্ষতিকর ।

আজ দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে চাই, দলমত নির্বিশেষে মানুষ আব্দুল আজিজ ও আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আওয়ামী লীগ কর্তৃক এদুজন মানুষ ও তাঁদের পরিবারের প্রতি অন্যায়ভাবে সাংগঠনিক অবিচার ও নিষ্টুর মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে মনে করে। বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা আইনজীবি ব্যারিষ্টার রফিকুল হক বলেছিলেন “ বিশ্ব বিচার ব্যবস্থায় একটি মিথ প্রচলিত আছে যে, আদালত রায় দেওয়ার পরে অধিকাংশ জনগন যদি মনে করে এটি ন্যায় বিচার হয়েছে, সেটিই ন্যায় বিচার বলে স্বীকৃত। আর আদালত রায় দেওয়ার পরে অধিকাংশ জনগণ যদি মনে করে এটি অন্যায় রায় হয়েছে তবে আদালত রায় দিলেও এটি অন্যায় ও অবিচার বলে প্রতিয়মান হয়।”

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এম এ আজিজ ও আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের গৃহিত সিদ্ধান্ত ছিলো অন্যায় ও অবিচার এবং ব্যক্তি বিশেষের দ্বারা প্ররোচিত। দীর্ঘদিন পর এ ব্যক্তিদ্বয়ের প্রতি গণমানুষের হৃদয়ের আকুতি দেখে নিজেকেও অপরাধী মনে করে বিবেকের তাড়নায় আজ অনেক সত্যকে স্বীকার করতে প্রবৃত্ত হলাম।

পবিত্র হাদিস শরিফে আছে এবং তদানুসারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায়ও পড়েছিলাম “ অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃনা তারে যেন তৃণসম দহে”। হ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক এই দুই কালজয়ী ও কিংবদন্তী নেতার প্রতি একটি অন্যায়কে মুখ বুজে সহ্য করা বা দুর্বল চিত্তে মেনে নেওয়ার অপরাধে আমরাও অপরাধী।

বিশ্বাস করি, ক্ষমা চাওয়ার মাঝে লজ্জার কিছু নেই। অবশেষে হৃদয়ের তাড়নায় আজ চিত্ত বিগলিত। তাই আজ উম্মুক্ত হৃদয়ে অপরাধীর কাঁতর কন্ঠে আবেদন করছি, আমাদের ক্ষমা করুন এম এ আজিজ ও আব্দুর রাজ্জাক । আপনাদের সাজানো বাগানে আমরাও ফুটেছিলাম শতদল হয়ে। কিন্তু সুযোগ্য সময়ে অনাহুত ভয় ও হীনমন্যতাকে জয় করতে পারিনি। প্রতিবাদের ভাষা হারিয়েছিলাম অন্যায় ও অবিচারকে রুখতে। তাই আজ হৃদয়খুলে আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। ভবিষ্যতে আর কারো জীবনে এমন না হোক-বিধাতার কাছে প্রার্থনা।

 জননেতা আব্দুর রাজ্জাক সাহেব কর্মীবান্ধব- সৎ- নির্লোভ, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠনের অনেক গুলো চেলেঞ্জিং সাহসি দ্বায়িত্ব পালন করেছেন- প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী যোগ্যতা দিয়েই। অগণিত কর্মীরা এখনও সমানে তাঁকে ভালোবাসে । কারণটাও সহজভাবে বুঝা য়ায়- আব্দুর রাজ্জাক একজন তৃণমূল বান্ধব সৎ,পরোপকারী ভালোমনের রাজনৈতিক মানুষ। সমাজের প্রতি এই নির্লোভ ব্যক্তির কীর্তি, মানুষের প্রতি অপার দান, সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ভালবাসা তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে অনন্ত কাল। আব্দুর রাজ্জাক, আপনি কিংবদন্তী। সব সময় ভাল থাকুন।

লেখক : সাবেক ভিপি (১৯৯৫-৯৬), বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদ, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন