আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

একুশ বছরে পদার্পণ, জ্ঞানের আলোকবর্তিকা : লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-৩১ ১৯:৫৫:০৩

একুশ বছরে পদার্পণ, জ্ঞানের আলোকবর্তিকা : লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ

মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম :: ভাটেরা তাম্র ফলকদ্বয় প্রমান করে প্রাচীনকাল থেকে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা শিক্ষা ও প্রযুক্তি শিক্ষায় এগিয়ে ছিল। আবহমান কাল থেকে নানান ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবাহে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার সরোবরে এক অনন্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ’।

যা ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে কুড়ি বছরে পা রেখেছে। অতি অল্প সময়ে এ কলেজ একটি বাতিঘরে রূপান্তরিত হয়ে আলোকিত মানুষদের ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বময়। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর এ অঞ্চলের মানুষের শত বছরের প্রত্যাশার প্রাপ্তি ঘটিয়ে কুমিল্লা বোর্ড থেকে প্রথম স্বীকৃতি পায় উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘লংলা আধুনিক মহাবিদ্যালয়’ নামে। মাত্র ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা করে ছোট্ট চারা গাছ এখন বলিষ্ট বৃক্ষে পরিণত হচ্ছে। এর সাফল্যের ধারাবহিকতা অক্ষুন্ন থাকবে কালের যাত্রায়।

কুলাউড়ার দক্ষিণাঞ্চল শিক্ষা-দীক্ষায় আগ্রহী মানুষের অভাব ছিলনা। বৃটিশপূর্ব যুগে পাঠশালা, মক্তব ও টোলের প্রচলন ছিল। বৃটিশ আমলে পাঠশালাগুলো প্রাইমারি স্কুলে পরিণত হয়। এ অঞ্চলে প্রথম উচ্চ বিদ্যালয়ের পত্তন হয় ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে আলী আমজদ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। পরে অনেকগুলো উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হলেও দীর্ঘ শত বছরেও এখানে কোনো কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়নি। রবিরবাজারকে কেন্দ্র করে কলেজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছিল বেশ ক’বার। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিঘ্ন ঘটেছিল। যার ফলে সামর্থ্যহীন শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছিল অকালে। তবে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে সম্মিলিত ভাবে কলেজ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেয়া হয়।

বিচারপতি মিজবাহ উদ্দীন হোসেনের নাম কলেজের নামরণের প্রস্তাব ও উঠে, কিন্ত ব্যক্তির নামে ব্যবহার করতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন; তহবিলের অভাবে এটি সম্ভব হয়নি। তারপরও গণ্যমান্য ব্যক্তিবৃন্দ ও এলাকার সাধারণ মানুষের প্রবল চেষ্টা সত্বেও এটি বিভিন্ন কারণে ব্যহত হয়।

জানা যায়, রাউৎগাঁও নিবাসী সদ্য ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর খন্দকার আব্দুল ওয়াহিদ সারোয়ার ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ের কোন একদিন ঢাকা থেকে কুলাউড়া আসার পথে সাবেক এম.পি. এ.এন.এম. ইউছুফকে রাউৎগাঁওয়ে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা ব্যক্ত করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান এবং রাউৎগাঁওয়ে আসবেন বলে প্রতিশ্রæতি দেন। কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব ও রাউৎগাঁও ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির তোফায়েল ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের আনুষ্ঠানিক ছাত্র ভর্তি সমাবেশের ক্রোড়পত্রে তাঁর বক্তৃতায় লংলা আধুনিক মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক তথ্য তুলে ধরেন। (উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এম.পি. ও বিশেষ অতিথি ছিলেন হযরত মাওলানা নজমুদ্দিন চৌধুরী বিশকুটি, তৎকালীন থানা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিয়াজুল হক)।

২৫ আগস্ট ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে এক আরজনামার মাধ্যমে কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও, টিলাগাঁও, পৃথিমপাশা ও কর্মধা ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষানুরাগীদের এক সভা আহবান করা হলে ৩১ আগস্ট ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব রাউৎগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন অনুপম কান্তি দেব চৌধুরীর কারখানা (অনুশীলন চক্রের কার্যালয়) প্রাঙ্গনে এক বিশাল সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনশত আগতদের সর্ব সম্মতিক্রমে কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গৃহিত হয়। সাবেক এম.পি. নওয়াব আলী আব্বাছ খানকে সভাপতি, কর্মধা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ নজিব আলী ও টিলাগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহিউদ্দিন আহমেদকে সহ সভাপতি, রাউৎগাঁও ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল মোক্তাদির (তোফায়েল) কে সম্পাদক ও ডাঃ অজিত কুমার দেব চৌধুরীকে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়। এ.এন.এম. ইউছুফকে খন্ডকালীন অধ্যক্ষ ও খন্দকার আব্দুল ওয়াহিদ সারোয়ারকে ভর্তি তত্ত¡বধায়ক ও প্রভাষক নিয়োগ করা হয়। লংলা পরগনার ঐতিহ্য বহনের লক্ষ্যে এবং আধুনিক বিশে^র সমমানের দর্শনে শিক্ষাদান পদ্ধতির বিস্তার সাধনে কলেজের নামকরণ হয় ‘লংলা আধুনিক মহাবিদ্যালয়’।

এই সভায় রাউৎগাঁও, টিলাগাঁও, পৃথিমপাশা ও কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানগণ ও সর্বজন স্বীকৃত জননেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট স্থান নির্বাচন ও ভূমি সংগ্রহ উপকমিটি নামে আরেকটি উপ কমিটি গঠিত হয়। এই উপকমিটি ৭, ১২ ও ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে ধারাবাহিক সভায় মিলিত হয়ে ১২ নম্বর পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর ঈদগাহ্ এর উত্তরাংশে ও ৮ নম্বর রাউৎগাঁও ইউনিয়নের লালপুর-হিঙ্গাজীয়া পাকা রাস্তার দক্ষিনাংশের মধ্যস্থিত অঞ্চলটিকে কলেজের জন্য উপযোগী বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কমিটির প্রচেষ্টায় বিশিষ্ট দানবীর মনরাজ নিবাসী সুশীল চন্দ্র দাস ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ তারিখে মনরাজ সাহেব বাড়ীর সম্মুখস্ত মাঠে দেড় কেদার ভূমি দানের ঘোষনা দেন ও তাঁর পুত্রদ্বয় কালিপদ দাস ও হরিপদ দাসের মাধ্যমে কলেজের অধ্যক্ষকে দানকৃত ভূমির দখল বুঝিয়ে দিয়ে জায়গায়টি চিহ্নিত করে ব্যানার টাঙ্গানো হয়। এছাড়াও আব্দুল জব্বার চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী কুটুর উল্যা, মাসুদ আহমদ চৌধুরী, উস্তার মিয়া, আব্দুল আজিজ, শামসুল হক আকন্দ, ফয়জুল হক আকন্দ, মোঃ মুহিন উদ্দীন ও ইউনুস উদ্দীন ও ভূমি দান করেন। সর্ব প্রথম সুশীল চন্দ্র দাসের দানকৃত ভূমিতে এ অঞ্চলের গণমানুষের আর্থিক সহায়তা, বাঁশ, কাঠ, ইট, বালু, সিমেন্ট, টিন, অন্যান্য উপকরণ ও কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে কলেজের প্রথম আধাপাকা ভবন নির্মিত হয়। (পরে ১৯৯৯ খ্রি. সরকার ৩ তলা একটি একাডেমিক ভবন দেয় যার ভিত্তি স্থাপন করেন সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমেদ এম.পি ও উদ্বোধন করেন এম.এম. শাহীন এম.পি। কলেজ ২০১৬খ্রি. সরকার থেকে ৪ তলা আরেকটি আই.সি.টি ভবন লাভ করে যার ভিত্তি স্থাপন করেন এম.এ. মতিন এম.পি ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি। কলেজের প্রচেষ্টায় আরেকটি ভবন, মাটি ভরাট ও দেয়াল নির্মিত হয়। ফেঞ্চুগঞ্জ নিবাসী হোসেন আহমদের অনুদানে শহীদ মিনার ও ডাঃ তফাজ্জল হক মানিক মিয়ার অনুদানে তোরণ নির্মিত হয়) ইতিমধ্যে ১লা সেপ্টেম্বর অনুপম কান্তি দেবের ঘরটিতে অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে ছাত্র ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়।

ছাত্র ভর্তি উপকমিটির সদস্যগণের প্রচেষ্টায় অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে ভর্তির ব্যবস্থা করা হলেও ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়েই এই কলেজের যাত্রা শুরু হয়। এই সতের জন শিক্ষার্থীগণ ভাবতেই পারেনি এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা ভর্তি হবে। যেখানে নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই, ক্লাস রুম নেই, খেলার মাঠ নেই, গ্রন্থাগার নেই, ওয়াস রুম নেই যথাযথ শিক্ষকও নেই। তাদের স্বপ্ন ছিল ঢাকা, সিলেট ও মৌলভীবাজার না হোক অনন্ত কুলাউড়া কলেজে ভর্তি হবে। কিন্তু ভর্তি কমিটি, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয়দের ঐকান্তিক চেষ্টায় যে সতের জন ভর্তি হন তারা হলেন- খন্দকার আব্দুল করিম, আয়েশা সুলতানা, ফাহমিদা আলম পপি, রুকশানা আক্তার, শ্রীবাস চন্দ্র মল্লিক, মোঃ শামসুল ইসলাম, জাফরিন নাহার, মোঃ কামাল আহমদ, মোছাম্মৎ ফাতেমা বেগম, মোহাম্মদ গোলাপ মিয়া, রহিমা আক্তার, নিতাই মোহন মল্লিক, মোঃ জাকির হোসেন, মোঃ মুহিবুর রহমান (আকাশ), দিল জাহান আক্তার, মোহাম্মদ মোছাদ্দিক আহমদ ও মোঃ শফিক মিয়া।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের শিক্ষক যারা এখন পর্যন্ত আছেন বিশেষ করে আতাউর রহমান, নজমুল হোসেন, নাজমা বানু, শাহনাজ বাহার, ইন্দ্রজিৎ রায়, মোঃ হানিফ, সুরজিত কুমার দেব ও সমরেশ কুমার দাস রায়।

পূর্ব রাউৎগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বাংশে অস্থায়ী ক্লাস রুম প্রস্তুত করা হয়। স্মৃতি কাতর হয়ে এখনও অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেন একদিনের প্রচন্ড ঝড়ের দিনের কথা। ঝড়ে ক্লাস ঘরের বেড়া ভেঙে তছনছ করে দিয়েছিল, টিনের চাল উড়িয়ে নিয়েছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ভয়ে আতংকে দিগ্বিদিক দৌড়ে ছিল আশ্রয়ের সন্ধানে। একদিকে প্রকৃতির রূদ্র্র রোষ অন্যদিকে গ্রামে কলেজ করার উদ্যোগে নিন্দুকের সমালোচনার রোষ। সব ঝড় কাটিয়ে ২০০০ খ্রিস্টাব্দে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রথম এইচ.এস.সি. পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। সবাইকে তাক লাগিয়ে বাণিজ্য বিভাগে ২টি প্রথম বিভাগ ছিনিয়ে আনে খন্দকার আব্দুল করিম ও মোহাম্মদ গোলাপ মিয়া। যথাক্রমে একজন যুক্তরাজ্যে সফল ব্যবসায়ী অন্যজন এই কলেজেরই ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ও ২০১৬খ্রি. উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।

দীর্ঘ বিশ বছরে অনেক কৃতি শিক্ষার্থী এই কলেজ থেকে পাস করে স্ব-মহিমায় সমুজ্জ্বল। ২০১৬ ও ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কলেজের পুরষ্কারও পায় এ কলেজ। এভাবে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে এ জনপদের শিক্ষার আকাশে লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ দেখা দিচ্ছে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে। মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাদানের পাশাপাশি ২০০৬-২০০৭ শিক্ষা বর্ষে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ে অধীনে ডিগ্রি (পাস) বি.এস.এস. এ শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি লাভ করে। যার ফলে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে শুরু হয় বি.এ. (পাস) কোর্স। আর সাম্প্রতিক অর্জন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি (অনার্স) ৩টি বিষয়ে পাঠ দানের অনুমতি। ৫ মার্চ ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অধিভুক্ত হয়। কলেজের ২০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকের দিনে অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে অনলাইনে অনার্স ভর্তি শুরু হয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত কলেজ হিসেবে ‘লংলা আধুনিক মহাবিদ্যালয়ে’ নাম কিছুটা পরিবর্তন করে নাম হয় “লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ”। দীর্ঘ বিশ বছর যাবৎ গভর্নিং বডির সঠিক দিক নির্দেশনায় শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টায় এ কলেজ শিক্ষার্থীদের সেবা দিয়ে আসছে পরম মমতায়। সহ শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা হচ্ছে মননশীল ও সৃজনশীল মানুষে। নিয়মিত স্কাউটের শিক্ষায় দীক্ষিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা রক্তদান কর্মসূচীতে রক্তদানে উৎসাহীত হচ্ছে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের শাখা হিসেবে বই পড়া কর্মসূচীর মাধ্যমে ১৫ বছর ধরে শত শত পুরষ্কার ছিনিয়ে আনছে শিক্ষার্থীরা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ভ্রাম্যমান জাদুঘর প্রদর্শনী হয়েছে বেশ ক’বার।

শিক্ষার্থী কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা সংগ্রহ করে জাদুঘরে পাঠানো হচ্ছে  নিয়মিত। যার ফলে শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস চর্চায় ঘনিষ্ঠ হচ্ছে আর সম্পৃক্ত হচ্ছে জাতীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায়। নিয়মিত বিতর্ক, বক্তৃতা, সাধারণ জ্ঞান, কবিতা আবৃত্তি ও সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বর্ণাঢ্যভাবে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদযাপন করা হয়। ২০০৭ ও ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে মৌলভীবাজার জেলা আন্ত:কলেজ ফুটবল টুর্নামেন্টে সাফল্যের সাথে অংশগ্রহণ ও ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে রানার আপ ট্রফি জিতে নেয়। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে ১ম ইউ.এন.ও গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গোল্ডকাপ ছিনিয়ে আনে। সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিযোগিতায় উপজেলা-জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে এ কলেজের শিক্ষার্থীরা সাফল্যের সাথে অংশ গ্রহণ করছে। প্রতিবছর শিক্ষা সফরও অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা হয় সুজাত মোহাম্মদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, ও লংলা ট্রাস্ট থেকে। যে কলেজ মাত্র সতের জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল সে কলেজে এখন সতেরশোরও অধিক শিক্ষার্থী। সন্ত্রাস, ধুমপান ও শিক্ষার্থীদের মোবাইলফোন মুক্ত শিক্ষাঙ্গন প্রতিদিন মনিটরিং করেন শিক্ষাঙ্গন ব্যবস্থাপনা ও শৃংখলা উপ-কমিটি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হৃৎপিন্ড হলো গ্রন্থাগার অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে গ্রন্থাগার সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালিত না হলেও নিয়মিত ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী বই আদান-প্রদান করে, প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত শিক্ষক মন্ডলীর সঠিক পদ্ধতিতে পাঠদান, কর্মচারীদের সেবমূলক কর্মকান্ড, শিক্ষার্থীদের একাগ্রতা, গভর্নিংবডির সদস্যদের দিক নির্দিশনা ও ভালবাসা, গভর্নিং বডির সভাপতি আব্দুল মতিন এম.পি ও সম্পাদক আতাউর রহমান, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নে লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বমানের শিক্ষা দিয়ে নিরাপদ বিশ্ব বিনির্মানের লক্ষ্যে।

২০০০ খ্রিস্টাব্দে উচ্চ মাধ্যমিক এম.পি.ও. হলেও ডিগ্রি পর্যায় এমপিও এখনও হয়নি। এ কলেজের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। মূলত: কলেজটি চারদিকে গ্রাম বেষ্টিত, গ্রামের শিক্ষার্থীরা অনেক বঞ্চনা নিয়ে উঠে আসে, সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীরাই কম জি.পি.এ নিয়ে আসে। সুবিধা বঞ্চিতা পরিবারের অনেক শিক্ষার্থীরা দিনমুজুরীর কারণে অনুপস্থিত থাকে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়েপড়া শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে গিয়ে কলেজ। অনেক উন্নয়নমূলক কাজে পিছিয়ে আছে। তদুপরি কলেজের কুড়ি বছর পূর্তিতে গণমানুষ পেশাজীবী শুভাকাংখি প্রতিষ্ঠাতা প্রতিষ্ঠাকালীন বিভিন্ন স্কুলের প্রধান ও শিক্ষকগণ, দাতা, গভর্নিং বডির সদস্য, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী সহ সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা। এ লেখায় অনেকেরই নাম আসেনি আগামীতে বড় পরিসরের লেখাগুলোতে আসবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন- ‌'তথ্যের চেয়ে সত্য বড়'। সব শেষে দেশ মাতৃকার জন্য যারা রক্ত দিয়েছেন জীবন দিয়েছেন ও কলেজ প্রতিষ্ঠায় যাদের অবদান ছিল সেই সব প্রয়াতদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখক : মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম
শিক্ষক, লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ
কুলাউড়া, মৌলভীবাজার।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন