আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

পাগলদের নিয়েই আমার কারবার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-২৫ ১০:৫১:৩৫

নাজমুল ইসলাম :: সব পাগলদের নিয়ে আমার কারবার। অনিককে যখন দেখতে গেলাম পায়ের ৩টি আঙ্গুল কাটা আর গায়ে প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে বলে ভাই আফনে আইছইন আমি ভালা অইগেছি, এখবার আফনে জয় বাংলা স্লোগান দিলে শক্তি পাইলিমু, আফনার লগে মিছিল দিতাম ভাই। পরের দিন যখন ডাক্তার আবার চেক করে বলেছেন পা কেটে ফেলতে হবে তখন সারাদিন কান্নাকাটি করছে খবর পেয়ে বিকেলে আবার হাসপাতালে গেলাম গিয়ে দেখি অচেতনের মতো পড়ে আছে বিছানায়।

অনিক অন্তুর (Anik Antu) অসহায় মা ছেলের বুকে মাথা রেখে চোখ বুঝে পড়ে আছেন। পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত বুলাবার পর যখন চোখ মেলে আমাকে দেখলো সেকি হাসি, যেন সমস্ত কষ্ট নিমিষেই মিলিয়ে গেছে। এরপর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত দিলাম হাসিমুখে, তার পা কেটে ফেলতে হবে এই কথা অনিককে আমি বলার পর আর কাদেনি, অন্তত আমার সামনে কাদেনি, এতো কষ্ট সহ্য করে এই ছেলেটি আমাকে বুকে টেনে নিয়ে কি বলেছে জানেন,ব লে ভাই আফনে আমারে অতো মায়া করইন আগে জানতামনা।

ভাই, হায়রে পাগলের দল, এঁদের নিয়ে কি করি ভাই, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এরা ভালোবাসার কথা বলে, সম্মানের কথা বলে, অথচ এই পাগলদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতিদান দেয়ার সক্ষমতা কিংবা শক্তি আমার বা আমাদের নেই।

আজ অনিকের পা কাটা হয়েছে, আমি ইচ্ছা করেই সিলেট চলে এসেছি, চাইলে অপারেশনের সময় সামনে থাকতে পারতাম, কিন্তু অনিক এবং অনিকের মায়ের সামনে আমি যে কাঠিন্যর মুখোশ পড়ে থাকি তা সাথে সাথেই খুলে পড়তো বলেই আমি সেই পথে হাটিনি।

কেননা এই ছেলের সামনে এখন দুর্বলতা দেখানোর বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই, এঁদের কে এখন আশা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আজ সন্ধার পর অনিকের সাথে কথা বলেছি,অনিকের মায়ের পেটের ভাই না হয়েও যে ভাইয়ের চেয়ে বেশি তার সেই প্রিয় বন্ধু, তার ছায়া সঙ্গী (Alamin Ahmed) কল ধরিয়ে দিয়ে বলেছে সারাদিন কান্নাকাটি করছে। তাই আবারো সেই মুখোশ পড়ে কথা বলা, আবারো আশ্বাস দিয়েছি এইসব কিছুই নয়। পাগলটা আবারো আমার কথা বিশ্বাস করেছে। কথা বলিয়ে দিয়েছি আমাদের ভাই  জাহাঙ্গীর আলম (Jahangir Alom) ভাইয়ের সাথেও। জানিনা আমাদের সাথে কথা বলে কি সান্ত্বনা অনিক পেয়েছে।

কিন্তু আমি ভাই বড্ড কষ্ট আছিরে, কাউকে বলতে পারছিনা, বুঝাতে পারছিনা, কাউকে দেখাতে পারিনা, আমি খুব অসহায় অবস্থায় আছিরে ভাই, তর মতো এতো উচ্ছ্বল ছেলের এই অবস্থা মেনে নিতে পারিনারে ভাি।

অনিক যখন সারোয়ারের কথা বলে আমি তখন অবলিলায় বলি সারোয়ার ভালো আছে, মাথায় সামান্য চোট পেয়েছে তাই কথা বলতে পারছেনা। কিছুদিন পড়েই কথা বলিয়ে দেবো। এই কথা আসলেই কি মিথ্যা? আমাদের সারোয়ার তো মাথায় আঘাত পেয়েই ঘুমিয়ে আছে অন্ধকার কবরে রাব্বে করিমের দরবারে। সেখানে নিশ্চয় সারোয়ার ভালো আছে। এতো শত মানুষের দোয়া নিশ্চয় বিফলে যাবেনা, নিশ্চয় ঐ দূর আকাশের তারা হয়ে সারোয়ার আবারো কথা বলবে আমার সাথে, আমাদের সাথে। সেদিন না হয় অনিককে কথা বলিয়ে দেবো তার প্রিয় বন্ধুর সাথে।

লেখক: সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য

(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন