আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

সব কষ্ট ভুলে যাই, যখন রোগী একটু শান্তি পায়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৬-২২ ১৭:৩৩:০৭

ডাঃ রিজওয়ান আহমদ চৌধুরী :: এই দিনটার জন্যই হয়তো জন্ম হয়েছিল। করোনা মহামারিতে মানবজাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে আজ আমি ধন্য। ক’জনেরই বা এই সুযোগ মিলে? এ যে আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত। ধন্যবাদ নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে এই সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
 
৮-৯ ঘন্টা গরমের মাঝে পিপিই পরে কিছু খাওয়া যায় না, বাথরুমে যাওয়া যায় না, দম বন্ধ হয়ে আসে, চোখ ঝাপসা হয়ে যায়, ছয়টা ইলাস্টিক ব্যাল্ট মাথায় অনবরত চাপ দিতে থাকে সে এক তীব্র যন্ত্রণা, কানের উপরে ঘা হয়ে যায়, রাতে এক সেকেন্ডের জন্যেও ঘুমানো যায়না, কি পরিমাণ কষ্ট তা আসলে বলে বুঝানো সম্ভব না। তারপরও সব কষ্ট ভুলে যাই যখন রোগীগুলো একটু শান্তি পায়, সুস্থ হয়ে ওঠে। 
 
আসলে আজ কিছু না বললে অনেক বড় ভুল হয়ে যাবে। ১০দিনের ডিউটি শেষ করে আজ থেকে কোয়ারেন্টাইনে আছি। শারিরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত আমি আজ এই অলস সময়ে ভাবছি, এই দশদিনে আমার মেডিকেলেরই অনেকের আপনজনকে ভর্তি রোগী হিসেবে পেয়েছি, দেখেছি অনেক হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে এই নইমেকহাতে একটা বেড পেয়ে, একটু অক্সিজেন পেয়ে কিছু মানুষকে স্বস্থির নিঃস্বাশ ফেলতে। আমরাও যথাসাধ্য চেস্টা করেছি, করে যাচ্ছি তাদের কস্ট কমানোর।

একটু চিন্তা করে দেখুন, আজ আমাদের এই প্রাণের হাসপাতাল এই উদ্দ্যোগ না নিলে মানুষগুলো কোথায় যেত, কি করতো? আল্লাহ ক্ষমা করুক আজ আমার পরিবারের কিছু হলে এটলিস্ট এই ভরসা আছে যে, হ্যাঁ আমার মেডিকেল তো আছে!

সবকিছুই শুরুর দিকে অনেক ঝক্কিঝামেলা থাকেই,  করোনা ইউনিট শুরু হওয়াটাও তার ব্যতিক্রম নয়। ইনফেক্ট এখনো আছে তবে এখন অনেক অরগানাইজড। ফোলো করা হচ্ছে আপডেটেড ট্রিটমেন্ট প্রটোকল যা ২৪ ঘন্টা বিশেষজ্ঞ স্যারদের দ্বারা সুপারভাইজাড। রিসেন্টলি শুরু হয়েছে প্লাজমা থেরাপির মত জরুরি সেবা। যারাই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বেশিরভাগই সন্তুষ্টমনে  ফিরছেন। সম্পুর্ণ নিজ উদ্দোগে, কারো কোনোপ্রকার সাহায্য ছাড়াই এই প্রতিষ্ঠান একমাত্র আল্লাহর দিকে চেয়ে এই যাত্রা শুরু করে। প্রথমদিকে আমরা নিজেরাও অনেক সন্দেহের মাঝে ছিলাম, উদ্দ্যেগের মধ্য দিয়ে সময় পার করেছি। তবে আজ বলবো নর্থ ইস্ট আজ যা করছে তা কোনোদিন কল্পনাই করিনি, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

প্রতিদিন প্রতি শিফটে অতি ভালো মানের পিপিই পেয়েছি, একবার ব্যবহৃত পিপিই আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। পরিবার এবং অন্যান্যরা যেনো আমাদের থেকে নিরাপদে থাকেন সেজন্য আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।  তিনবেলা অতি উন্নত মানের সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। না শুধু ডাক্তারদের জন্যেই নয় গার্ড, আয়া-মাসি, নার্সসহ এই করোনা ইউনিটে নিয়োজিত সবার জন্যেই একই ব্যবস্থা। এতো গেলো পিপিই আর থাকা খাওয়ার গল্প, অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কথা আর নাই বলি।

সবশেষে বলবো কিছু সমস্যা, সাময়িক ভোগান্তি তো লেগেই থাকবে আবার তার সমাধানও হবে। দোয়া করি এভাবেই বাকিদিনগুলো যেন কেটে যায় এবং খুব শীঘ্রই করোনা এই পৃথিবী থেকে চলে যায়। 

ভালোবাসি এই প্রতিষ্ঠানকে। ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ডাঃ শাহরিয়ার স্যার, প্রফেসর ডাঃ নাজমুল স্যার সহ অন্যান্য স্যারদের যারা দিন নাই রাত নাই সারাক্ষণ আমাদের খেয়াল রাখছেন৷

আমাদের সবার জন্য দোয়া করবেন।

লেখক : ডাঃ রিজওয়ান আহমদ চৌধুরী, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল


সিলেটভিউডটকম/ ২২ জুন ২০২০/ জুনেদ


শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন