আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

আলোকের যাত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৫-১১-১০ ০১:১৮:১৮

মুনজের আহমদ চৌধুরী :: এডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী। আমার প্রিয় ঠিকানা বড়লেখা (মৌলভীবাজার-১) আসন থেকে বারবার নির্বাচিত সাংসদ। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীও। তবে আমি বা আমরা তাঁেক চিনি ভিন্ন পরিচয়ে। আমার নানা তিনি। তবে এই মানুষটিকে নিয়ে তাঁর পরিবারে স্বজনদের মধ্যে হতাশার শেষ নেই।

কেননা, দফায় দফায় মন্ত্রী হয়েছেন এমপি হয়েছেন, কিন্তু নিজের আত্বীয় স্বজনকে ‘সুবিধা’র স্বাদ দিতে পারেননি তিনি। পারেননি নিজের জন্যও কিছু করতে। বরং ২০০১ সালে নির্বাচনের সময় মৌলভীবাজার শহরের সমশেরনগর রোডে নানীর সূত্রে পাওয়া বাসাটিও বিক্রি করে দিতে হয় তাকে।

আমি দেশে থাকতে বহুবারই বলেছি, নানা আপনার পুরনো জিপটা পাল্টান, এটা বেশি পুরনো হয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর সেই একই উত্তর, টাকা নেই নতুন গাড়ি কিনবার।

আমি নিজে একসময় জড়িত ছিলাম ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। তো একদিন গেছি আমার গাড়ি নিয়ে বড়লেখায়। সঙ্গে আমার বাল্যবন্ধু নাসিম আহমদ বাপ্পী। ফেরার পথে মাধবকুন্ড রাস্তার মোড়ে কাঠালতলী বাজারের এক রেষ্টুরেন্টে বসে ভাত খাচ্ছিলাম। এই সাধারণ রেষ্টুরেন্ট এর অসাধারন খাবার ছিল আমার বড় প্রিয়।

খাওয়া শেষে চা খেতে খেতে কথা হচ্ছিল এলাকারই এক প্রবীন মুরব্বির সাথে। কথায় কথায় প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন তিনি আওয়ামীলীগ বিএনপি করেন না, রাজনীতি বুঝেন না, তবে দল একটা করেন এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে।

কথায় কথায় জানতে চাইলে তিনি বললেন, তিনি এবাদ লীগ করেন।পরে জানলাম, বড়লেখা জুড়ীতে অনেক মানুষ আছেন যারাঁ কোন রাজনৈতিক দল করেন না, কিন্তু এবাদুর রহমানকে সমর্থন করেন। এসব মানুষজনকে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীরা বলেন এরা ‘এবাদলীগ’।

মার্কা ভিন্ন হলেও সাধারন মানুষের ভোটে বার বার এ অঅসন থেকে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এই নন্দিত মানুষটি।

দীর্ঘদিন সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকার সুবাদে অনেক নেতা,এমপি-মন্ত্রীরই সান্নিধ্য পাবার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু,এবাদুর রহমান চৌধুরীর যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে ভাল লাগে, সেটি হল তাঁর ব্যাক্তিজীবন। ব্যাক্তি এবাদুর রহমানের নৈতিকতা নিয়ে কোন সমালোচনা আমি কখনো শুনিনি।

আমাদের  রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে ইতিবাচকতার এই দুর্দিনে এই প্রবীন মানুষটির আদর্শ আকড়ে থাকার এই প্রবনতা বড় ভালো লাগে। পেশাগত দিক থেকে আমার আব্বা এডভোকেট জামিল উদ্দীন চৌধুরী তাঁর জুনিওর হিসেবে কাজ করেছেন আইন পেশায়।

নানার সাথে আমার ব্যাবধান তিন প্রজন্মের। কিন্তু,দীর্ঘদিনের নিবিড়তায় তারঁ সাথে আমার সম্পর্ক একসময় বাধাঁ পড়ে পরম নিবিড়তায়।

তুখোর পার্লামেন্টারীয়ান আর অসাধারন বাগ্মী বত্তা এই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মানুষটির স্মরনশক্তি এক কথায় অসাধারন। তাঁর বক্তৃতা আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো হাজারো শ্রোতাকে আগ্রহভরে শুনতে দেখেছি বিশৃংখল রাজনৈতিক সমাবেশেও।

আর রাজনীতিবিদ আর আইনজীবি পরিচয়ের বাইরে অনেকগুলো পরিচয়ে পরিচিত তিনি। ছড়াকার, কবি, সুবক্তা এবং লেখক।তাঁর বেশ কয়েকটি বই এই লন্ডনের মন্টিফিউরী সেন্টারের গ্রন্থাগারেও আমি দেখেছি। কিন্তু এতসব পরিচয়ের বাইরে চাপা পড়ে গেছে এবাদুর রহমান চৌধুরীর সাংবাদিক পরিচয়টি।

একসময়ের পাঠকপ্রিয় পত্রিকা অধুুনালুপ্ত সাপ্তাহিক জনদুতের সম্পাদক ছিলেন তিনি। আমি দেশে থাকতে বার বারই তাকেঁ তাগিদ দিয়েছি পত্রিকাটি পুন:প্রকাশের। প্রতি উত্তরে তিনি একটি কথাই বলতেন, তুমি দায়িত্ব নিলে বের করে দেবো। আমার পেশাগত প্রয়োজনে বহু বার স্মরনাপন্ন হয়েছি তার।

আর তাঁর সাথে দেখা হলে প্রথমে আমি যে জিনিষটি চাইতাম, সেটি হলো নিউজের থিম। ‘তাঁর নিউজ সেন্স অসাধারন, পন্ডিত মানুষ’ -একথাটা একদিন আমাদের সময়ের ঢাকার বাংলামোটরের অফিস থেকে নামার সময়  বলেছিলেন সম্ভবত আমার সম্পাদক।

আর ব্যাক্তি এবাদুর রহমান একজন সংস্কৃতিবান পুরুষ,একজন মানবিক মানুষ সর্বপোরি একজন সফল আইনজীবি এবং রাজনীতিবিদ। মৌলভীবাজার জেলার থথা দক্ষিন সিলেটের শিক্ষাবিস্তারের অগ্রদুত এই শিক্ষানুরাগী মানুষটি বরাবরই পছন্দ করেন পাদ প্রদীপের অন্তরালে থাকতে। বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক অধ্যায়ের সাক্ষী এই মানুষটি দেশে বিদেশে পরিচিত একজন শিক্ষানুরাগী রাজনীতিক হিসেবে।

আইন পেশায় উপার্জিত টাকা দিয়ে তিনি রাজনীতি করেন মানুষের জন্য। এই বয়সেও তাকে কোর্টে জেতে হয় রাজনীতির জন্য পয়সা রোজগার আর সংসারের ব্যায় বহনের জন্য। কয়েকযুগ এমপি-মন্ত্রী থেকেও আইন পেশার বাইরে তার আয়ের উৎস তার মৌলভীবাজারের খামারবাড়ি এবাদ নগর এগ্রো প্রজেক্ট।

এবাদুর রহমান চৌধুরীর এই সততা, ব্যাক্তি এবাদুর রহমানের সচ্ছতা আর দুর্বৃত্তায়নের যাপিত সময়েও কালো টাকার বিরুদ্ধে রাজনীতিতে লড়ে যাওয়া আর তার বিত্তহীনতাই তার এবং আমাদেরও অহংকার। আজ যখন পুর্ব লন্ডনের রাস্তায় হাটতে হাটতে শুনি, এবাদুর রহমান চৌধুরীর মতো

রাজনীতিকদের যথাযথ মুল্যায়ন করতে পারেনি রাষ্ট্র, তখন মনে হয়...মানুষের চিত্তে এভাবে আলোকিত অধ্যায়ে বেঁেচ থাকবার চেয়ে কী মুল্যবান হতে পারে বিত্ত?  কখনোই না।

লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক ও চ্যানেল আই ইউরোপের বার্তা সম্পাদক

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন