Sylhet View 24 PRINT

পেয়াজের উচ্চমূল্য: ভোক্তা হিসেবে আমাদের কি দায় নেই?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-১৪ ১৭:১২:৩৫

শাকিল জামান :: পেয়াজের উচ্চমূল্য নিয়ে চারিদিকে হায়! হায়! সব গেলো! এমন রব উঠে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট এমনই। পেয়াজ প্রতি কেজি ২০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে যা মাস দুয়েক আগেও ছিলো কল্পনাতীত।

কেনো বেড়ে গেলো পেয়াজের দাম? এর পেছনে সরকার কিংবা ভোক্তা হিসেবে আমাদের কি কোনো দায় আছে? এটা নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমাদের ভাবনায় শুধু কীভাবে বাইরে থেকে পেয়াজ আমদানি করে বাজারকে স্থিতিশীল করা যায়। নিজে স্বনির্ভর না হয়ে অন্যের উপর নির্ভরশীল থেকে আসলেই কি স্থিতিশীল বাজার আশা করা উচিত?

সমস্যার মূলে না গিয়ে বার বার কীভাবে উপর থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই চেষ্টাই করা হয়েছে। ভারত পেয়াজ রপ্তানি করছে না তবে মায়ানমার থেকে আমদানি করো, মায়ানমার রপ্তানি না করলে ভিয়েতনাম দেখো। এভাবেই অন্যের উপর দিয়েই আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি অথচ আমরা কৃষি প্রধান দেশ।

এমন তো না যে আমাদের দেশে পেয়াজ উৎপাদন হয় না। তাহলে সমস্যা কোথায়? কেনো আমাদের চাষীরা পেয়াজ উৎপাদন করছে না?

সমস্যা আমরা নিজেরাই। যখন চাষীরা পেয়াজ উৎপাদন করে তখন সরকারের থেকে পর্যাপ্ত ভর্তুকি পায় না ফলে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি হয়। বাজারে যখন বিক্রি করতে নিয়ে যায় তখন দেখা যায় এরচেয়ে কমদামে বিদেশী পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ফলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। নিজের পকেটের টাকা খুইয়ে চাষীরা উৎপাদন করে খাওয়াবে এমন তো হতে পারে না।

তাহলে করণীয় কি ছিলো?

সরকারের উচিত ছিলো পেয়াজ চাষীদের পর্যাপ্ত ভর্তুকির ব্যবস্থা করা যাতে তাদের উৎপাদন খরচ কম হয় এবং দেশে উৎপাদিত পেয়াজ বাজারে বাইরে থেকে আমদানিকৃত পেয়াজের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে। কিন্তু না, সরকার সেটা করে নি।

আচ্ছা, সেটা না হয় করলো না। তাহলে দেশের চাষীরা যাতে বাঁচতে পারে সেজন্য বাইরে থেকে আমদানি বন্ধ কেনো করলো না? দেশীয় পণ্যকে যদি সুরক্ষা না দেয়, দেশের চাষীদের যদি সুরক্ষা না দেয়া হয় তবে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক কীভাবে পরেরবার পেয়াজ চাষের দু:সাহস দেখাবে?

ভোক্তা হিসেবে আমরা যখন দেখি ৫ টাকা কমে বিদেশী পেয়াজ পাওয়া যায় তখন কিন্তু আর দেশী পেয়াজ কিনি না। ফলে দেশি পেয়াজের বাজার ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা পুরোপুরি অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। এখন এই হাউকাউ করে কোনো লাভ নাই।

আমাদের আবার সেই মূলে যেতে হবে। নিজেদের পণ্য নিজেদেরকে উৎপাদন করতে হবে। নিজেদের পণ্য নিজেদের কিনতে হবে। দেশীয় পণ্যকে সুরক্ষা দিতে সরকারকে নীতিমালা করতে হবে।

আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। দুই টাকা বেশি দিয়ে দেশী পণ্য কিনতে হবে। এই দুই টাকা বাইরে কোথাও যায় না। আপনার আমারই এক ভাই তার পরিশ্রমের বিনিময়ে এই টাকা দিয়ে ঘরে চাল কিনে। আমরা দুই টাকা বাঁচানোর জন্য বাইরে থেকে আমদানিকৃত পণ্য কিনি। আর পরবর্তীতে যখন তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাই, তারা দাম বাড়িয়ে দেয় অথবা রপ্তানি বন্ধ করে আমাদের বাজারকে অস্থিতিশীল করে দেয়।

শেষকথা হচ্ছে- সরকারের নীতিনির্ধারক এবং আমাদের উদ্যোক্তা ও ভোক্তা সকলকে একটা বিষয়ে ঐকমত্য হতে হবে। কৃষি আমাদের শিকড়। শিকড়কে অস্বীকার করে, শিকড় থেকে বেরিয়ে গিয়ে শার্ট-প্যান্ট বানানোর অর্থনীতি দিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করা যাবে না।

লেখক: নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেটভিউ২৪ডটকম।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.