আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

নিখোঁজ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সন্ধানে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১১-১৮ ১৬:৫০:০৭

প্রকৌশলী ফেরদৌস আব্বাস চৌধুরী :: গত কয়েকদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কিছু ভূঁইফুর অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিখোঁজ, প্রায় ৩০০০ কোটি টাকার লোকসান’ শীর্ষক সংবাদ প্রচার করছে যা ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে কিছু গন্ডমূর্খ দলের মাধ্যমে।

এই ভুয়া সংবাদটি সমানতালে শেয়ার করে যাচ্ছে এক বিশেষ শ্রেণী, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন গুজব রটিয়ে অনৈতিক ফাঁয়দা হাসিলের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে জনমনে সন্দেহ আর আতংকের সৃষ্টি করছে। যদিও এখানে সন্দেহ এবং আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।

‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ নিখোঁজ হয়নি বরং তা তার কক্ষপথে বীরদর্পে আবর্তিত হচ্ছে লাল-সবুজের পতাকার স্বাক্ষর রেখে। প্রগতীশীল ধারার নিউজ পোর্টাল বা নিউজ পেপারে চোখ রাখলেই তা প্রতীয়মান হয়।

তবে এক বিশেষ শ্রেণী আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমনে এ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এই শ্রেণী ‘চিলে কান নিয়েছে’ এই মতবাদে বিশ্বাসী, কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নে এরা মোটেও বিশ্বাসী না। মূলত এরা বাংলাদশের সামগ্রিক উন্নয়ন, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী না। কথায় আছে অল্প শিক্ষা ভয়ংকর, যার প্রতিফলন এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পড়েছে।

এখন মূল কথায় আসা যাক, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ (BS-1) বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ উপগ্রহ, গত ১১ মে ২০১৮ ইডিটি, বাংলাদেশ মান সময় ১২ মে ভোর সোয়া দুইটার দিকে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় যা ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ রকেটের প্রথম পেলোড উৎক্ষেপণ ছিল। ইতিমধ্যে মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ তার কক্ষপথে পৌঁছে গেছে এবং গাজীপুরস্থ ভূ-উপকেন্দ্রে সফলভাবে সংকেত প্রদান করছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ আমাদের মত দেশের জন্যে নতুন বিষয়, এর প্রযুক্তিগত দিক কিংবা সামগ্রিক দিক চিন্তা করলে এর বিকল্প নেই। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এই আধুনিক যুগে খোদ আফগানিস্তান এবং শ্রীলাংকার মত দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে,  ঠিক সেখানে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের কেনো থাকবেনা? 

যারা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিখোঁজ রয়েছে বলে পৈশাচিক আনন্দে মেতেছেন, তাদের জন্যে কয়েকটি দুঃখের সংবাদ দিতে চাই, যা শুনলে তাদের পিত্ত পুড়ে যাবে। সম্প্রতি সাফ ফুটবলের খেলাগুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সফলভাবে সরাসরি সম্প্রচার করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন।

এছাড়া বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর বাণিজ্যিক কার্যক্রমে পরামর্শক হিসেবে কাজ করতে এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ স্যাটেলাইট ও থাইল্যান্ডের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এবং থাইল্যান্ড স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত থাইকম পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) একটি বহু-বার্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এখন কথা হচ্ছে, যেসব মূর্খের দল ভূঁইফুর এইসব নিউজপোর্টাল দেখে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিখোঁজ রয়েছে বলে আনন্দ উৎসব করছে, তাদের কাছে প্রশ্ন নিখোঁজ হওয়া স্যাটেলাইট কোম্পানির সাথে থাইল্যান্ডের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থাইকম কেনোই বা চুক্তি করবে? তাতে তার লাভ কি? আর মূল প্রশ্ন বাস্তবিক অর্থে স্যাটেলাইট কি আদৌ নিখোঁজ হওয়া সম্ভব কিনা?? এর যৌক্তিকতা কতটুকু?

তাছাড়া বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট ও ভিসেট সেবা পৌঁছে দিতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) এর সাথে আরেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ইনফোরমেটিক্স চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

গত শুক্রবার(৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালেস অ্যালানিয়া স্পেসের কাছ থেকে স্যাটেলাইটটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণও ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বুঝে পেয়েছে।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে আধুনিক ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার জগতে দিনে-দুপুরে এভাবে মিথ্যা-বানোয়াট এবং গুজব রটিয়ে কারা এর ফাঁয়দা নিতে চাচ্ছে? কারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাবগুলো থেকে খুব সহজেই ঐ বিশেষ শ্রেণীর স্বরুপ উদঘাটিত হয়ে যায়।

উপরোন্তু কথা থেকে প্রতীয়মান ষোল কোটি বাঙ্গালীর যে আশা-আকাংখা এবং উন্নয়নের বাস্তব ছবি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে সেই অহংকার আর গৌরবটা সহ্য হচ্ছে না এই বিশেষ শ্রেণির। প্রায় ২০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে যারা হাহুতাশ করছেন তাদের জানা রাখা ভালো ১৫ বছর মেয়াদী এই কার্যক্রম থেকে তার দ্বিগুণের ও বেশী আয় করা সম্ভব যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে। আর এর প্রযুক্তিগত দিকের ব্যবহার সহজ করবে আমাদের তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর দৈনন্দিন জীবন, কৃষি নির্ভর অর্থনীতি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কৌশলগত দিক।

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন