আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

প্রসেসর লড়াই, বদলে যাবে কম্পিউটিং দুনিয়া

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০১-১৮ ০৯:৫৯:৪১

সিলেটভিউ ডেস্ক :: পিসি আর ল্যাপটপ মানেই ইন্টেল বা এএমডির প্রসেসর, এমনটাই চলছে দুই দশক ধরে। তবে সেদিনের ইতি হতে যাচ্ছে। শুরু ম্যাকে অ্যাপলের নিজস্ব প্রসেসর ব্যবহারের মাধ্যমে। ইন্টেল বা এএমডির বাইরেও অনেক নির্মাতাই এখন নতুন ধরনের প্রসেসর নিয়ে কাজ করছেন। এই প্রসেসরগুলোই বদলে দেবে আগামী দিনের কম্পিউটারিং দুনিয়া। বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ

ডেস্কটপ আর ল্যাপটপে ইন্টেল ও এএমডির তৈরি x৮৬-৬৪ ভিত্তিক, আর ফোনে এআরএম আর্কিটেকচারের প্রসেসর ছাড়া সচরাচর অন্যান্য আর্কিটেকচারের প্রসেসর এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না। তবে দুনিয়া বদলে যেতে শুরু করেছে; x ৬৪ আর্কিটেকচারের মনোপলির দিন শেষ।

এআরএম৬৪
শুরুতে স্মার্টফোন আর অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসেই এআরএম প্রসেসরের দেখা মিললেও, এখন ল্যাপটপ ও ডেস্কটপেও এই আর্কিটেকচার দেখা যাচ্ছে। এটি রিডিউসড ইনস্ট্রাকশন সেট কম্পিউটার বা আরআইএসসি ঘরানার প্রসেসর। এআরএম৬৪ প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা প্রসেসরগুলো আকারে খুব ছোট করা যায়। ফলে খুব কম শক্তি খরচ করে। এর লাভ দুটি—ল্যাপটপ, ফোন ও ট্যাবলেটের ব্যাটারিলাইফ বাড়ে এবং ডেস্কটপের ক্ষেত্রে x ৮৬ প্রযুক্তির প্রসেসরের সমান কাজ করতে পারে তার এক ভগ্নাংশ শক্তি খরচ করেই। এআরএম প্রযুক্তির আরো একটি বড় সুবিধা—এআরএম প্রসেসর একেবারে অল্প শক্তি খরচ করে স্লিপ মোডে থেকেও ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, ফলে জরুরি নোটিফিকেশন মিস হওয়ার বা ডাউনলোড বন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে না। তবে এআরএম আর্কিটেকচারের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম বলা যায় বিশাল পরিমাণ র‌্যাম এবং বাড়তি জিপিউ বা থান্ডারবোল্ট প্রযুক্তির বেশ কিছু ফিচার করতে না পারা। তবে ভবিষ্যতে এসব সীমাবদ্ধতা কেটে যেতে পারে।

ঝাওশিন কাইশিয়ান x ৮৬
কাইশিয়ান x ৮৬ ঠিক নতুন প্রযুক্তি নয়। ইন্টেল ও এএমডির উদ্ভাবিত x ৮৬-৬৪ আর্কিটেকচারের জন্য তৈরি সফটওয়্যার যাতে চালানো যায় সেদিকে লক্ষ রেখে ঝাওশিনের তৈরি নতুন প্রসেসরের আর্কিটেকচার এটি। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কিছু সময় আগে থেকেই চীন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা নিজেরাই প্রসেসর থেকে শুরু করে পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার তৈরি করবে, তারই ফসল কাইশিয়ান প্রসেসর। বর্তমানের কাইশিয়ান প্রসেসর উইন্ডোজ ১০ চালাতে পারে। এটি বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারও চালাতে সক্ষম। তবে কাইশিয়ান ডেস্কটপের জন্য তৈরি হলেও প্রসেসরটি সরাসরি মাদারবোর্ডের সঙ্গে ঝালাই করে লাগানো, আর সঙ্গে থাকা জিপিউটিও শুধু অফিসের প্রগ্রাম চালানোর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারে না। ভবিষ্যতে অবশ্য কাইশিয়ান সহজেই এএমডি ও ইন্টেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে পারবে সন্দেহ নেই। তবে ধীরে ধীরে অ্যাপল ও মাইক্রোসফট যেহেতু এআরএম আর্কিটেকচার ব্যবহার শুরু করছে, কাইশিয়ান x ৮৬-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ।

স্পার্ক৯
স্পার্ক বা স্কেলেবল প্রসেসর আর্টিটেকচার একটি ‘আরআইএসসি প্রসেসর আর্কিটেকচার’, যার জন্ম হয়েছিল সান কম্পিউটার সিস্টেমসের তৈরি ওয়ার্কস্টেশন ও সার্ভারে। পরে সান মাইক্রো সিস্টেমসের পতনের পর স্পার্ক আর্কিটেকচারের লাইসেন্স ও প্রযুক্তির প্যাটেন্টগুলো ব্যবহার করে তৈরি করা হয় ওপেনসোর্স ওপেনস্পার্ক আর্কিটেকচার সিস্টেম। আর সেটার ওপর ভিত্তি করেই চীনারা তৈরি করা শুরু করেছে ফেইটেং সিরিজের সার্ভার প্রসেসর। স্পার্ক আর্কিটেকচারের সবচেয়ে বড় সুবিধা—চাইলে প্রসেসরের আকৃতি যত ইচ্ছা বড় করা যায়, আবার চাইলে তেমন কোনো সফটওয়্যার কারসাজি ছাড়াই একাধিক প্রসেসর মিলিয়ে তৈরি করা যায় ক্লাস্টার। ফেইটেংয়ের পাশাপাশি সানওয়ে সিস্টেমসের তৈরি প্রসেসরগুলোও ধারণা করা হচ্ছে স্পার্ক আর্কিটেকচারের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি। তবে সুপার কম্পিউটার এবং বিশেষায়িত কাজের (যেমন—স্ট্যাটিস্টিক্যাল অ্যানালিসিস) বাইরে স্পার্কের তেমন ব্যবহার আপাতত নেই।

আরআইএসসি-ভি
আরএসসি-ভি বা রিস্ক-ভি একটি ওপেনসোর্স আর্কিটেকচার, যা চেষ্টা করছে এআরএমের স্থান দখল করতে। স্বল্পশক্তির ব্যাটারিসাশ্রয়ী এ আর্কিটেকচার নিয়ে কাজ করছে রিস্ক-ভি ফাউন্ডেশন। আপাতত রিস্ক-ভি প্রসেসরসংবলিত কিছু সিঙ্গলবোর্ড কম্পিউটার (র‌্যাস্পবেরি পাইয়ের মতো) ছাড়া বাজারে তেমন কিছু না থাকলেও, ধারণা করা হচ্ছে চীনের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্ব যদি যুক্তরাষ্ট্র চালিয়ে যেতে থাকে, তাহলে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতারা হয়তো রিস্ক-ভি নিয়ে কাজ শুরু করবেন। মজার বিষয়, রিস্ক-ভি যে প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করছে, তা এখনো কেউ চেষ্টা করেনি। এখনো পর্যন্ত এত বিশাল মেমোরি অ্যাডড্রেসের প্রয়োজনীয়তা না থাকায় তার দিকে তেমন কেউ নজর দিচ্ছে না, তবে রিস্ক-ভি ফাউন্ডেশন ৮৬৪ বিট পর্যন্ত প্রসেসর তৈরির চেষ্টা করছে।

শেনওয়েই-৬৪
এই রহস্যঘেরা আর্কিটেকচারের ব্যাপারে আসলে তেমন কিছু এখনো জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, চীনের শেনওয়েই সিস্টেমসের তৈরি এসডাব্লিউ২৬০১০ প্রসেসরে এটি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রসেসরটি তাইহুলাইট ও ব্লুলাইট সুপার কম্পিউটারে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেটিতে আছে ৪ গুচ্ছ কোর, যার প্রতিটিতে আছে ৬৪টি কম্পিউটর প্রসেসিং ইউনিট অর্থাৎ ২৫৬টি প্রসেসিং থ্রেড আছে প্রতিটি প্রসেসরে। তবে এই কোরগুলো বর্তমান ডেস্কটপ প্রসেসরের কোরের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা, প্রতিটি কোর একটি ইনস্ট্রাকশন পালন করতে পারে একাধিক ডাটার ওপর—অনেকটা জিপিউতে থাকা স্ট্রিম প্রসেসরের মতো।

প্রতিটি গুচ্ছকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আছে একটি করে মূলধারার সিপিউ কোর এবং একটি করে র‌্যাম কন্ট্রোলার। এ রকম বিশেষায়িত প্রসেসর ছাড়া আসলে সুপার কম্পিউটার তৈরি সম্ভব নয়। এই প্রসেসরে তৈরি তাইহুলাইট সুপার কম্পিউটার ২০১৮ সালে ছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার, যাতে স্থান করে নিয়েছিল ৪০ হাজার ৯৬০টি এসডাব্লিউ২৬০১০ প্রসেসর এবং যার ক্ষমতা ছিল ৯৩ পেটাফ্লপস।

এমআইপিএস
প্রযুক্তি বিশ্বের দরবার থেকে মাইক্রোপ্রসেসর উইদাউট ইন্টারলকড পাইপলাইন স্টেজেস বা এমআইপিএসের (মিপস) নাম বলতে গেলে মুছেই গিয়েছে। আর্কিটেকচারটির শুরু হয়েছিল এমবেডেড সিস্টেম, যেমন ওয়াই-ফাই রাউটার বা কারখানার নানা ধরনের মেশিন পরিচালনাকারী কম্পিউটারের সিপিউ হিসেবে।

বর্তমানে মিপস৩২ ও মিপস৬৪ ভিত্তিক বেশ কিছু প্রসেসর বাজারে আছে, যেমন—ইনজেনিক, এলএসআই এবং চীনের লংসুনের তৈরি সব প্রসেসর। এরূপ প্রসেসরের সুবিধা—এআরএমের মতো কম শক্তি ব্যয় করে এবং অল্প তাপ উৎপন্ন করে কাজ করতে সক্ষম, কিন্তু তার চেয়েও বড় ব্যাপার—মিপস প্রসেসরগুলো সহজেই রোবট এবং নানা ধরনের মেশিনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারে ব্যবহারকারীর ইন্টারঅ্যাকশন ছাড়াই। মিপস প্রসেসরভিত্তিক সিস্টেমগুলো অনেক সময় ব্যবহারকারীর নজরের আড়ালেই থেকে যায়, আর সেভাবেই সেগুলো তৈরি করা হয়েছে। সাধারণত এমবেডেড লিনাক্সভিত্তিক সিস্টেম, যেমন নেটওয়ার্কহাব বা মিডিয়া প্লেয়ারেই মিপস প্রসেসর দেখা যায়।

পাওয়ার১০
আইবিএম পাওয়ারপিসি সিরিজের প্রসেসর অ্যাপল ম্যাক থেকে বাদ পড়ার পর তারা আবারও সার্ভার প্রসেসর নিয়েই কাজ করা শুরু করে। আর সেটিরই বর্তমান সংস্করণ-পাওয়ার১০। অত্যন্ত শক্তিশালী এই আর্কিটেকচারের প্রসেসর শুধু বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটারেই দেখা গেলেও গুঞ্জন চলছে দ্রুতই এটি সার্ভারের বাজারেও প্রবেশ করবে। এই প্রসেসরে যেসব প্রযুক্তির নতুন সংস্করণ ব্যবহার করা হয়েছে তা মূলধারার কোনো ডেস্কটপে দেখা যায়নি। যেমন প্রতিটি কোরে থাকছে আটটি করে থ্রেড, যেখানে দুটির বেশি মাল্টিথ্রেডিং ওয়ার্কস্টেশনেও দেখা যায়নি। চাইলে ৪ টেরাবাইট পর্যন্ত র‌্যাম, অসীম পরিমাণ প্রসেসর এবং পিসিআই এক্সপ্রেস৫ প্রযুক্তির জিপিউ এবং অন্যান্য হার্ডওয়্যার এটির সঙ্গে ব্যবহার করা যায়।

অপারেটিং সিস্টেম প্রতিটি প্রসেসরকে ১২০ বা ২৪০ কোর প্রসেসর হিসেবে দেখে থাকে। তবে লিনাক্স, পাওয়ারভিএম ও আইবিএমএর নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া আর কিছু এতে চালানো এখনো সম্ভব নয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ জানুয়ারি ২০২১/ডেস্ক/মিআচৌ-৭

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন