আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

কাশ্মীরে যেসব হত্যার দায় কেউ নেবে না

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-২১ ১৯:৪৩:১০

সিলেটভিউ ডেস্ক :: মুসলমান অধ্যুষিত কাশ্মীরে শুক্রবার জুমার কিছু পরে রফিক শাঙ্গুর স্ত্রী মারা গেছেন। তখন তার বাড়ির জানালা গুঁড়িয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ভেতরে ঢুকে পুরো কক্ষ ভরে যায়।

রাজ্যটিতে এখন যে কোনো বেসামরিক লোকের মৃত্যুর দায় অস্বীকার করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। হিমালয় অঞ্চলটিতে গত দুই সপ্তাহে ভারতীয় সরকারের চাপিয়ে দেয়া অচলাবস্থার সময় এসব মৃত্যু ঘটেছে।

কাজেই স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য কারা দায়ী, সেটা খোঁজ করা রফিকের জন্য ব্যর্থ চেষ্টাই হবে। তিনি বলেন, এই মৃত্যুর দায় নিতে পুলিশ বাহিনী প্রস্তুত না। আমরা জবাব চাই, কিন্তু জানি না, কোথায় ন্যায়বিচার চাইবো।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া সাক্ষাতকারে ৯ আগস্টের বিকালের পরে সেই ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন এই কাশ্মীরি।
যখন এলোপাতাড়ি কাঁদানে গ্যাসের শেল এসে ঘরের ভেতরে আঘাত হানছে, তখন তার স্ত্রী ফাহমিদা দুই সন্তানকে পড়াচ্ছিলেন। ভূস্বর্গ বলে খ্যাত উপত্যাকাটির সবচেয়ে বড় শহর শ্রীনগরে তার বাড়ি।

রফিক সাঙ্গু বলেন, বাড়ির কাছেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর হালকা সংঘাত হয়েছিল। পুলিশ তখন আবাসিক ভবনগুলোতে কাঁদানে গ্যাস ও পেপার শেল নিক্ষেপ করে।

কাশ্মীরের সাংবিধানিক বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নেয়ার চার দিন পর এই সংঘর্ষ ঘটে। স্থানীয়রা যাতে বিক্ষোভে নামতে না পারেন, সেজন্য উপত্যকাটিতে কয়েক হাজার অতিরিক্ত সেনা সদস্য মোতায়েন করে ভারতীয় মোদি সরকার।

রফিক বলেন, ধোঁয়ার ঘনত্ব এতই বেশি ছিল যে কক্ষের ভেতরে আমরা একে অপরকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। ক্যানিস্টার বিস্ফোরিত হওয়ার সময় সেখানে তিনটি বিকট শব্দ হয়।

‌‘কক্ষ থেকে সন্তানদের বের করে নিই আমরা। কিন্তু পালাতে চেষ্টা করার সময় ফাহমিদা পড়ে যায়। যখন তাকে রুম থেকে বের করে নিই, তখন সে ছিল অচেতন। তার মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছিল।’

রফিক বলেন, মোটরসাইকেলে করে ফাহমিদাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু চিকিৎসক তাকে বাঁচাতে পারেননি।

পরবর্তী সময়ে মেডিকেল প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নিঃশ্বাসের সঙ্গে টিয়ার শেল থেকে বিষাক্ত গ্যাস তার ফুসফুসে ঢুকে এই মৃত্যু ঘটেছে।

কাশ্মীরে অচলাবস্থা আরোপের পর সেখান থেকে কোনো খবর প্রকাশ হতে দিচ্ছে না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটিতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন ছাড়াও টেলিফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেটসহ সব ধরনের সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

যদিও বর্তমানে কিছু ল্যান্ডফোনের সংযোগ পুনর্বহাল করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, অচলাবস্থা চলার সময় সেখানে কেউ নিহত হয়েছে বলে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। কেবল আট ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

কিন্তু বিভিন্ন হাসপাতালের সূত্র বলছে, শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। যাদের অনেকের শরীরে আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষত দেখা গেছে।

হাসপাতালে গেলে আটক হওয়ার ভয়ে বহু লোক বাসায়ও চিকিৎসা নিয়েছেন।

এছাড়াও দুই ব্যক্তির স্বজনের সঙ্গে কথা বলেছে এএফপি, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন।

নিহতদের একজন ১৫ বছর বয়সী উসিয়াব আহমাদ। গত ৫ আগস্ট সে নদীতে ডুবে মারা গেছে। তার পরিবার জানায়, পুলিশ তাজা গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে যে নদীর তীরে নিয়ে যাচ্ছিল, সেটিতেই ডুবে মারা গেছে উসিয়াব।

তার একজন স্বজন জানায়, পাঁচঘণ্টা পর পানি থেকে তার লাশ তোলা হয়। তার জানাজায়ও পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আরও বড় বিক্ষোভের আশঙ্কায় তার মরদেহ কেড়ে নিতে চেয়েছে।

শনিবার শ্রীনগরের মূলকেন্দ্রে বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ আইয়ুব খান। তখন একটি ছোট্ট বিক্ষোভকারীদের দলকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

৬২ বছর বয়সী এই কাঠ ব্যবসায়ীর সামনে দুটি শেল পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাস্তায় পড়ে যান, তার মুখ থেকে ফেনা বের হতে শুরু করে।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তিন কন্যার এই বাবা মারা যান। কিন্তু পুলিশ জোর করে তার মরদেহ ছিনিয়ে নেয়।

পরবর্তীতে সময়ে তার জানাজায় কেবল ১০ স্বজনকে অংশ নিতে অনুমতি দেয়া হয়। তার ছোট ভাই শাবির আহমাদ খান বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা হুমকি দিয়েছেন, যদি আমরা গণমাধ্যমের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলি কিংবা বিক্ষোভের চেষ্টা করি, তবে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হবে।

তিনি বলেন, কবরে লাশ দাফনের সময়ও চার পুলিশ আমাদের পাহারা দেয়।

মৃত্যুসনদের জন্য বারবার হাসপাতালে গেলেও পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকরা বলেন, এই সনদ না দিতে পুলিশ তাদের নির্দেশ দিয়েছে।

শাবির আহমাদ বলেন, তার এই মৃত্যুর ঘটনা সরকারিভাবে নথিভুক্তও করা হয়নি। কিন্তু আমাদের কাছে, তিনি শহীদ। ভারতীয় নৃশংসতার আরেকটি উদহারণ হচ্ছে এই হত্যাকাণ্ড।

সৌজন্যে : যুগান্তর

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২১ আগস্ট ২০১৯/জিএসি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন