আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং
মারুফ খান মুন্না :: সম্প্রতি সিলেটসহ সারাদেশ ভুমিকম্পের ঝাঁকুনিতে কেপে উঠেছিল।৩ জানুয়ারি বেলা ৩টার দিকে এই কম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৫ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ভারতের ত্রিপুরার আম্বাসা এলাকায়, ভূপৃষ্ঠের ৩৬ কিলোমিটার গভীরে।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই প্রায় ১০ ঘণ্টা পর ওই দিন দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে আবারও ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল মিয়ানমার। এতে সিলেটবাসীসহ দেশজুড়ে মানুষের মনে শঙ্কার সৃষ্টি হয়।এ নিয়ে গত দুই বছরে ১২ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।আর এতে শঙ্কার সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক।
ভুমিকম্প এমন একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার আগে থেকে পুর্বাভাস দেওয়ার উপায় এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের ১৭১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উপরের সারিতে। এমন অনেক দেশ আছে যেখানে ভুমিকম্পের ঝুকি বাংলাদেশের চেয়েও বেশী। কিন্তু তাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কারণে হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমাতে সক্ষম হয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সিলেট,ঢাকা, চট্টগ্রামসহ আরও কিছু এলাকা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। কাজেই এসব জনবহুল এলাকায় ভবন নির্মাণের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা না হলে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশের স্থাপনাসমূহ নিয়েও এরকম শঙ্কা রয়েছে। তাই ক্ষয়ক্ষতি যাতে কম হয় সে জন্য সরকার প্রণীত বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। ভবনকে ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ করা হলে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। এছাড়া বিপদ মোকাবেলায় সাধারণ মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখা এবং নিয়মিত মহড়া ও স্বেচ্ছাসেবক তৈরির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
ভুমিকম্প নিয়ে আমাদের কথা বলার অধিকারও আমরা নিজেরা হারিয়ে ফেলেছি। কেননা ভুমিকম্প হওয়ার পর আমাদের ঠনক নড়ে।কিছুদিন পর সবাই ভুলে যায়। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে ভুমিকম্প থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়, এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে আতঙ্ক নয়, বরং সচেতনতা গ্রহণই সময়ের দাবি। ভূমিকম্প রোধের কোনো উপায় কারো জানা নেই বলেই আমাদের সচেতন থাকা দরকার। ভূমিকম্পের ঝুঁকি ভয়ে ভোগা নয়, নিজেদের রক্ষায় অধিবাসীদের সচেতন করে তুলতে হবে। হাসপাতালে আহতদের সেবাদানের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশেষ ইউনিট চালু থাকা দরকার। এছাড়া উদ্ধারকাজ চালানো, যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার ইত্যাদি সম্পর্কেও পূর্বপ্রস্তুতি থাকা বাঞ্ছনীয়।
এটা স্পষ্ট, বড় মাত্রার ভূমিকম্পে যে ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে, আমাদের দেশের পক্ষে সেই পরিস্থিতি এককভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই উদ্ধার তৎপরতার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়েও যথাযথ প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ০৮জানুয়ারি,২০১৭/এমকেএম