Sylhet View 24 PRINT

বিনম্র শ্রদ্ধা হে জাতির পিতা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-১৭ ১০:৫২:৩১

মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম :: ১৫ই অগাস্ট ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দ, জাতীয় শোক দিবস।ঠিক ৪৪ বছর পূর্বে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তৎকালীন সামরিক বাহিনীতে কর্মরত একদল বিশ্বাস ঘাতক অফিসার ভোর রাতে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িতে সশস্ত্র অাক্রমণ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর বোন শেখ রেহেনা ব্যতীত সকলকেই হত্যা করা হয়। ঘাতকেরা এখানেই থেমে থাকেনি, এই হত্যাকান্ডের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কালো আইন (ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ) তৈরী করেছিল, যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে  ক্ষমতায় আসার পর ঐ কালো আইন বাতিল করে এবং পরবর্তীতে জাতির জনক হত্যার বিচার সাধারণ আদালতের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।

ইতোমধ্যে অনেক ঘাতকের শাস্তি কার্যকর হয়েছে এবং অবশিষ্ট ঘাতকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছে। এ আামাদের ইতিহাসের একটি লজ্জাজনক অধ্যায়। একটি মানুষ কতটা নির্মোহ হলে যৌবনের সিংহভাগ সময় পাকিস্তানি শাসকদের নীপিড়ন সহ্য করে তিলে তিলে জাতিকে প্রস্তুত করেছেন মুক্তির সংগ্রামের লক্ষ্যে।  দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য সাহস করেনি অথচ স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে স্বাধীন পতাকা ও মানচিত্রের সংগ্রামের আন্দোলনের কান্ডারীকে হত্যা করেছে এদেশেরই কতিপয় কুলাঙ্গার। এই হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়ে বাঙালির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের অগ্রযাত্রাকে সাময়িকভাবে  ব্যহত করেছে। 

একজন নেতা কত বড় সাহসী ও দেশপ্রেমিক হলে ব্রজকন্ঠে হুশিয়ার উচ্চারণ  করতে পারে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। আমি এখনো যখন জাতির জনকের বিভিন্ন ভাষণের অংশবিশেষ শুনি অার উপলব্ধি করি আমরা জাতি হিসেবে কত ভাগ্যবান ছিলাম যে, বঙ্গবন্ধুর মত একজন বিশ্বমানের নেতা পেয়েছিলাম,  কিন্তু আমরা হতভাগা জাতি  তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি। এর জন্য আামাদের একুশ বছর প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়তে দেখতে হয়েছে।  জাতির জনকের কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লড়াই চলছে সকল প্রকার দেশীয় ও আন্তর্তজাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে।

সাম্প্রতিককালে সরকারের সফলতার সবচেয়ে বড় চ্যালেন্ঞ্জ হল দূর্নীতিগ্রস্ত অামলাতন্ত্র, মুনাফা লোভি ব্যবসায়ী এবং যুদ্ধাপরাধী অপরাধে দন্ডিতদের অনুসারীদের ষড়যন্ত্র।  এছাড়াও রয়েছে অান্ঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি। এই সমস্ত ষড়যন্ত্র সরকার  কিংবা প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা একার পক্ষে মোকাবিলা করা বেশ কঠিন।  প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন,  তাদের উচিত হবে বঙ্গবন্ধু ও নেত্রীর আর্দশকে অনুসরন করে দেশকে দুর্নীতি মুক্ত রাখা, তাহলেই জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে। 

ইদানীং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দলীয় সভায় এক বক্তৃতায় বলছিলেন, দলভারী করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কিংবা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিপন্থীদের যেন নেতা বানানো অথবা দলে ভিড়ানো না হয়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও উপলব্ধি করেছেন ভিশন ২০২১, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নে এটাই হবে অন্যতম বড় চ্যালেন্ঞ্জ।

আওয়ামী লীগের ইতিহাস আত্মত্যাগের ইতিহাস। জাতির জনকের এক একজন কর্মী ছিলেন বিশ্বস্ততার দিক থেকে অত্যন্ত অাস্থাভাজন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ,  ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, ও কামরুজ্জামান ৩ রা নভেম্বর ১৯৭৫ সালে জেলখানায় অন্তরীন অবস্থায়  জীবন দিয়েছেন কিন্তু মুজিবের অাদর্শের থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সরে আসেনি। তাছাড়া ২০০৪ সালে ২১ শে অগাস্ট শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলায় অনেক নেতা কর্মীর জীবন ও রক্তের বিনিময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জীবন রক্ষা পায়।

আামাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শেয়ার বাজার ও অাইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের যেসকল ব্যক্তি জনগণের অাস্থা অর্জন করতে পারেনি, তাদের অারো সতর্কতার সাথে তৃণমূল পর্যায়ের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। কেননা আওয়ামী লীগ একটি জনগণের আশা আকাঙ্খার শেষ আশ্রয়স্থল।  কাজেই ওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মীকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বইসমূহের পাঠ জরুরি।  কেননা আওয়ামী লীগ যদি জনবিচ্ছিন্ন হয় তাহলে পুরো বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।

শোকের মাস অগাস্ট আামাদের রাজনীতির অন্ধকার সময়কে স্মরণ করিয়ে দেয়। রাজনীতি সচেতন প্রতিটি কর্মীকে দেশের জন্য অাত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে। আজকের এইদিনে ঘাতকের বুলেটে নিহত  রাজনীতির মহাকবি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকীতে গভীর শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

লেখকঃ মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, শাবিপ্রবি, সিলেট।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৭ আগস্ট ২০১৯/মিআচ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.