Sylhet View 24 PRINT

জীবন যুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য শিশু শাকিব

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-০৪ ১৫:০৬:২৬

কামরুজ্জামান বাবলু : কোন জাতি যখন উন্নতির শিঁখড়ে পৌঁছাতে সচেষ্ট হয়, তখন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ হয় সেই রাষ্ট্র। তারপরও কথা থেকে যায় এর পিছনের শ্রম, মেধা, একনিষ্ঠতা এবং সততার সহিত কর্মরতদের। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ যখন বাহবা কুঁড়ায় বহির্বিশ্বে, আমরা হয়তো সবার নাম পরিচয় কিছু জানতে পারি না। নিরবে মানুষগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে  রাষ্ট্রের  জন্য সর্বোচ্চ ভালোটা দিতে বদ্ধপরিকর। আমাদের সমাজব্যবস্থা এই পরিশ্রমী  মানুষগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণী, পেশায় বিভক্ত করেছে, রাষ্ট্রের সফলতায় তখন দৃশ্যমান হন নীতিনির্ধারকেরা। আর যখন ব্যর্থতার প্রসঙ্গ আসে তখন ভিন্নমত পোষণ করা হয়।

যাই হোক আমার বিষয়বস্তু এটা না, এবং আমার পরবর্তী কথাগুলার সাথে উপরোক্ত কথা সম্পৃক্ততা নেই। আমার লেখার বিষয়বস্তু হচ্ছে জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক শিশুর গল্প। শাকিব, বয়স ১১ বছর। যার এই বয়সে কথা ছিলো বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা নিয়ে থাকা। কোমলমতি শাকিবের কপালে সেটা নেই, ভাগ্যের খেলায় শাকিব সেই জন্মের পর থেকে পরাজিত, তার জন্মই যেন আজন্ম পাপ।

ভোলায় জন্ম হওয়া শাকিব চার বছর বয়সে বাবা এবং দুই ভাইবোনের সাথে চলে আসে ঢাকায়, আর শাকিবের মা ভোলায় থাকতে বাধ্য হন আরো তিন সন্তান নিয়ে। কারন শাকিবের বাবা ঢাকায় এসে রিকশা চালানোর উপার্জন দিয়ে কোনমতে মাস শেষে গ্রামের বাড়িতে হাতেগুনা কিছু টাকা পাঠাতে পারেন। একসাথে সবাইকে ঢাকায় এসে থাকার ব্যয়ভার বহন করা শাকিবের বাবার পক্ষে সম্ভব না।

ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় এক বস্তিতে কোনমতে দিন পার হচ্ছিলো শাকিবদের, কিছুদিন যেতে না যেতেই নেমে আসে অন্ধকার, একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় শাকিবের ডান হাত, শুধু তাই নয় মাথার পিছনের অংশ ও পুড়ে যায়, দীর্ঘদিন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে  এপাশ ওপাশ করতে হয়েছিলো শাকিবকে। ডাক্তার রা প্রায় তার সুস্থ হওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন, মাথার পিছনের দিকে এতোটাই পুড়ে গেছিলো যে মাথার হাড়ে ও খুব বেশি প্রভাব পড়েছিলো।

যাই হোক মহান রাব্বুল আলামীনের দয়ায় অবশেষে জীবন ফিরে পায় শাকিব। কিন্তু প্রতিনিয়ত বয়ে বেড়ায় অসহ্য যন্ত্রণা আর ওই সময়ের দুঃসহ স্মৃতি। শাকিব হাসপাতাল থেকে বেচে ফিরলে ও আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি এখনো। কিছুটা সুস্থ হয়ে শাকিব ভয় পায়নি দারিদ্রের কষাঘাতে, সংসারের দারিদ্র্যতা ঘুচাতে বাবা, ভাইয়ের পাশাপাশি শাকিব নেমে যায় জীবনযুদ্ধে, প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত অবধি ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোড এলাকায় বেলুন বিক্রি করে।

ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত মানুষেরা শাকিবের এই মহারণ কে এড়িয়ে গেলে ও মাঝেমধ্যে দু একজন সহানুভূতি দিয়ে এগিয়ে দেন এই যোদ্ধাকে। শাকিব বেশি কিছু জীবনে চায় না, শুধুমাত্র আতœনির্ভরশীল হয়ে বাচতে চায় এই প্রতিযোগিতামুলক সমাজে। শাকিব এখন ক্লাস ফাইভে পড়ে, নিজের লেখার খরচ চালিয়ে বাবার হাতে দিন  শেষে কিছু টাকা তুলে দেয়। আমরা অনেক সময় অপ্রতিকুলতার মধ্যে পার হওয়া সময়ের কাছে হার মেনে নেই। কিন্তু আমাদের চারপাশে এরকম অনেক শাকিবরা আছে যারা একটু সহযোগিতা পেলে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়।  এগিয়ে যাক সমাজের ঝরে পড়া শিশুরা, আর সবার মতো নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখুক সুখী সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণে।

কামরুজ্জামান বাবলু : সাংবাদিক

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.