আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

চা বিক্রি করেই ছেলেকে বিদেশে পড়াচ্ছেন এমসি কলেজের আব্দুল হাই!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-৩০ ১১:০৫:৩৩

আশরাফ আহমেদ, এমসি কলেজ :: বাজান একচাপ গরম চা দেই? দেই মা, আধাঁ-লেবু দিয়া একটা কাপ দেই? একটা কাপ খান বাজান ভালা লাগবো, দিমু? দিমু মা? । একহাতে চায়ের কেটলি  আর অন্যহাতে পেয়ালার বালতিটা নিয়ে এভাবেই   সবুজ ক্যাম্পাসে বিচরণ করেন তিনি।

পরিবর্তন  আর পত্তাবর্তন, উত্থান কিংবা পতন।  নতুন আসে পুরাতন যায়। দিন বদলের এমন হাজারও স্মৃতি নিয়ে বিগত আড়াই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি রয়ে গেছেন প্রাচীণ এই কলেজটিতে।  হয়েছেন অগণিত ঘটনার জীবন্ত সাক্ষীও। চার আনা থেকে শুরু করে ৫ টাকা দামে পৌঁছেছে তার চায়ের পেয়ালা। তবুও তিনি আছেন। যেন, নিজের জীবনের সাথেই জড়িয়ে নিয়েছেন মুরারিচাঁদের ১৪৪ একরের সুবিশাল ক্যাম্পাসকে।

বর্ণনা করছিলাম গত ২৯ বছর ধরে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজে  একনাগাড়ে  চা বিক্রি করে যাওয়া আব্দুল হাই নামের এক সংগ্রামী বৃদ্ধের কথা। প্রায় তিনদশক ধরে  সকাল থেকে সন্ধা প্রতিদিন এই ক্যাম্পাসের ভেতরেই চা বিক্রি করেন তিনি।

মোঃ আব্দুল হাই  নামের এই বৃদ্ধের চার মেয়ে এক ছেলে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আব্দুল হাই নিজে পড়াশোনার সুযোগ না পেলেও সন্তানদের লেখাপড়া ব্যপারে বরাবরই ছিলেন এগিয়ে। তিন মেয়েকে  পড়াচ্ছেন সিলেটের  তাঁজপুর মহিলা মাদ্রাসায়। বড় মেয়েকে ও পর্যাপ্ত শিক্ষা অর্জন করিয়েই পাঠিয়েছেন স্বামীর সংসারে। আব্দুল হাইয়ের বড় সফলতা তার একমাত্র ছেলে গোলাম মোস্তফা কে ঘিরে।

মৌলবীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা   করে উচ্চশিক্ষার জন্য তাকে পাঠিয়েছেন চিনের বেইজিংয়ে। ছেলেকে ঘিরে স্বপ্নের সিড়ি এখন আব্দুল হাইয়ের দুচোখ জোড়ে। বলছিলেন, আব্দুল হাই, সারাদিন কলেজে চা বিক্রি করি,এখানে পড়তে আসা ছেলে মেয়েদের দিকে তাকালে আমার সন্তানদের কথা মনে পড়ে যায়। তখন আর কোন কিছুই ক্লান্তি মনে হয় না।

হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার মুরাপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া এমসির সবুজ ক্যম্পাসে বিচরণকারী এই চা বিক্রেতা  সিলেটের টিলাগড়স্থ কল্যাণপুর এলাকায় ছোট্ট একটা বাসায় পরিবার নিয়ে  বাস করেন।

বলছিলেন আব্দুল হাই, ছোটবেলা থেকেই  ছেলেটা লেখাপড়ায় খুব ভাল । অনেকবার বৃত্তি ও পাইছে।  আমাকে প্রায় সময়ই বলত, আব্বা আমার না বিদেশে পড়ালেখা করার খুব ইচ্ছা। উত্তরে বলতাম, গরীবের ঘরে জন্ম নিছ বাপ, এতো বড় স্বপ্ন  কি আর পূরণ হবে! কথা শুনে মোস্তফা  বলত, দেখো  আমি একদিন ঠিকই বিদেশে পড়তে যামু (যাব)।  মোস্তফার মনোবল  খুবই শক্ত ছিল, যেকারণে   আজকে আমার ছেলে বিদেশে পড়ালেখা করছে।  বলছিলেন আব্দুল হাই ,  বিদেশ থাইকা (থেকে) ছেলেটা বড় ডিগ্রী নিয়া দেশে  আইবো (আসবে), সকলে আমার ছেলেরে স্যার ডাকবো, এইগুলো দেখে যাইতে পারলেই হয় আমার। 

কথা বলতে বলতে, চোখের কোঁন থেকে খানিকটা জ্বল মুচে ৬৭ বছরের এই সংগ্রামী পিতা বলেন,  আমার ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। চা বিক্রির টাকা দিয়ে ছেলেরে বিদেশে পড়াইতেছি । এটাই কম কিসের বাপ?

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৩০ ডিসেম্বর ২০১৯/আশরাফ/মিআচৌ


শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন