Sylhet View 24 PRINT

'রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুই দেশের সমন্বয়ের অভাব'

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-১৩ ১৫:০৮:৩৯

সিলেটভিউ ডেস্ক :: মিয়ানমার-বাংলাদেশের সমন্বয়ের অভাবে যথাসময়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী ও কার্যত সরকারপ্রধান অং সান সু চি।

একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো তিনি স্বীকার করেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় তার সরকারের শতভাগ প্রচেষ্টা ছিলো না।

বৃহস্পতিবার ভিয়েতনামে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম অন আসিয়ান সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন মিয়ানমারের অং সান সু চি।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে বড় আকারের রোহিঙ্গা নিধন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। সেসময় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে আগে থেকে থাকা রোহিঙ্গাসহ ১১ লাখের মতো শরণার্থীর ঠাঁই হয় কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থায়ী-অস্থায়ী ক্যাম্পে।

এসব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরাতে গেল নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমার-বাংলাদেশের মধ্যে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’সই হওয়ার পর কেটে গেছে ৯ মাস। এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের নানা তালবাহানায় কার্যত আলোর মুখ দেখেনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে মিয়ানমার নেত্রী প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে নানাভাবে দোষারোপ করে আসছিল।

সু চি বলেন, ‘নভেম্বরে বাংলাদেশের সাথে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক অনুসারে ২৩ জানুয়ারি থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ সেসময় জানিয়েছে- তারা পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। যেহেতু এই প্রক্রিয়ার সাথে দুই দেশ সম্পৃক্ত; সুতরাং আমরা এককভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। কারণ, সংখ্যালঘু মুসলিমদের বাংলাদেশ থেকে আগে ফেরার ইচ্ছা থাকতে হবে। আমরা প্রতিবেশী দেশে ঢুকে, তাদের নিয়ে আসতে পারি না।’

যদিও বাংলাদেশ সরকার চলতি বছর মিয়ানমারকে এপ্রিলে ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা পাঠায় মিয়ানমারে। কিন্তু মিয়ানমারে যাচাই-বাছাই, ত্রুটি সংশোধনের পরই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে পারে জানিয়ে দেয়। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো পরিবেশ মিয়ানমার সৃষ্টি করেনি বলে জানিয়ে আসছে।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির নীরবতার জোরালো সমালোচনা করে আসছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি পুরস্কারও হাতছাড়া হয়েছে মিয়ানমার নেত্রীর। সর্বশেষ সিঙ্গাপুরে এক অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গাদের নাম উল্লেখ না করেই তাদের ফেরানোর ব্যর্থতার সমস্ত দায় বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপান সু চি।

সু চি বলেন, ‘রাখাইন সংকটের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ছিলো, এখনও রয়েছে। সেনাবাহিনী কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে- এই প্রশ্নে না যেয়ে যদি জিজ্ঞেস করেন, সরকারের ভূমিকা কি ছিলো? তাহলে বলবো– গণতান্ত্রিক সরকার মাত্র ৭৫ শতাংশ ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিলো। স্বীকার করে নিচ্ছি, সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতভাগ দেয়াটা উচিৎ ছিলো প্রশাসনের।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের দেশটির নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করা হয়। এই নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে আশির দশক থেকেই দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছে মিয়ানমার। তখন থেকে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশের দিকে ছুটে এসেছে রোহিঙ্গারা।

সু চি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের সব পক্ষকে স্বচ্ছ হতে হবে। কেবল নির্দিষ্ট কোনো পক্ষকে আইনের শাসনে সুরক্ষা দেওয়ার কথা আমরা বলতে পারি না। তবে যেটা বোঝা যাচ্ছে, আমাদের সরকার পরিস্থিতি যেকোনো পন্থায়ই আরও ভালোভাবে সামাল দিতে পারতো।’

রাখাইনে সংবাদ সংগ্রহের যুক্ত থাকা রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় আইন ভাঙার দায়ে কারাদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমার। এ নিয়েও কথা বলেন সু চি।

তার দাবি, এই মামলাটির সঙ্গো বাকস্বাধীনতার কোনো সম্পর্ক নেই। সাংবাদিক হওয়ার কারণে ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ও-কে সাজা দেওয়া হয়নি বলেও দাবি তার।

যদিও রয়টার্স বলছে, রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত নির্যাতন, গণহত্যার ছবি তোলা এবং সংবাদ প্রকাশ করায় দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে সাজা দিয়েছে মিয়ানমার সরকার।

মিয়ানমারের নেত্রী বলেন, ‘আমার আশ্চর্য লাগে, অনেক লোক হয়তো রায়ের পুরো সারসংক্ষেপ পড়েই দেখেনি। রায়ের সঙ্গে বাকস্বাধীনতার কোনো সম্পর্ক নেই। এটার সঙ্গে সরকারি গোপনীয়তা আইনের সম্পর্ক রয়েছে।’

দায় অস্বীকার করার এমন আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলে সু চির যে উঁচু অবস্থান ছিল, সেখান থেকে তার পতন হয়। ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে নানাভাবে তার ভূমিকা সমালোচিত হয়ে আসছে। তবে এ নিয়ে যেন কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই মিয়ানমারের গণতন্ত্রের কথিত কর্ত্রীর।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ডেস্ক/এসডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.