Sylhet View 24 PRINT

বাবরি মসজিদ ভাঙায় যে প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-০৯ ১৭:৫২:০৫

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরে অযোধ্যায় কয়েক লাখ উগ্র হিন্দুত্ববাদী জড়ো হয়। সাড়ে চারশো বছরের বেশি পুরনো ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে তারা।

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ার ভারতের কয়েকটি রাজ্যে তাৎক্ষণিকভাবে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়।

সেই দাঙ্গার প্রভাব পড়েছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশেও। তবে সে সময়গুলোতে সৌহার্দ-সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল বাংলাদেশিরা। যা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

ভারতে যখন বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলল উগ্র হিন্দুত্ববাদী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নিন্দা জানিয়েছিল বাংলাদেশের সব কয়টি রাজনৈতিক দল। মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকেও বিষয়টির নিন্দা করা হয়।

রোববার বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার পর ঐ ঘটনার প্রভাব বাংলাদেশে পড়ে পরদিন ৭ই ডিসেম্বর সোমবার। সেদিন থেকে পরের কয়েকটি দিন বেশ ঘটনাবহুল ছিল বাংলাদেশের জন্য।

ওই কয়দিন বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় আতঙ্কের মধ্যে থাকলেও বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে বাংলাদেশ।

কোনোরকম সাম্প্রদায়িক হামলার মতো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে সতর্ক ছিল বাংলাদেশের মুসলমানরা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে মিছিল করা হয় রাজধানীসহ সারা দেশে।

ওই সময় হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘর পাহারা দিয়েছিল এদেশের মুসলমানরা।

বিশেষ করে রাতদিন না ঘুমিয়ে বিরতিহীন পুরনো ঢাকায় হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দির পাহারা দিয়েছেন বহু মানুষ।

মন্দিরসহ হিন্দুদের সহায়-সম্পদ ও জানমালের নিরাপত্তা দিতে ও কোনোরকম সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে মাইকিং করা হয়েছিল দেশজুড়ে।

তখনকার ক্ষমতাসীন বিএনপি, বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কর্মীরা এলাকার মানুষদের সঙ্গে নিয়ে পালা করে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দির পাহারা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের এক লেখায় পাওয়া যায়, সে সময়কার যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকা তার কর্মীদের নিয়ে দিনরাত পাহারার কাজ করেছেন।

ওই সময় সদ্য প্রয়াত অবিভক্ত ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছিল ভূয়োসী প্রশংসার যোগ্য।

সাদেক হোসেন খোকার প্রতিরোধ ও দৃঢ় নেতৃত্ব পুরান ঢাকায় দাঙ্গা রুখে দেয়। তার বলিষ্ঠ পদক্ষেপে পুরান ঢাকায় ভারতের সেই ঘটনার আঁচ তেমন একটা পড়েনি। এমন ভূমিকার পরই পুরান ঢাকাবাসীর আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেন খোকা।

তাদের হৃদয়ে স্থান করে নেন তিনি এবং একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন।

সেই জনপ্রিয়তার প্রমাণ মেলে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে। খোকা ঢাকা-৭ আসন (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) থেকে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন।

এ সময়ে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজার রাখতে মসজিদে মসজিদে খুতবাও দেয়া হয়। হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘরে যেন কোনোরকম আক্রমণ না করা হয় সেবিষয়ে সচেতন করা হয়।

ইসলাম ধর্মীয় ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়।

বাবরি মসজিদ ভাঙার পরদিন থেকে তাঁতিবাজারে মন্দির পাহাড়ার দলে ছিলেন মিন্টু নামের পুরান ঢাকাবাসী। তিনি জানিয়েছেন নিজেদের মধ্যে তারা শিফট ভাগ করে নিয়েছিলেন।

মিন্টু বলেন, আমাদের মহল্লার মুসলিম তরুণদের একাট্টা করলাম আমি। তাদের ছয় ঘণ্টার আর বারো ঘণ্টার দুই রকম শিফট ভাগ করলাম । যে যেমনে সময় দিতে পারত আমরা লাঠি হাতে নিয়ে পাহাড়া দিতাম। শেষ দিকে দেখা গেল হিন্দুদের মন্দির রক্ষায় পুরান ঢাকার মুসলিম নারীরাও মাঠে নেমেছে। তারাও আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

দশদিন একটানা এভাবেই পাহাড়া দিয়েছিলেন মিন্টু ও তার বন্ধুরা।

প্রসঙ্গত, আজ শনিবার ভারতের আদালতে গড়ালো বহুল প্রতীক্ষিত বাবরি মসজিদের রায়। উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার বিরোধীপূর্ণ বাবরি মসজিদের জমি মন্দির নির্মাণে হিন্দুদের দিতে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। রামের জন্মভূমি ট্রাস্ট এখন জমিটির অধিকারী হবে।

আর নতুন একটি মসজিদ নির্মাণে মুসলমান সম্প্রদায়কে শহরেই আলাদা একখণ্ড পাঁচ একরের জমি বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শনিবার ভারতের প্রধান বিচারক রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানক বেঞ্চ সর্বসম্মতিতে এ রায় দিয়েছেন।


সৌজন্যে : যুগান্তর
সিলেটভিউ২৪ডটকম/৯ নভেম্বর ২০১৯/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.