আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

মাগো তুমি কেমন আছো# সুব্রত দাস

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-১১ ১৪:১৫:৩২

ছবিটি ২০১০ সালের চট্টগ্রামের সিতাকুন্ডের

সুব্রত দাস :: মাগো তুমি কেমন আছো, মা তুমি কোথায় আছো। খুব জানতে ইচ্ছে করে মা। কত দিন তোমাকে দেখিনি। খুব দেখতে ইচ্ছে করে মা। তুমি আমাকে ভুলে কিভাবে থাকতে পারছো মা। আমার কথা কি তোমার একবারও মনে পড়ে না মা। তুমি কি আর আমাদের কাছে ফিরে আসবে না মা। তুমি ফিরে এসো মা। তুমি কি জানো মা কত রাত আমি ঘুমাইনি। শুধু তোমার কথা মনে পড়ে মা। তুমি কি জানো মা এক বেলাও পেট ভরে ভাত খেতে পারিনি মা। শুধু তোমার কথা মনে পড়ে মা। তুমি আর কত কষ্ট দিবে বলো? আমার যে আর কষ্ট সহ্য হচ্ছে না মা। ছোট বেলায় তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তোমাকে অনেক যন্ত্রনা দিয়েছি। সেটা আমি জানি মা। তাহলে কি তুমি সেই কষ্টের প্রতিশোধ নিচ্ছ? তুমি বিশ্বাস করো মা তখন ছোট ছিলাম বুঝতে পারি নি। আর কষ্ট দিও না মা, তুমি ফিরে এসো। তুমিই বলো মা, কোন মা কি তার সন্তানের উপর রাগ করে থাকতে পারে। কোন মা কি তার সন্তানকে ছেড়ে থাকতে পারে? তাহলে তুমি কিভাবে পারছো। আমি তো জানি মা, তুমি আমার উপর রাগ করে থাকতে পারো না। আমি সেটাও জানি মা, পরিবারের সবার সাথে তুমি রাগ করলেও আমার সাথে রাগ কর না। তুমিই তো বলতে মা আমার ছোট ছেলে আমার সবচেয়ে আদরের। তাহলে এই মায়া, মমতা, স্নেহ, আদর, ভালবাসা ভুলে কিভাবে থাকতে পারছো বল? মাগো কত দিন হল তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাই নি। কত দিন তোমার হাতে দেওয়া ভাত খাইনি। তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে ইচ্ছে হয় মা। তুমি ফিরে এসো মা। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা। আমার এই কষ্ট কাউকে বোঝাতে দেই না। আর কেউ বুঝবেও না। তুমি আর বাবা ছাড়া কেউ বুঝবেও না মা। যখন তোমার কথা মনে হয় তখন আমার বুকটা ফেটে যায় মা। দুই চোখ দিয়ে শুধু জল ঝরে মা। মাগো এই চোখের জল তুমি ছাড়া কে মুছাবে বলো? তুমিইতো আমার সকল ভরসার স্থল। আর তুমি তো জানো মা তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না। তোমার কি মনে আছে মা এইতো গত বৈশাখে উঠোনজুড়ে বোরো ধানের ছড়াছড়ি। বাবা ভাই সবাই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। সেই ভোর থেকেই তুমি ডাকছো। তারপরও ঘুম আমাকে ছাড়ে না। আবারও ডাকছো সঙ্গে বকুনি। একটু অভিমান নিয়েই ঘুম থেকে উঠে পড়ি। সকালের নাস্তা না করেই নেমে পড়ি কাজে। আমি অভিমান করে বসে আছি। কাজ করতে করতে আমি ক্লান্ত। প্রখর রোদ। প্রচুর গরম। আমি ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ি। এক গøাস শরবত আমার মুখের সামনে তুমি তুলে ধরলে। আমার অভিমানের জয়গাটা মায়ায় ভরে গেল মা। আমি বুঝতে পারি এই তো আমার মা। আর মা তো মা’ই। আর তুমি তো জানো মা আমার সকল অভিমান, রাগ, মায়া, মমতা, স্নেহ, আদর, ভালবাসা, প্রেম সব কিছুই তুমি আর বাবা। তোমরা ছাড়া আমার আর কে আছে বলো? আমার সকল কষ্ট, বেদনা, রাগ, অভিমান আমি তোমার কাছেই সিয়ার করতাম মা। এখন আমি কার কাছে এই কষ্ট, বেদনা, রাগ, অভিমানের কথাগুলো সিয়ার করবো বলো মা? মা মানেই শব্দটা কত মধুর, কত মায়া, কত মততা, কত স্নেহ, কত ভালবাসা সেটা আমি ছাড়া কেউ বুঝবে না মা। তুমি যে আমাদের মাঝে নেই এই কথা ভাবতেও কষ্ট হয় মা। তুমি এভাবে চলে যাবে কখনো ভাবতে পারিনি মা। হঠাৎ করে কি যে হয়ে গেলো বুঝতে পারিনি। কোথায় যে হারিয়ে গেলে। মরণব্যাধি রোগ তোমাকে আমাদের কাছ থেকে তুলে নিয়ে গেল। গরীব পরিবারে জন্ম নিয়েছি বলে কি এত কষ্ট সহ্য করতে হবে? আজ যদি টাকা পয়সা থাকতো হয়তো এত কষ্ট সহ্য করতে হতো না মা। আজ যদি প্রচুর টাকা পয়সা থাকত হয়তো তোমাকেও হারাতে হতো না। আজ তোমাকে খুব বেশি মনে পড়ছে মা। কিন্তু বিশ্বাস করো মা আমরা অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু বাঁচাতে পারিনি মা। ইশ্বর আমাদের কাছ থেকে তোমাকে নিয়ে গেলেন। তোমার চার চারটি ছেলে থাকার পরও তোমাকে বাঁচাতে পারলাম না। তবে তুমি বিশ্বাস করো মা আমরা যে যার অবস্থা থেকে তোমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তোমার হতভাগ্য সন্তান আমরা কিছু করতে পারলাম না। তোমার কি মনে আছে মা যে দিন পেটের ব্যাথায় বিছানায় ছটপট করছিলে। তখন আমি তোমার কাছে থাকতে পারছিলাম না। আমি অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তখন তুমি সেজো ভাইয়ের কাছে বিচার দিয়েছিলে। তুমি সে দিন ভাইকে বলেছিলে যে “সুব্রত আমার কাছে একবারও থাকে না, আমার যে কষ্ট হয় বাবা। সে যদি আমার কাছে থাকত হয়তো আমার কষ্টটা দুর হতো”। সেদিন তোমার কষ্ট বুঝতে না পারলেও আজ বুঝতে পারছি মা, সেদিন তোমার কি কষ্ট হয়েছিলো মা। আজ সেই দিনের কথা খুব মনে হয় মা। কিন্তু আজ নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় মা। যে দেবতাকে যতটুকু পূজা করার কথা হয়তো সে দেবতাকে ততটুকু পূজা করতে পারিনি মা। তারপরও চেষ্টার কোন ত্রæটি করিনি মা। মাগো তুমি তো জান আমি আমার পরিবারটাকে একটা মন্দির মনে করি আর সেই মন্দিরের সকল মানুকে দেবতা মনে হয়। সেই মন্দির থেকে যদি কোন দেবতা হারিয়ে যায় তাহলে কি সেই মন্দিরের শোভা থাকে মা? আর এই মন্দিরের সবচেয়ে বড় দেবতা তো হল তুমি আর বাবা। আর তুমিই যখন এই মন্দিরে নেই তাহলে কি আর সৌন্দর্য্য থাকলো বলো? তুমি তো জানো মা মন্দিরের সৌন্দর্য্য তো দেবতা দিয়েই তাই না মা? মাগো আমি যখন বাসায় যাই তখন তোমার বিছানার দিকে তাকিয়ে তাকি। মনে হয় এই বুঝি তুমি আমাকে ডাকছো। তুমি আমায় ডেকে ডেকে বলছো “সুব্রত আমার কাছে আয় বাবা, আমার কাছে একটু বসো বাবা। তুই ভাত খেয়েছিস বাবা। অফিসে যাওয়ার আগে ভাত খেয়ে যাস বাবা”। তোমার কি মনে আছে মা আমি যখন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকতাম। বাসায় যেতে পারতাম না, তখন তুমি বৌদিদের ফোন দিয়ে আমাকে কল করতে। আর বলতে ‘সুব্রত তুই আজ কি বাসায় আসবে না বাবা। ভাত কি খাবি না’। মাগো আমি একদিন বাসায় না গেলে তুমি আমার খবর নিতে। আমি কোথায় আছি, কি করছি, ভাত খেয়েছি কি না সব খবর নিতে। কিন্তু আজ কে নেবে আমার খবর? কে বলবে সুব্রত তুই ভাত খায়েছিস বাবা? কিন্তু বাস্তবতা কি জানো মা, আমি যদি দিনের পর দিন না খেয়েও থাকি কেউ বলবে না সুব্রত তুই কি কিছু খেয়েছিস বাবা। মাগো, মা হারানো বেদনা কি যে কষ্ট যারা হারায় শুধু তারাই বুঝে। অন্য কেউ বুঝবে না। সেই দুঃখ, কষ্ট, বেদনা সারা জীবন তাড়া করবে মা। মাগো আমি কি সম্পদ হারিয়েছি। আমি জানি মা। সেটা আমি ছাড়া আর কেউ বুঝবে না মা। আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যমান সম্পদ হারিয়ে পেলেছি। জানি এই সম্পদ আর ফিরে পাবো না। মাগো আমার জনম ধন্য তোমার মত একজন মা পেয়ে। জানি না হয়তো হাজার জনম প্রার্থনা করে তোমার গর্বে আমার জন্ম হয়েছে। আমি খুব গর্ব করি মা তোমার গর্বে আমার জন্ম হয়ে। আমার হাজার ভাগ্যের ফলে হয়তো তোমার মত মা পেয়েছি। তোমার গর্বে জন্ম না হলে এই সুন্দর পৃথিবী হয়তো দেখা হতো না। তোমার এই ঋণ কোনদিন সুদ করতে পারলাম না। আর কোন জনমে তোমার আর বাবার ঋণ সুদ করতে পারবো কি না জানি না। আমার শরীরের চামড়া দিয়ে যদি তোমাদের পায়ের জুতা তৈরি করে দিই তারপরও ঋণ সুদ করা যাবে না। আমি ইশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করবো মা প্রতি জনমে জনমে যেন তোমার গর্বে আমার জন্ম হয়। মাগো মনে হয় জীবনের সবচেয়ে মূল্যমান সম্পদ যখন হারিয়ে পেলেছি তখন এই জীবন রেখে কি লাভ। কিন্তু কি যেন জীবনের একটি অদৃশ্য প্রয়োজন আমাকে তাড়া করে মা। আর এই অদৃশ্য প্রয়োজনটাকে নিয়ে জীবন চালাতে হয় মা। জানি না মা এই জীবনের শেষ কোথায়। মাগো তুমি বিশ্বাস করো খুব বেশি মিস করছি তোমাকে। তুমি যেখানে থাকো মা ভালো থাকো। ইশ্বর তোমাকে যেন ভালো রাখে। ইশ্বর যেন তোমার আত্মাকে সুখে, শান্তিতে রাখে এই প্রার্থনা করি। খুব মিস করছি মাগো তোমাকে।


লেখক: সাংবাদিক, স্টাফ রিপোর্টার, সিলেটভিউ২৪ডটকম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন