আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

বাঙ্গালী ভাইয়ের ছবি আজীবন কথা বলবে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-০৩ ১৩:১৬:৩০

তারেক আহমদ ::কামাল হোসেন বাঙ্গালী। নামটি ফেঞ্চুগঞ্জের চায়ের দোকানদার থেকে সাংসদ পর্যন্ত কারোরই অচেনা নয়। অবশ্য কামাল হোসেন না চিনলেও বাঙ্গালী নামটা যেনো সবার কাছে খুবই চেনা চেনা মনে হয়। চেনা-জানা এই মানুষটির বিচরণ ছিল ফেঞ্চুগঞ্জের সর্বত্র। সদালাপী ফটো সাংবাদিক বাঙ্গালী ভাই একদিনে যতো ছবি তুলতেন আমার মনে হয় অনেক সাংবাদিক এক মাসেও এতো ছবি তুলতে পারেন না। সহজ-সরল এই মানুষটি ছবি তুলা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন বেশির ভাগ সময়, যেনো এটিই তার পেশা এবং নেশা। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো বাঙ্গালী ভাই যখন তার তুলা ছবি গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করতেন তখন এর ক্যাপশন হিসেবে লিখে দিতেন "ছবি কথা বলে"। হ্যা; তার তুলা ছবি গুলো কথা বলে ঠিকই কিন্তু এখন আর কথা বলেন না আমাদের সবার প্রিয় ফটো সাংবাদিক বাঙ্গালী ভাই। গত ২২ জুলাই ২০১৯ ইং তারিখে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন এমনই এক জায়গায় যেখানে চলে গেলে এই মোহময় পৃথিবীতে কারো আর ফিরে আসা হয় না এবং হবেও না। বাঙালী ভাইয়ের প্রস্থান আমায় ধুকরে ধুকরে কাঁদায়। মনে হয় যেনো বড় অবেলায় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এই ক্রান্তিলগ্নে কামাল হোসেন বাঙ্গালির মতো ব্যক্তিদের বড়ই প্রয়োজন ছিল আমাদের। কামাল হোসেন বাঙ্গালী চলে গেছেন ঠিকই কিন্তু রেখে গেছেন তার সমৃদ্ধ স্মৃতির ভান্ডার। যেই ভান্ডারটি খুললে পাওয়া যাবে তার হাজারো স্মৃতি। সেসব থেকে কিছু স্মৃতির আলোকপাত করব আজ। আজ মনে পড়ে সেদিন গুলোর কথা, চয়ন দার ফার্মেসীতে বসে কতো আনন্দ, হাসি-ঠাট্টা, মজা করতাম তার সাথে। মনে পড়ে একতা নিউজ এজেন্সী বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতাম বাঙ্গালী ভাইয়ের সাথে হাসি-ঠাট্রা করে।
বাঙ্গালী ভাই অচেনা অজানা মানুষদের সাথে খুব সহজেই সখ্যতা গড়ে তুলতে পারতেন। বাঙ্গালী ভাইয়ের একটা জিনিষ আমার কাছে খুব বেশি পরিলক্ষিত হত, আর তা হলো- আমাদের সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তার সামনে কেউ কিছু বললে ঝাপিয়ে পড়তেন বাঙ্গালী ভাই। এমপি সাহেবের খুব বেশি গুনগান করতেন তিনি। এরকম হাজারো পরিলক্ষনের বিষয় আছে যা লিখে শেষ করার মতো নয়। আমি বালাগঞ্জের সাংবাদিক কিন্তু ফেঞ্চুগঞ্জের সাংবাদিক নিয়ে লিখার কারন হলো- আমার সাথে তার যে সখ্যতা ছিল, ফেঞ্চুগঞ্জের অনেক সাংবাদিকের সাথে তার এতো সখ্যতা ছিল না।
যতো দূর জানতে পারি বাঙ্গালী ভাই পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন একজন সংবাদ পত্র বিক্রেতা হিসেবে। সংবাদ পত্রের প্রতি ভালোবাসা এবং শখের বসেই সংবাদ পত্র বিক্রেতার চাকুরী ছাড়ার পর সাংবাদিকতার সূচনা করলেন৷ তারপর জীবিকার তাগিদে মধ্য প্রাচ্যের দেশ সৌদী আরবে গমন করেন। সেখান থেকে স্থায়ী ভাবে দেশে ফেরার পর আবারো সাংবাদিকতার সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেন। তবে শোনেছি সৌদী আরবে থাকাকালীন সময়েও নাকি সাংবাদিকতা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে "ছবি কথা বলে" ক্যাপশন লিখে ছবি আপলোড করতেন। প্রায় প্রতিদিনই ফেঞ্চুগঞ্জের কোনো না কোনো এলাকার সমস্যা-সম্ভাবনার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতেন তিনি। অনেকেই ছিলেন তার ছবির ভক্ত। অপেক্ষা করতেন কামাল হোসেন বাঙ্গালীর ছবি কখন ফেসবুকে আসবে।
বাঙ্গালী ভাইয়ের মৃত্যুর প্রায় ২ মাস আগে তার স্ট্রোক হয়েছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন সিলেট ওসমানী হাসপাতাল ও ঢাকার নিউরোলজি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে  চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বাঙ্গালী ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদটি জানতে পারি ফেঞ্চুগঞ্জের সাংবাদিক জুলহান চৌধুরীর কাছ থেকে। তার মৃত্যুর সংবাদটি শোনার পর নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছিল। কারন আমি যে একদিনও অসুস্থ বাঙালী ভাইকে দেখতে পারিনি। আজ বাঙ্গালী ভাই আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার তুলা ছবি আজো আমাদের ফেসবুকের টাইমলাইনে ভাসছে। বাঙ্গালী ভাই কথা বলছেন না ঠিকই কিন্তু তার তুলা ছবি গুলো তার হয়ে আজীবন আমাদের নয়ন সম্মুখে কথা বলবে। বাঙ্গালী ভাইকে নিয়ে আজ আর লিখছি না।
অপারে ভালো থাকুন বাঙ্গালী ভাই। মহান আল্লাহ তায়ালা পাক যেনো আপনাকে জান্নাতের উঁচু মাকাম নসিব করেন এই দোয়াই করি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৩ আগস্ট ২০১৯/মিআচ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন