আজ মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

গ্রামীণফোন-রবিতে প্রশাসক নিয়োগ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-১৯ ০১:০৭:১৯

রুহুল আমিন রাসেল :: দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর প্রামীণফোন ও রবিতে প্রশাসক বসাতে যাচ্ছে সরকার। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তে বিদেশি বিনিয়োগে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, গ্রামীণফোন ও রবির মতো বৃহৎ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে এমন সিদ্ধান্তে আতঙ্ক ছড়াবে অন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মাঝে। শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিশ্লেষক মামুন রশীদের মতে অতিসম্প্রতি বিনিয়োগে একটা ভালো গন্তব্য হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। এ সিদ্ধান্ত এক্ষেত্রে বিরাট বাধা হিসেবে কাজ করবে। বিশ্ব বিনিয়োগ সমাজ যেন ভুল না বোঝে, তাই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসিকে দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটার কাছে পাওনা আদায়ে প্রতিষ্ঠান দুটিতে প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বিটিআরসির দাবি রাজস্বের ভাগাভাগি, কর ও অন্যান্য খাতে গ্রামীণফোন ও রবির কাছে পাওনা ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি টাকা। এ পাওনার উৎস গ্রামীণফোনের ওপর ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এবং রবির ওপর ১৯৯৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষা। তবে গ্রামীণফোন ও রবি সব সময় বলে আসছে, তাদের যুক্তি নিরীক্ষায় বিবেচনা করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ- অ্যামচামের সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা আফতাব উল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রামীণফোন ও রবি এদেশের বড় বিনিয়োগকারী ও সরকারের বৃহৎ করদাতা। এখানে প্রশাসক বসালে, অন্যরা আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়বে। শেয়ারবাজারে প্রভাব পড়বে। নতুন বিনিয়োগকারীদের মাঝে ভুল বার্তা যাবে। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে। কারণ অডিট নিয়েও প্রশ্ন আছে। সরকারের উচিত- গ্রামীণফোন ও রবির সঙ্গে পৃথকভাবে সমঝোতা করা। অন্যথায় সরকারের ভিতর-বাইরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পুরো বিষয়টি সরকার, গ্রামীণফোন ও রবি সমঝোতার ভিত্তিতে দ্রুত সমাধান করা উচিত। নইলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। জানা গেছে, বিটিআরসি চিঠি দিয়ে পাওনা না পেয়ে দুই অপারেটরের ব্যান্ডউইডথ সীমিত করা এবং প্যাকেজ ও সরঞ্জামের ছাড়পত্র (এনওসি) দেওয়া বন্ধ করেছে। পরে ৫ সেপ্টেম্বর দুই অপারেটরকে লাইসেন্স (টু-জি ও থ্রি-জি) বাতিল কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। জবাবের সময় ছিল ৩০ দিন। বিটিআরসি বলছে, গ্রামীণফোন ও রবি যে জবাব দিয়েছে, তা সন্তোষজনক নয়। তাই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এরই মধ্যে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ও গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল ফোলিকে নিয়ে বৈঠক করেন। এরপরও দুই দফা বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ বৈঠক হয় গত ৩ অক্টোবর। চলতি মাসে বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়, সমস্যা সমাধানে পাঁচটি প্রস্তাব পেশ করা হয়। এগুলো এক. দুই পক্ষ একটি কমিটি গঠন করে পাওনা পরীক্ষা অথবা পরীক্ষার পদ্ধতি বের করবে। দুই. বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিলের কারণ দর্শানোর নোটিস ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে। অন্যদিকে অপারেটররা মামলা প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেবে। তিন. অর্থমন্ত্রী, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, এনবিআর ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখবেন। চার. কমিটি গঠন ও কমিটির কাজ শুরুর আগে আগামী সাত দিনের মধ্যে গ্রামীণফোন ১০০ কোটি ও পরের এক মাসের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দেবে। রবি দেবে দুই দফায় ৫০ কোটি টাকা। ৫. এসব প্রস্তাব দুই অপারেটর তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে। এর আগে বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিলের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ার আগেই আগস্টের শেষ সপ্তাহে গ্রামীণফোন ও রবি পাওনা আদায়ের পদক্ষেপে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে নিম্ন আদালতে যায়। ২৮ আগস্ট ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত গ্রামীণফোনের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যায় গ্রামীণফোন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ পাওনা আদায়ে পদক্ষেপের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন বলে জানিয়েছে গ্রামীণফোন ও আইনজীবী সূত্র। আদালত একই সঙ্গে আগামী ৫ নভেম্বর আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসক বসানোর সরকারি উদ্যোগ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোন লিমিটেডের হেড অব রেগুলেটরি এবং অ্যাক্টিং হেড অব কমিউনিকেশন্স হোসেন সাদাত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিটিআরসির কাছ থেকে কোনো রকম নির্দেশনা না পাওয়ায় আমরা অনুমাননির্ভর কিছু বলতে চাই না। বিটিআরসির ভিত্তিহীন এবং বিবদমান নিরীক্ষা সংক্রান্ত দাবিটির গঠনমূলক সমাধানের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর চেয়ারম্যানের সদয় নির্দেশনা ও সহায়তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। গ্রামীণফোনের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন স্বচ্ছ, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সময়োচিত সমাধানের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে আমাদের বিবেচনাধীন আছে। আমরা সম্প্রতি সরকারের কাছ থেকে নতুন কিছু নির্দেশনা পেয়েছি যা বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিটিআরসির ভিত্তিহীন বিধিনিষেধ ও লাইসেন্স সংক্রান্ত কারণ-দর্শানোর নোটিসটি এখনো বলবৎ। এর ফলে গ্রামীণফোনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও গ্রাহকসেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত রবি আজিয়াটার হেড অব করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম গতকাল টেলিফোনে বলেন, সরকারের এমন উদ্যোগ আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত। এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ বিদেশি বিনিয়োগের কাছে ভুল বার্তা যাবে। যার প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি।

সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন