Sylhet View 24 PRINT

সর্বস্থরের জনগনের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এইডস নির্মূল সম্ভব

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-৩০ ১৮:৫৮:০১

মো. মোতাহের হোসেন :: 'এইডস নির্মূলে প্রয়োজন, জনগণের অংশ গ্রহণ' এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এ বছরের বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে এইচআইভির প্রাদূর্ভাব এখনো ০.০১% এর নিচে, যা খুবই নগণ্য মাত্রায় ধরে নেয়া যায়। কিন্ত তা বলে বিষয়টি নিয়ে অবহেলা করে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ কিছু কিছু বিষয় বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকির মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে চলেছে। শিরায় মাদক গ্রহনকারী জনগোষ্ঠির মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার ৩.৯%। যা অবশ্যই উদ্বেগজগনক। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ আভিবাসনসহ আরো কিছু বিষয় প্রতিনিয়ত এদেশে এইচআইভি বিস্তারের ঝুঁকি বাড়িয়ে চলেছে।

২০১৮ সালের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে আনুমানিক ১৩ হাজার এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ রয়েছে এরমধ্যে এ পর্যন্ত এইচআইভি আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা গেছে ৬৪৫৫ জনকে। চিহ্নিত হওয়া মানুষের মধ্যে এ পর্যন্ত ১০৭২ জন মারা গেছেন আর বাকিদের মধ্যে একটি বড় অংশ চিকিৎসা নিয়ে বেশ ভাল আছেন। সিলেটে এপর্যন্ত সনাক্ত হওয়া এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ৯৫১ জন এর মধ্যে মারা গেছেন ৩৯৪ জন। বাকীদের মধ্যে ৫০১ জন সিলেট এমএজিওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে অবস্থিত এআরটি সেন্টার হতে নিয়মিত ঔষধ সেবন করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি এইচআইভি আক্রান্ত মা হতে শিশুর শরীরে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধের মাধ্যমে এইচআইভির নতুন সংক্রমণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ইউনিসেফের সহায়তায় এই দুটি হাপসাতালে পিএমটিসিটি প্রকল্প চলমান আছে। যার মাধ্যমে এপর্যন্ত ৫৬ জন মা সুস্থ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। যারা এইচআইভি আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা ও তাদের মাধ্যমে নতুন সংক্রমণ প্রতিরোধের বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

সাধারণত যে চারটি উপায়ে এইচআইভি একজনের শরীর হতে অন্যজনের শরীরে সংক্রমিত হয় তা হচ্ছে অনিরাপদ যৌন আচরণ, একই সিরিঞ্জ ব্যবহার করে একাধিক ব্যাক্তির শিরায় মাদক গ্রহন, অনিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন এবং মা হতে শিশুর শরীরে এইচআইভির সংক্রমণ। এই প্রত্যেকটি উপায়ই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রথম দুটি উপায়কে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে জনগনের মধ্যে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা এবং সচেতনতা তৈরী করার কোন বিকল্প নেই। বাকি দুটি কারণের প্রথমটির জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কারণ অনিরাপদ ও পেশাদার রক্তদাতার কাছ থেকে গ্রহনকৃত রক্ত একজন সুস্থ মানুষের শরীররে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

এইচআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসা একসময় বেসরকারী সংস্থা সমূহের মাধ্যমে প্রদান করা হলেও বিগত কয়েক বছর যাবত তা সরকারী ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে এবং দেশের ১০টি সরকারী হাসপাতালে এআরটি সেন্টার চালু করে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিনামূল্যে ঔষধ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি সারাদেশে ২৮টি সেন্টারে বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিভিন্ন ভাবে মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও এইচআইভি আক্রান্ত মানুষকে চিহ্নিত করার সংখ্যা অনুমিত সংখ্যার মাত্রা অর্ধেকের কাছাকাছি। অর্থাৎ আক্রান্তদের একটি বড় অংশই এখনো সনাক্তকরা যায়নি। আর নতুন সংক্রমণের ঝুঁকিটাও এখানেই সবচেয়ে বেশি। এই সংখ্যাকে চিহ্নিত না করা গেলে সাধারণ জনগোষ্ঠির মধ্যে এইচআইভি বিস্তারের সম্ভাবনা প্রতিনিয়ত বাড়তেই থাকবে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বেচ্ছায় এইচআইভি পরীক্ষা করানো বা এইচআইভি চিহ্নিত হওয়ার পরে তা গোপন করার প্রবণতা কম কেন? একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এইচআইভি/এইডস একটি অপবাদ ও বৈষম্যের সুযোগ সৃষ্টিকারী রোগ। অর্থাৎ এ রোগে আক্রান্ত হিসেবে কেউ চিহ্নিত হলে তার সুচিকিৎসার পরিবর্তে তাকে বিভিন্ন অপবাদ বঞ্চনায় জর্জরিত করা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার, গ্রাম, সমাজ এমনকি সেবা প্রদানকারীসহ সবাই কমবেশি একাজটি করে থাকেন। এতে করে কেউ নিজে এইচআইভি আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকলেও তা প্রকাশ করতে বা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে আগ্রহী হয় না। একধরনের আস্থাহীনতা বা সংশয়ের কারণে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য গোপন করার প্রবণতা কাজ করে। যা অনেক সময় নতুন সংক্রমণের ক্ষেত্র তৈরী করতে ভূমিকা রাখে। এজন্য সারাবিশ্বে যেখানে এইচআইভির নতুন সংক্রমণ ক্রমহ্রাসমান সেখানে বাংলাদেশ সহ আরো কিছু দেশে তা প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যাদের দ্বারা এইচআইভি আক্রান্তগন বিভিন্ন অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার হন তাদের বেশিরভাগই না জেনে অথবা ভুল তথ্য জেনে তা করে থাকেন। কিছু কিছু তথ্যের সহজ প্রবাহ নিশ্চিত করা গেলে একদিকে যেমন আক্রান্ত ব্যক্তিগণ বিভিন্ন ধরনের অপবাদ ও বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে রেহাই পাবেন অন্যদিকে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে নতুন সংক্রমণের ঝুঁকি কমে আসবে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত এবং জন সচেতনতা সৃষ্টিতে সবার আগে প্রয়োজন জনগনের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহন। এলক্ষ্যকে সামনে রেখে এবারের বিশ্ব এইডস দিবসের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'এইডস নির্মূলে প্রয়োজন, জনগনের অংশগ্রহণ'।
শুধুমাত্র এইচআইভি পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়ানো কিংবা সরকারী ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানই এইচআইভি’র নিমূলের জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ নয়। জনগনের কার্যকর অংশগ্রহন এবং বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে এইচআইভি প্রতিরোধ র্কাক্রমে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে এসকল উদ্যোগের সফলতা আরো অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
লেখক: প্রোগ্রাম ম্যানেজার, পিএমটিসিটি,
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.