Sylhet View 24 PRINT

৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে মণিপুরি মুসলিম তরুণদের ভাবনা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-০৭ ২০:৫২:১৪

সিলেট :: আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) ১৮ মিনিটের এক জাদুকরি ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বপ্নে বিভোর করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এরপরই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, ৯ মাসের লড়াই এবং স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

ওই দিন বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ডাক দেন। এদিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে এই মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশা আল্লাহ।’

বঙ্গবন্ধুর প্রেরণাদায়ী সেই ভাষণ বাঙালি জাতির কাছে সব সময়ই বিশেষ কিছু। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একটি জাতি-জনগোষ্ঠীর মুক্তির কালজয়ী সৃষ্টি, এক মহাকাব্য। বহুমাত্রিকতায় তা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। শুধু বাঙালির জন্যই নয়, বিশ্বমানবতার জন্যও অবিস্মরণীয়, অনুকরণীয় এক মহামূল্যবান দলিল বা সম্পদ। বাংলাদেশের বসবাসরত মণিপুরি মুসলিম সম্প্রদায়ের তরুন শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ভাষণে গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে মতামত জানিয়েছেন। 

সিলেট এম.সি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো: মজিদ খান বলেন,  ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দেওয়া বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণে মুক্তিকামী বাঙালি জাতিকে মুক্তির বাণী শুনিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷

৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবীত করেছে। এই ভাষণটি আমাদের সকলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এখনো এই ভাষণ শুনলে আমি স্থির থাকতে পারি না, আমি উজ্জ্বীবিত হই৷' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  আমাদের জাতির মহান নেতা৷ তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন৷ স্বাধীনতার জন্য এই ৭মার্চের উজ্জ্বীবিত করেছেন৷

মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ আমির আলী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ এদেশের জনগণকে দারুণভাবে আন্দোলিত করে এবং মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে।

৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু কেবল স্বাধীনতার চূড়ান্ত আহ্বানটি দিয়েই ক্ষান্ত হননি, স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখাও দিয়েছিলেন।  আর এরই মাধ্যমে বাঙালির ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয়। কেবল স্বাধীনতা যুদ্ধে নয়, বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ আজও বাঙালি জাতিকে উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণিত করে।


সিলেট এম.সি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বাপ্পি বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর একটি। এ ভাষণের মধ্যে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আসল পথ রচিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতার আকাঙ্খা প্রকাশ পায়। এ ভাষণের মধ্যে দিয়ে, অসহযোগ আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তোলেন।  এই ভাষণই একটি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও এই ভাষণ প্রেরণা জুগিয়েছে৷যা পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ছিনিয়ে আনি মহান স্বাধীনতা, বাঙালি জাতি পায় মুক্তির কাঙ্ক্ষিত স্বাদ৷ প্রতিষ্ঠা পায় স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ৷''


মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মঈন উদ্দীন বলেন, ১৯৭১ সালের ৭-ই মার্চ বাঙালির জীবনে একটি ঐতিহাসিক দিন। ওই দিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো রাষ্ট্রনেতা দিতে পারেন নি। সে দিন তিনি বাংলার হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খিস্ট্রান -কে বাঙালি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। সবাইকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি কখনো সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশয় দেয় নি।

আমার মনে হয়, ৭-ই মার্চের ভাষণ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ভিত্তি ছিল। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ কন্ঠে সেদিন সাড়া দিয়ে বাংলার আপামর জনতা দেশ স্বাধীনের জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। ফলে আমরা বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি।


সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ শফিউল বাশার বলেন, কিছু জিনিসের কোন মৃত্যু নাই । ৭ই মার্চের ভাষণ সেরকমই কিছু। বিশ্বের যেকোন প্রান্তে নির্যাতিত মানুষের কন্ঠস্বর হয়ে থাকবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। ৭ই মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছিল।

৭ই মার্চের মূল বিষয়বস্তু কিন্তু স্বাধীনতা থেকেও আরও বৃহত্তর।‌ স্বাধীন বাংলাদেশ তার নিজ দেশের জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তার ব্যাপারে আরো সচেতন হবে এই আশাবাদ। ৭ই মার্চ এটাই দাবি করে।
 

বাংলাদেশ মণিপুরী মুসলিম ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, ৭ মার্চ বাঙালি জাতির কাছে এক গৌরবময় ও স্মৃতিময় একটি দিন। রেসকোর্স ময়দান বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ লক্ষ লোকের সামনে প্রদান করা ৭ মার্চের সেই হৃদয় জাগ্রত ভাষণ।

এ ভাষণটির সূচনা না হলে বাঙালী জাতিকে আজও পরাধীন হয়ে বেঁচে থাকতে হতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হৃদয়স্পর্শী এ কথাগুলোর কারণেই মহান মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে দিনমজুরসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে বিজয় লাভের ফলে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলো। সেজন্যে বাঙালি জাতি যতোদিন থাকবে ততোদিন ৭ মার্চের ভাষণ তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

মণিপুরি মুসলিম সম্প্রদায়ের তরুণ লেখক ও গণমাধ্যম কর্মী  রফিকুল ইসলাম জসিম মনে করেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল একটি অগ্নিশলাকা যা প্রজ্জ্বলিত করেছিল মুক্তিযুদ্ধের ওই দাবানল। যা ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ এই ১৮ দিনে ওই ভাষণ বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষকে প্রস্তুত করেছে মুক্তির সংগ্রামে–স্বাধীনতার সংগ্রামে। এই ভাষণ ছিল আমাদের সে সময়ের দিশেহারা জাতির জন্য আলোকবর্তিকা স্বরূপ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ৮মার্চ ২০২০/ ফিচার/ জুনেদ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.