Sylhet View 24 PRINT

দশ মিনিট কারফিউ তোলার হিম্মত দেখাক সরকার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-১০ ২০:১৩:১১

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ভারত এবং পুরো বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে কাশ্মীরকে। অবরুদ্ধ উপত্যকায় মানবিকতার এ চরম সংকটে সেখানকার পরিস্থিতি জানতে বুধবার শ্রীনগরে পৌঁছেছেন বিবিসির ভারতীয় প্রতিনিধি শুভজ্যোতি ঘোষ। কিন্তু প্রথম ২৪ ঘণ্টা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি।

অবশেষে বৃহস্পতিবার অল্প সময়ের জন্য তিনি কথা বলতে পেরেছিলেন লণ্ডনে সহকর্মীদের সঙ্গে। সেই কথোপকথনে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন তিনি- ‘শ্রীনগরে পা রাখার পর ২৪ ঘণ্টারও বেশি পেরিয়ে গেছে, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন মৃত্যু উপত্যকায় এসে পৌঁছেছি।

রাস্তাঘাটে একশ’ গজ পরপরই সেনা চৌকি আর কাঁটাতারের ব্যারিকেড। রাস্তায় যত না সাধারণ মানুষ, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি সেনা আর আধা সেনা।

মানুষের ছোট ছোট কিছু জটলা। আমার হাতে বিবিসির মাইক দেখেই তারা এগিয়ে আসছেন কথা বলতে। ৩৭০ ধারা এবং কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রাতারাতি বিলুপ্ত হওয়ার পর তারা কতটা ক্ষুব্ধ, সেটা তাদের চেহারাতেই স্পষ্ট।

কেউ কেউ তো বলছেন, ১০ মিনিটের জন্য কাশ্মীরে জারি করা কারফিউ তুলে নেয়ার হিম্মত দেখাক সরকার, তারপরই তারা দেখবে দলে দলে কত মানুষ রাস্তায় নামেন এর প্রতিবাদ জানাতে।

সরকারও সেটা নিশ্চয়ই জানে, তাই তো গোটা কাশ্মীর উপত্যকা এখন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে দেয়া হয়েছে। কেউ বলছেন, পার্লামেন্টে অমিত শাহ দাবি করেছেন যে কাশ্মীরের ৮০ শতাংশ মানুষ নাকি এটি সমর্থন করেন। যদি তাই হবে, সরকার কেন মাত্র ১০ মিনিটের জন্য কারফিউ তুলে দিচ্ছে না। কারফিউ তুলে নিক, তারপর তারা দেখতে পাবে কিভাবে মানুষ রাস্তায় নামেন প্রতিবাদ জানাতে।

কাশ্মীরে আমার এর আগেও আসা হয়েছে। বিভিন্ন ঘটনা-বিক্ষোভ-সংঘাতের খবর সংগ্রহ করতে। কিন্তু এরকম অবস্থা আমি এর আগে কখনও দেখিনি। এর সঙ্গে যেন আগের কোনো কিছুর তুলনা চলে না। কাশ্মীর এখন যেন এক মৃত্যুপুরী। রাস্তাঘাটে কোনো লোকজন নেই।

অনেকের বাড়িতেই খাবার ফুরিয়ে গেছে, রেশন ফুরিয়ে গেছে। কেনাকাটার জন্য তারা সাহস করে কেউ কেউ বেরোচ্ছেন, কিন্তু কিছু কেনার মতো কোনো দোকান খোলা নেই।

শ্রীনগরের যেসব জায়গায় আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে পুরো শহরজুড়ে একটা থমথমে পরিবেশ। চারিদিকে আতঙ্ক, ক্ষোভ।

রাজনীতিবিদদের প্রায় সবাই কারাগারে কিংবা গৃহবন্দি। গুপকার রোড, যেখানে থাকেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বা মেহবুবা মুফতির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিকরা, সেখানে কাউকে ঢুকতেই দেয়া হচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার সকালে আমরা বারবার চেষ্টা করেও সেদিকে যেতে পারিনি। ডাল লেকের ধারে গভর্নর হাউস, সেদিকেও যেতে দেয়া হচ্ছে না। গুজবের শহর হয়ে উঠেছে শ্রীনগর। নানা জায়গায় বিক্ষোভ চলছে বলে শোনা যাচ্ছে।

কিন্তু শ্রীনগরের কোথাও বিক্ষোভ আমাদের চোখে পড়েনি। একটা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে অনেক ট্যাক্সি চালক বসে ছিলেন। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা বললেন, এখানে কি করছেন। বেরামিতে যান। ওখানে দশ হাজার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। লোকজন পথে নেমে বিক্ষোভ করছে।

কিন্তু এগুলো সব শোনা কথা, সত্যিই এরকম কিছু ঘটছে কিনা, তা যাচাই করার কোনো উপায় নেই। মানুষ এখানে ভীষণ ক্ষুব্ধ, ভীষণ হতাশ। তারা হাসপাতালে যেতে পারছে না। অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারছেন না। সব জায়গায় গিজগিজ করছে সেনা। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ। ইন্টারনেট বন্ধ। ল্যান্ডলাইনও কাজ করছে না।

এদের কেউ কেউ আমাদের আর্জি জানালেন, দয়া করে কাশ্মীরের এ ছবিটা গোটা পৃথিবীকে জানান। একটা বিষয় পরিষ্কার। যেরকম বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে, তার কারণে কেউ এখন রাস্তায়

নেমে বিক্ষোভ করতে পারছেন না। কিন্তু পরে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে, সেটা বলা মুশকিল। এখানকার কোনো নিউজ পোর্টাল রোববারের পর আর আপডেট করা হয়নি, কারণ ইন্টারনেট বন্ধ।

সৌজন্যে : যুগান্তর

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১০ আগস্ট ২০১৯/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.