আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ডিজিটাল বাংলাদেশ: শেখ হাসিনার উপহার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-১৮ ১১:১৩:২৬

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে দেশের মানুষ আজ পরিচিত ডিজিটাল বাংলাদেশের  সাথে। একসময় যা ছিল শুধুই স্বপ্ন, তা আজ বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দায়িত্ব নেয়ার সময় একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অঙ্গীকার করেছিলেন। সেই অঙ্গীকার অনুযায়ী এগোচ্ছে দেশ।

২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণই ছিল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান বিষয়। দেশের মানুষ আজ পাচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ সুবিধা।

দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া। এক সময় মাধ্যমিক পাশ করার পর উচ্চ মাধ্যমিক অর্থাৎ একাদশ শ্রেণীর ভর্তির আবেদনের জন্য বিভিন্ন কলেজের একটি নির্দিষ্ট স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো আবেদন করার জন্য। সেই সাথে ভোগান্তি পোহাতে হতো অভিভাবকদের। ২০১২ সাল থেকে উচ্চমাধ্যমিকে আবেদনের জন্য নিয়ে আসা হয় অভিনব পদ্ধতি। দেশের যে কোনো জায়গায় বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে একাদশ শ্রেণীর জন্য।

দেশের সকল মানুষের জন্য নিয়ে আসা হয় তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন নাগরিক সেবা পাচ্ছেন মোবাইলের মাধ্যমে। নাগরিক সেবার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিল গ্রামের জনসাধারণ মোবাইলের মাধ্যমেই পরিশোধ করতে পারছে। বিল পরিশোধ করার জন্য এখন আর সময়, শ্রম নষ্ট করে দূরে যেতে হয় না। এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে গেছে বিদ্যুতের সেবা। সরকারি বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি আছে সৌর বিদ্যুৎ সংযোগ।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর দেশের ৪,৫৪৭ ইউনিয়নে চালু হয় এই সেবা কেন্দ্র। নারীর ক্ষমতায়নে প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টারে একজন পুরুষের সঙ্গে একজন নারী উদ্যোক্তা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। এসব সেবাকেন্দ্রে কম্পিউটার কম্পোজ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য, ভর্তি ফরম পূরণ, জন্ম নিবন্ধন, বীমা, মোবাইল ব্যাংকিং, কৃষিকাজের জন্য মাটি পরীক্ষা ও সারের সুপারিশ, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, ডাক্তারি পরামর্শসহ দৈনন্দিন ৬০ ধরণের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি নির্বাচিত কিছু ডিজিটাল সেন্টার থেকে পাসপোর্ট ও ভিসার আবেদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৩০০৮টি সেন্টারে চালু হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা।

বিশ্বে শ্রমবাজারে বাংলাদেশের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। এর জন্য প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে অসংখ্য মানুষ পাড়ি জমায় বিদেশের মাটিতে। যারা দেশের বাহিরে কাজের জন্য যেতে আগ্রহী তাদের মধ্যে ২০ লাখ ২২ হাজার ৪৩৬ জন শ্রমিক অনলাইনে ডিজিটাল সেন্টারে নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে বড় একটি সংখ্যায় নারীও রয়েছেন। ফলে দেখা যাচ্ছে, ডিজিটাল সেন্টার তৃণমূল সেবার হাব হিসেবে গড়ে উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদের পর দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে ৪০৭টি ডিজিটাল সেন্টার ও ৩২১টি পৌরসভাতে ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়েছে। আইসিটি ডিভিশন এবং এটুআইয়ের মতে, প্রতি মাসে গড়ে ৪০ লাখ মানুষ এসব কেন্দ্র থেকে সেবা নিচ্ছে। এটুআইয়ের হিসেবে ডিজিটাল সেন্টার থেকে উদ্যোক্তারা এর মধ্যে আয় করেছেন ১৪০ কোটি টাকা।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরকারি ওয়েবসাইট ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’-এ ৪৩ হাজার দপ্তর এখন সংযুক্ত। এতে যুক্ত হয়েছে মন্ত্রণালয় বিভাগ, অধিদপ্তর, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নের ২৫ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট। ২০১১ সালে ১৪ নভেম্বর দেশের জেলায় জেলায় ই- সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়। এই ই- সেবা কেন্দ্র থেকে ৮ লক্ষাধিক সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।

দরপত্র আহ্বান করার জন্য চালু করা হয়েছে ই-প্রকিউরমেন্ট। বর্তমানে অনেক মন্ত্রণালয় অনলাইনের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করছে।  টেন্ডার বাণিজ্য রোধে এই ধরণের পদক্ষেপ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আদালতের কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজড করতে চালু হয়েছে মোবাইল কোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। স্বল্প পরিসরে চালু হওয়া এ উদ্যোগের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতের যাবতীয় ডক্যুমেন্ট অনলাইনে সংরক্ষণ এবং ব্যবহারের জন্য রাখা হচ্ছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে সকল রেকর্ড এসএ, সিএস, বিআরএস ও খতিয়ান কপি ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি খতিয়ান ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। চালু হতে যাচ্ছে ডিজিটাল রেকর্ড রুম। এর মধ্যে ২৩ লাখ ২০ রেকর্ড ডিজিটাল সিস্টেমে প্রদান করা হয়েছে।

সরকারি অফিস – আদালতের কাজকর্ম আরও স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করার জন্য চালু করা হয়েছে ই – ফাইলিং সিস্টেম। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ১৬টি মন্ত্রণালয়-বিভাগ-অধিদফতর এবং ৬৪ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে ই-ফাইলিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

‘তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা নয়, বরং শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি’ এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, শিক্ষক কর্তৃক মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট তৈরি, শিক্ষক বাতায়ন, ই-বুক, মনিটরিং ড্যাশবোর্ড ও ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক নামক মডেলগুলো উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ মডেলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের উপযোগী কন্টেন্ট তৈরি করে ক্লাসে ব্যবহার করছেন। ২৩,৩৩১টি মাধ্যমিক ও ১৫,০০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় ১,৮০,০০০-এর বেশি শিক্ষক এবং ১,৬৫০ মাস্টার-ট্রেইনার মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট তৈরি বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছেন।

কৃষি খাতকে আরো আধুনিক করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে নিত্য নতুন পদ্ধতি। কৃষকদের কৃষিসংক্রান্ত সেবা তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য তৈরী করা হয়েছে ‘ কৃষি বাতায়ন ‘.

‘রূপকল্প -২১’ ও ‘ রূপকল্প -৪১’ বাস্তবায়নের জন্য সরকার দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে । তৈরী করছে অত্যাধুনিক সব অবকাঠামো। বিশ্ববাসী একসময় যে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে জানতো সেই দেশ আজ উপচে পড়া ঝুড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন