আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

হঠাৎ সুইডিশ পুলিশ পেছন থেকে ধাওয়া করেছে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-১৬ ১৬:১২:১১

সিলেটভিউ ডেস্ক :: শুধু একটি জিনিস বন্ধ করতে কত কিছু ভাংচুর করতে হচ্ছ। শুধু একটি জিনিস বন্ধ করতে কত কিছু বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। শুধু একটি জিনিস বন্ধ করতে পুরোদেশ অচল হতে চলেছে। কিন্তু সেই জিনিসটাই বন্ধ হচ্ছে না, হবে না, যতদিন না দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। আর কিছু বন্ধ করার দরকার নেই, শুধু নিজেকে শুধরালেই হবে। সব ঝামেলা, খারাপ কাজ বা খুনের মূলে রয়েছে জড়িত ‘অন্যায়।’

অন্যায় তুমি কেমন আছো? তুমি কোত্থেকে এসেছ? কিভাবে এসেছো? কী উদ্দেশ্য তোমার? তোমার শুরু এবং শেষ কোথায়? বড় জানতে ইচ্ছে করছে। ”আমি নদী নই যে বলবো, হিমালয় থেকে জন্ম নিয়ে ঘুরে ফিরে সাগরে গিয়ে মিলেছি। তবে নদীর সঙ্গে আমার গঠনতান্ত্রিক কিছুটা মিল রয়েছে। আমার জন্ম হয় মানব জাতির কর্মে, আর শেষ হয় তার প্রতিফলনে। নদী যেমন একে বেকে শাখা প্রশাখার মধ্য দিয়ে বয়ে চলে আমিও তেমনি করে বয়ে চলি মানুষের চরিত্রের মধ্য দিয়ে।”

কর্মই কি তোমার উৎপত্তির উৎস? হ্যাঁ। তাহলে কর্ম করা বন্ধ করে দিলেই আমরা সমাধান পেয়ে যাব? না, সব কর্ম বন্ধ করলে তো পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে। তাহলে কী করতে হবে? কু-কর্ম বন্ধ করতে হবে। কিন্তু বুঝবো কী করে কোনটা কু-কর্ম আর কোনটা কু-কর্ম নয়? অন্যায় হেসে দিল। বললাম, তুমি হাসছো কেন? অন্যায় বললো, দেখ আমি তো কর্মের ফল, আমাকে জিজ্ঞেস না করে তুমি কর্মকেই জিজ্ঞেস কর, সে তোমাকে সাহায্য করবে।

চিন্তা করতে করতে গাড়ি চালাচ্ছি। হঠাৎ পুলিশ পেছন থেকে ধাওয়া করেছে। কী ব্যাপার! গাড়ি স্লো মোশনে করে এক্সিট নিয়ে মেইন রোড থেকে বেরিয়ে গেলাম। রাস্তার ধারে গাড়ি থামাতেই পুলিশের গাড়ি পিছনে এসে ড্রাইভার লাইসেন্স দেখতে চাইলো। মানিব্যাগ থেকে লাইসেন্স বের করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার আমাকে চেক করছো কেন? পুলিশ বললো “তুমি স্পিড লিমিট অমান্য করেছো। রাস্তার লিমিট ৭০ কিলোমিটার। তুমি ৮০ কিলোমিটার গতিতে চালিয়েছো।”

অতীতে এমনটি ভুল হয়নি এবং অন্য কোনো দোষত্রুটি ধরা পড়েনি। এ কারণে কোনো সমস্যা ছাড়াই ছাড় পেলাম। এখন কর্মকে জিজ্ঞেস করলাম “ব্যাপার কী?” কর্ম বললো “গাড়ি তো তুমি চালাচ্ছো, তুমিই জানো কত গতিতে চালানোর নিয়ম রয়েছে। আমাকে জিজ্ঞেস না করে তোমার বিবেককে জিজ্ঞেস কর।”

বিবেক কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বললো, “দেখো নানা চিন্তায় ব্যস্ত। তারপর ভাবলাম এমন কী হবে একটু জোরে চালালে? এর আগেও তো মাঝেমধ্যে স্পিড লিমিট ভঙ্গ করেছি। ধরা পড়িনি তাই ভাবলাম অসুবিধা হবে না। কিন্তু পুলিশ হঠাৎ ধরবে কে জানতো তা?” আমি বললাম “ওহ, তাহলে ধরা না পড়লে তুমি তাহলে এভাবেই কু-কর্ম করতে থাকতে?” বিবেক বললো “তাই তো করে আসছি সেই ছোটবেলা থেকে। এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। তারপর বেশ এডজাস্ট করতেও পাকা, সব মিলে ভালোই চলছে।”

পাঠক, এই হচ্ছে সত্যিকার বাস্তব জীবন। আমরা সারাদিনই যদি চিল্লাচিল্লি বা হৈচৈ করি দেশের নানা ধরনের অরাজকতা নিয়ে, খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না। যতদিন পর্যন্ত না নিজেরা যার যার জায়গা থেকে শুধরানোর চেষ্টা করি।

বর্তমান দেশের পরিস্থিতির জন্য শুধু সরকার বা বিরোধী দলকেই দোষারোপ করলে চলবে না। আমাদেরকেও সংযত হতে হবে। আমাদের প্রতিদিনের চিন্তা, চেতনা, কর্মের ফলাফলের ওপর নজর রাখতে হবে। কী করলাম সারাদিন এবং কী এর প্রতিফলন হলো, অন্যভাবে করলে কী হতো ইত্যাদি।

আমরা যদি সত্যিকারে সবাই (ছোটবড়, শিক্ষিত, অশিক্ষিত বলে কথা নেই) প্রতিনিয়ত আমাদের আচরণের দিকনির্দেশনার ওপর গুরুত্ব দেই তাহলে সমাজের দুর্বল দিকগুলোকে সবল করতে সক্ষম হতে পারি। আমাদের চরিত্রে একটি মুদ্রাদোষ রয়েছে। তা হলো পরনিন্দা আর পরচর্চা করা। অথচ সেই সময়টুকু যদি আমরা নিজেদের নিয়ে ভাবি আমার বিশ্বাস আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবো। তাই মনে করি সারাজাহানের পরিবর্তনের জন্য উঠেপড়ে না লেগে নিজেদেরকেই শুধরাতে শুরু করি। এই মুহূর্তে বেশ মনে পড়ছে রবি ঠাকুরের সেই জুতা আবিষ্কার কবিতার কথা “বলিতে পারি করিলে অনুমতি, সহজে যাহে মানস হবে সিদ্ধি। নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।”


সৌজন্যে : যুগান্তর
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৬ অক্টোবর ২০১৯/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন