Sylhet View 24 PRINT

হিন্দুধর্ম ও কিছু কথা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-০৪ ০০:৫৪:০০

লেখক

শিব শংকর দাস
সনাতন ধর্ম: পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম সনাতন শব্দের অর্থ হলো- যা পূর্বে ছিলো বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এই ধর্ম বহুযুগ ধরে ঠিকে আছে এবং আগামীতেও থাকবে। হিন্দুধর্মের নির্দিষ্ট কোন শুরু বা একক কোন প্রবর্তক নেই। যুগযুগ ধরে মনি, ঋষিরা জীবন জগৎ ও স্রষ্টা সম্পর্কে যেসব চিন্তা ভাবনা করে আসছে তারই সমন্নিত রুপ হলো সনাতন ধর্ম। এই চিন্তা ভাবনা প্রথমে বেদে প্রকাশ পায়। এজন্য এর আরেক নাম বৈদিক ধর্ম। এ ধর্ম সয়ং ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং এই বিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় তিন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। হিন্দুদের মতে প্রতিটি জীব জন্ম, মৃত্যু ও পূর্বজন্মের প্রক্রিয়াধীন। পুন্যজন্মের মাধ্যমে পাপ ক্ষয় দ্বারা মানুষ মোক্ষলাভ করতে সক্ষম হয় এবং এটাই হিন্দু ধর্মের মূল ভিত্তি।

জাতপাত: হিন্দু ধর্মের প্রকৃত অর্থে ছোটবড় জাত বলতে কোন কিছু নেই। আসলে বিষয়টি নিয়ে আমরা ঘাটাই না। তা না হলে এর মর্মার্থ যে অতিসহজ বুঝতে পারতাম। ঋষি বিশ্বামিত্র ব্রাহ্মন ছিলেন না। তিনি পরে তার ধর্ম ও জ্ঞান দিয়ে ব্রাহ্মন হন। ভগবান তার ভক্তের জাতপাত বিচার করেন না। গীতায় ভগবান বলেছেন, জন্ম নয় কর্ম অনুসারে জাতপাত। ভালো কর্মের উচুজাত ও খারাপ কর্মে নিচুজাত। শ্রীরাম কথিত শর্বরীকে নবধারা ভক্তি দান দিয়েছেন। ভক্ত রবিদাসকে অপমান করায় স্বর্গের ঘন্টা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে জাতপাতগুলো জন্মের মাধ্যমে হয়, যা উচিৎ নয়। এই কুসংস্কার থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

বলিপ্রথা: বলিপ্রথা আসলেই একটি প্রথা। বলি হলো মনের অসুরত্বকে বলি দেওয়া, এইটা শাস্ত্রে বলা আছে। বলি সম্পর্কে সাত্বিক ও তান্ত্রিক দুই মত রয়েছে। সাত্বিক মতে বলি নিষেধ। গৌতমবুদ্ধ বলেছেন, পশু হত্যা মহাপাপ। আবার তান্ত্রিক মতে এটা সঠিক। কিন্তু পুরোহিতরা বেশিরভাগ তান্ত্রিক হয় না। কিন্তু ঐ প্রথার জন্য তারা বিভিন্ন পূজায় বলি দিয়ে আসছে। তাছাড়া আমরা কোন বড় মাতৃসাধককে বলি দিয়ে সিদ্ধিলাভ করতে শুনি নি।

ধর্মীয় সংস্কার: সনাতন ধর্মের প্রথম সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় আটারো শতকের দিকে। রাজা রামমোহন রায় এর জনক। এর ফলে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজে আসে পরিবর্তণ। আঠারো শতকের শেষদিকে ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব যুক্তিবাদের সঙ্গে আবেগনির্ভর ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার সমন্ময় সাধনা করেন। পরবর্তিতে স্বামী বিবেকানন্দ এটিকে নির্দিষ্ট রুপ দেন। হিন্দু ধর্মে গুরুত্বপূর্ন সংস্কারের মধ্যে অন্যতম হলো- সতীদাহ বিলোপ, বিধবাবিবাহ প্রচলন, বাল্যবিবাহ বন্ধ। পরবর্তিতে অন্যান্য ধর্মে এ আন্দোলনের প্রভাব পড়ে যা ওহাবী আন্দোলনের মতো বিভিন্ন আন্দোলনের রুপ নেয়।

হিন্দুধর্মের অবক্ষয়: হিন্দুধর্মের জৌলুশ আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা প্রতি দিনে বাড়ে। কিন্তু এই ধর্মের অনুসারী সমহারে কমছে। এর প্রধান ও মূখ্য কারণ হলো- ধর্মীয় গুরু, বৈঞ্চব ও সাধকদের সঠিক পথনির্দেশনা দেয়র সমতার অভাব। এখন তা এতোটাই বৃস্তিত হয়েছে যে, প্রতি ধর্মগুরু তাদের আলাদা আলাদা মত প্রকাশ করছেন। ব্যবসার কাষ্টমার বৃদ্ধি করার মতো করে শিষ্য বৃদ্ধি করছেন। পথনির্দেশ এর অভাবে সনাতন ধর্মকে কিছু অসাধু ধর্মব্যবসায়ী ব্যবসায় পরিণত করেছেন। আগেকার দিনে লীলা বা নাম কীর্তন এ মানুষ ধর্মকথা শুনতে যেত। কীর্তন শ্রবন করে পূন্যলাভ করতো। আর এখন এসবে গেলে পূন্যের বদলে পাপ হয় বেশি। মেয়েরা পাশ্চাত্য আদলে কাপড় পরিধান করে কীর্তনে যায়। সে কীর্তন যায় না কি নিজেকে অন্যের প্রতি আকর্ষিত করতে যায় সেটা বুঝার উপায় নেই। ছেলেরা ছেঁড়া শার্ট, পেন্ট পড়ে কীর্তনে গিয়ে আসরে না বসে বাইরে ঘুরাঘুরি করে। যারা কীর্তন শুনে তারা দাঁড়িয়ে শুনে। দাঁড়িয়ে কীর্তন শুনা যেন এক ধরনের ফ্যাশন। ধর্মীয় উপাসনালয় আজ একধরণের পার্কে পরিণত হয়েছে। পুরোহিতরা মন্দির থেকে লাভ উঠাচ্ছে আর তা ব্যক্তিগতভাবে কাজে লাগিয়ে নিজের সম্পদ বাড়াচ্ছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা রামায়নের কয়টা কান্ড রয়েছে, গীতার কয়টা অধ্যায় আছে, মহাভারতের কয়টা অধ্যায় আছে তা বলতে পারবে না। পাঠ্যবইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতে থাকতে ধর্মীয় চিন্তা-চেতনাগুলো তাদের মধ্যেই থাকে না। এজন্য তারা বিভিন্ন খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। ধর্মীয় অনুশাষণ কী তা তারা জানে না। ভবিষ্যতে হিন্দুধর্ম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গেলে এটাই হবে মূখ্য কারণ।

লেখক- শিক্ষার্থী

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.