আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বাতাসে বহিছে প্রেম নয়নে লাগিল নেশা...

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০২-১৩ ২০:৩৭:৪৬

আল-আমিন ::
গগনের নভোনীলে
মনেরও গোপনে
বাজে ঐ বাজে ঐ বাজে ঐ
পলাশেরও নেশা মাখি চলেছি দুজনে
বাসনার রঙ্গে মিশি শ্যামলে স্বপনে
কুহু কুহু শুনা যায় কুকিলের কুহুতান
বসন্ত এসে গেছে।
পূর্ণিমা রাতে ঐ ছুটাছুটি করে কারা
দখিনা পবনে দুলে......

বাঙালির সংস্কৃতি আর বাংলার কৃষ্টির সঙ্গে বসন্ত এক মায়ায় মিলবন্ধন। বাঙালি চেতনার উৎপত্তি বসন্ত। বাঙালিরা মাতৃভাষার জন্য ৫২’র ফেব্র“য়ারিকে বেছে নিয়েছিলেন। ফেব্র“য়ারির ফাল্গুনের দিনগুলোতে রফিক সালাম জব্বার শফিউলরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। এই ফাল্গুনের ফেব্র“য়ারিতে মাস ব্যাপী অমর একুশে বই মেলা হয়। কবি লেখক ও সাহিত্যিকের মিলন মেলা ঘটে এই বইমেলাকে ঘিরে। সারা বছর তারা যে শক্তিগুলো অর্জন করে এই ফাল্গুনের একুশে বইমেলাতে উজাড় করে দেয়। এই সময়ে সাহিত্য প্রেমিক ভক্তরা তাদের প্রিয় কবি লেখকদের স্পর্শতা লাভ করে। কিশোর কিশোরীদের তনুমনগুলো রোমাঞ্চনায় জেগে উঠে। শহর ও গ্রামের কৃষ্ণচূড়ার ডালগুলো ফুলে ফুলে ভরে উঠে। এই লাল ফুলগুলো মনে করিয়ে দেয় প্রিয়তম অথবা প্রিয়তমার ছবি। খররৌদ্র তাপে দিনের দক্ষিণা বাতাস আর রাতের পূর্ণিমার আলো ভালো লাগা হৃদয়ে জাগিয়ে তুলে ভালবাসা।

এই ফাল্গুনের ২য় দিনে বিশ্ব ভালবাসা দিবস। প্রেম মমত্ব ভাললাগা ভালবাসা, বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালবাসা, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালবাসা, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালবাসা, প্রিয়তমার প্রতি প্রিয়তমের ভালবাসা, মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা এক সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টিকরে। বাড়ির আঙ্গিনার বসন্তের দিনের বেলী গন্ধরাজ ফুলের সুগন্ধে ভ্রমরে গান আর কুকিলের কুহু কুহু ভোরের ঘুম ভেঙ্গে কবির কবিতা লেখার এই ফাল্গুনেই মমত্ব সময়।

এই ঋতুরাজ বসন্তে মেয়েরা বাসন্তী সাজে। প্রকৃতি সেই সাজে প্রেমোম্মুখ। মনেতে ফাগুনের আনন্দে রঙ্গিন রং ছড়িয়ে দেয়। কবির কবিতায় ভালবাসা প্রেম ভরিয়ে তুলে প্রিয়তমার জন্য। তখন মনে হয় কবির একটি কবিতা একজন প্রিয়তমা। একটি ঋতু একটি বসন্ত। চারদিকে প্রকৃতির প্রেমে কবির কবিতাখানা পলাশ শিমূল আর কৃষ্ণচূড়ায় মিশে যায়। এই ফাল্গুনের হাওয়া দেহে আলিঙ্গন করে। কবির কবিতায় রূপ রঙে সাজে বাংলার প্রকৃতি বাংলাদেশের প্রকৃতি। এই সময়ে বাংলাদেশের প্রকৃতিও সাজে রাজকীয় সাজে। শীতকালে ঝড়ে পড়া পাতার ফাকে নতুন পাতা গজিয়ে সবুজ পাতা ছেয়ে যায় গাছগুলো। পাখিরাও কবিদের মতো মনের আনন্দে নিজেদের কুহুকুহু বাণীগুলো মানবের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। লাল ফুল, হলুদ ফুল, গোলাপী ফুল, সাদা ফুলসহ হাজার রঙের ফুল ফুটে এই বসন্তে। ভ্রমর মনের আনন্দে গুঞ্জন করতে করতে সুগন্ধির  পুুষ্পে ও আমের মুকুলের মধুপানের মত্ত হয়।

বাংলা সাহিত্যে বসন্তকে নানাভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন- “মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে, মধুর মলয়-সমীরে মধুর মিলন রটাতে।"মনের আকাশে ঐ ফাগুন; পিয়াসী পাখি উড়তে যায় সুদূরেতে, কার যে ছায়া মাখি! ফাগুনের রঙে রেঙেছো তুমি, না বলা কথা আজ বলবো আমি, হৃদয়ের ডাক শুনবে কি তুমি? "ফাল্গুনে শুরু হয় গুনগুনানী, ভোমরাটা গায় গান ঘুম ভাঙানি। "আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী; চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি। "বসন্ত এলো এলো এলো রে পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহরে মুহু মুহু কুহু কুহু তানে। "ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান, তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান।” ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল।"স্পন্দিত নদীজল ঝিলিমিলি করে, জ্যোৎস্নার ঝিকিমিকি বালুকার চরে। নৌকা ডাঙায় বাঁধা, কাণ্ডারী জাগে, পূর্ণিমারাত্রির মতো।" বিহুরে লগন মধুরে লগন, অকাশে বাতাসে লাগিল রে চম্পা ফুটিছে চামলী ফুটিছে, তার সুবাসে ময়না আমার ভাসিল রে। "হলুদ বরন মেঘলা এ তার যৌবন উছলায় লাল ওরনার আড়াল দিয়া চক্ষু দুটি চায় খোপায় টগর ময়না বুঝি আমায় খুঁজে হায় বসন্তে এ বিহুর লগন উত্তাল হয়ে যায়।" মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে ভ্রমর গুঞ্জে গুঞ্জে গুনগুন গানে।" হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যত আছে, হয়তো গাহে পাখি অন্তর উদাস করা সুরে বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি তবুও ফুটেছে জবা, দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে, তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক।"

একঝাক পাখি এসে ঐকতানে, গান গায় এক সাথে ভোর বিহনে।" কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি- দখিন দুয়ার গেছে খুলি? বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?

সবাইকে ফাল্গুনের বাসন্তী শুভেচ্ছা।

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন