সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৬-২১ ২১:১৬:২৫
মাজহারুল ইসলাম জয়নাল :: আজ সারা পৃথীবি করোণা মহামারীতে বিপর্যস্ত। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবাই আজ মহাবিপদের সম্মুখীন,এই ভাইরাসের মোকাবিলা করা কোনো রাষ্টের পক্ষে সম্ভব নয়; একমাত্র আল্লাহ তায়ালার করুণা ছাড়া এর থেকে পরিত্রাণের অন্য কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না। মহামারী ধর্ম-বর্ণ, ধনী -গরীব,মুসলিম -অমুসলিম কাউকে তফাৎ করে না ; সবাইকে গ্রাস করে। মহামারী হতে রক্ষা পেতে হলে সতর্কতার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা রাখতে হবে। কিন্তু, এই মহামারীতে আমরা যদি অমানবিক হই,তাহলে এটা আমাদের জন্য হয়ত আরো বড় মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে আগামীতে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করা আমাদের মানবিক চরম বিপর্যয়। রোগটি নিয়ে সবাই এতটাই আতঙ্কিত যে, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তার সেবায় এগিয়ে আসছি না। উল্টো তার দিকে আঁড়চোখে তাকাই,বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী এমনকি অনেক পরিবারও তাকে একঘরে করে রাখে। এতে করোনায় আক্রান্ত অনেকেই তাদের রোগকে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে , যা আমাদের সমাজ ও রাষ্টের জন্য মহাক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আজ করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে প্রতিবেশীরাও খারাপ ব্যবহার করছেন। অথচ বিপদের এ দিনে প্রতিবেশীরাই সবচেয়ে কাছের মানুষ বলে পরিচিত ছিল এতদিন। করোনা যেনো সেই সহানুভূতির কথাটাও আজ কেড়ে নিয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া কি কোনো অপরাধ! কোনো পাপ! করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সাথে অমানবিক আচরণ করা কি ঠিক হচ্ছে?বর্তমানে করোনা রোগীকে যেভাবে সামাজিক ভাবে বয়কট করা হচ্ছে, তা আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগের বর্বর অমানবিক আচরণ ছাড়া আর কিছু নয়।আজ যেভাবে করোণাকে চোঁয়াছে রোগ বলে প্রচার করা হচ্ছে, তাতে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, করোনা রোগীর আশেপাশে গেলেই যেনো আপনিও আক্রান্তের শিকার হবেন? বিষয়টি মোটেই সত্য নয়। কারণ, করোনা আক্রান্ত রুগীর সাথে নির্ধারিত দৃরত্ত বজায় রেখে (৩ ফুট) কথা বলতে, সাহায্য করতে, সময় দিতে কোনো সমস্যা নেই। সেই জায়গায় গ্রামে একজন করোনা পজেটিভ হলে, তাকে সামাজিক ভাবে বয়কট কিংবা মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে তা কি আমাদের জন্যে ঠিক হচ্ছে? করোণা রোগীর সাথে যোগাযোগ রাখুন , মানবিক আচরণ করতে শিখুন,তাকে অবহেলা নয়; বরং ভালোবাসতে শিখুন। করোনা রোগীকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিন, তাহলে তিনি সুস্থতা অনুভব করবেন, সাহস পাবেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের প্রতি আমাদের করণীয় বা আচরণ কেমন হবে? এ নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন –‘করোনা রোগী থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তাই গ্রামে ,পাশের বাড়ি বা ফ্ল্যাটে করোনাভাইরাস রোগী থাকলে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব হলো রোগী ও তার পরিবারের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা, তাদের বিপদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এগিয়ে আসা। একইসঙ্গে গ্রামে বা বাসার অন্যরা যেন সুরক্ষিত থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’
আবার আক্রান্ত পরিবারের সদস্যদের আইসোলেশন মেনে চলাও জরুরি। আইসোলেশন এর অর্থ হচ্ছে, সমাজের অন্যান্য মানুষের প্রতি সামাজিক দুরত্ত ও সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করা।
কিন্তু, আক্রান্ত ব্যক্তি বা পরিবারের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার মানসিকতা যেন তাদেরকে একঘরে করে না ফেলে, সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা উচিৎ আমাদের। নিয়মিত তাদের খোঁজখবর নিন, আশ্বাস দিন এবং সহযোগিতা করুন। অডিও ও ভিডিও কলের মাধ্যমে করোণা রোগীকে সময় দিন,সাহস যোগান। আপনার এই মানবিক আচরণই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের মনোবল শতগুণ বাড়িয়ে দেবে।
আসুন, করোনা রোগীকে অবহেলা কিংবা সামাজিক ভাবে অপদস্থ নয়; বরং তার প্রতি মানবিক আচরণ করতে শিখুন। আজ তিনি, কাল হয়ত আপনিও করোণায় আক্রান্ত হবেন, তাই মানুষ-মানুষের জন্য এই স্লোগানকে সামনে রেখে করোনা রোগীর সাথে মানবিক আচরণ করতে শিখুন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২১ জুন ২০২০/ জুনেদ