আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন মাহাথির মোহাম্মদ?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৩ ১৯:২১:৫২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক জোট পাকাতান হারাপানের নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করায় দেশটিতে নতুন সরকার গঠনের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। পাকাতান হারাপান জোটে ভাঙনের আশঙ্কা জোরালো হওয়ায় বিরোধী দল উমনো অ্যান্ড পার্টি ইসলাম সে-মালয়েশিয়ার (পিএএস) নেতৃত্বে শিগগিরই নতুন সরকার গঠিত হতে পারে বলে দেশটিতে এখন আলোচনা তুঙ্গে।

রোববার ক্ষমতাসীন পাকাতান হারাপান জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করায় নতুন সরকার গঠনের এ গুঞ্জনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। স্ট্রেইট টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল পার্টি প্রিবুমি বারসাতু মালয়েশিয়ার (পিপিবিএম) এমপি ও নেতারা রোববার সকালে পেটালিং জায়ায় দলটির প্রধান কার্যালয়ে ছয় ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, দলের প্রেসিডেন্ট মুহিদ্দিন ইয়াসিন, দলটির ছাত্র অঙ্গ সংগঠনের প্রধান সৈয়দ সিদ্দিক সৈয়দ আব্দুল রহমান ও অন্যান্য দলের সাংসদদেরও রোববার ওই কার্যালয়ে দেখা গেছে।

এদিকে মাহাথিরের রাজনৈতিক দল বারসাতু মালয়েশিয়ার কিয়াদিলান রাকিয়াত শাখার ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ও দেশটির বর্তমান অর্থমন্ত্রী দাতুক সেরি আজমিন আলী ও তার ঘনিষ্ঠ প্রায় এক ডজন এমপি পাশের একটি হোটেলে আলাদা বৈঠক করেন।

চারদলীয় ক্ষমতাসীন পাকাতান হারাপান জোটে বহু বর্ণের রাজনৈতিক দল পিকেআর, চীনা ধাঁচের ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন পার্টি (ডিএপি) ও ডা. মাহাথিরের মালয়ভিত্তিক পিপিবিএম ও মডারেট ইসলাসিম দল আমানাহ নেগারা রয়েছে।

দলের একটি সূত্র স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেছে, আজমিন ঘনিষ্ঠরা পরিকল্পনা করছেন পিপিবিএম ছেড়ে পিকেআরের সঙ্গে জোট গড়ার। সংসদে এই দলটির সর্বোচ্চ ৫০ জন এমপি রয়েছেন। তারা বলছেন, সংসদে মাত্র ২৬ এমপি রয়েছেন পিপিবিএমের। এই দলটিও পাকাতান হারাপান জোট ছাড়তে পারে।

মাহাথির মোহাম্মদের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রিত্ব নিতে যাচ্ছেন বহু বর্ণের রাজনৈতিক দল পিকেআরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার ইব্রাহীম; এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও তা নাকচ করে দিয়েছেন পিকেআর ঘনিষ্ঠ একজন এমপি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব পাওয়ার জন্য আনোয়ার ইব্রাহীমের পাশে পর্যাপ্তসংখ্যক এমপি নেই।

মালয়েশিয়ার ২২২ আসনের পার্লামেন্টে সরকার গঠনের জন্য নতুন জোটকে কমপক্ষে ১১২ এমপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার। কিন্তু গুঞ্জন তীব্র হয়েছে যে পিপিবিএম এবং আজমিনের নেতৃত্বাধীন পিকেআরের একটি অংশ জোট গড়লে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নতুন সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তার আগে উমনো নেতৃত্বাধীন জোট বারিসান ন্যাশনাল (বিএন) ও পিএএসের এমপিদেরও সেই জোটে টানতে হবে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ের পর পাকাতান হারাপান জোটের প্রধান হিসেবে ওই বছরের ১০ মে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন মাহাথির মোহাম্মদ। বারিসান ন্যাশনাল দলের নেতা হিসেবে টানা প্রায় ২২ বছর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৩ সালে ক্ষমতা থেকে সরে যান তিনি।

অন্যদিকে শনিবার রাতেও সংবাদ সম্মেলনে করেন মাহাথির মোহাম্মদ। এতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়া ও আনোয়ার ইব্রাহিমকে সুযোগ দেয়ার ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা এখন আমার ওপর নির্ভর করছে। সংবাদ সম্মেলন থেকে যখন সবাই চলে যান তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী ও আনোয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী ড. উয়ান আজিজাহ উয়ান ইসমাইল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইউনিভার্সিটি সেইনস মালয়েশিয়ার প্রফেসর ড. সিভামুরুগান পান্ডিয়ান বলেন, শুক্রবার রাতে যে বৈঠক হয়েছে তাতে নির্ধারণ করার কথা ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী মাহাথির কবে, কোন তারিখ ক্ষমতা হস্তান্তর করছেন আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে। কিন্তু তা ঘটেনি। ঘটেছে অন্য ঘটনা। তিনি বলেন, ওই বৈঠকে উপস্থিত নেতা ও এমপিরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদের প্রতিই সমর্থন দিয়েছেন।

পাকাতান হারাপানের কর্মীরা চাচ্ছেন ড. মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় থেকে তার মেয়াদ পূর্ণ করুক। যদি তাই হয় তাহলে আনোয়ার ইব্রাহিমের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যেতে পারে। মাহাথির বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকবেন না তিনি। আনোয়ার ইব্রাহিমের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেই বিদায় নেবেন।

সম্প্রতি তিনি বলেছেন, আগামী মে মাসে দেশটিতে অনুষ্ঠেয় অ্যাপেকের শীর্ষ সম্মেলন শেষে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাবেন। কিন্তু যারা আশা করছিলেন এ বছর যত তাড়াতাড়ি হোক, মে মাস নাগাদ দেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন আনোয়ার ইব্রাহিম, তাদের পক্ষে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া কঠিন। তারা হয়তো আবেগ দিয়ে এর প্রতিশোধ নিতে চেষ্টা করবেন।

বিশ্লেষক সিভামুরুগান পান্ডিয়ানের মতে, নয় মাসের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যদি জোট সরকারের মধ্যে অভ্যন্তরীণ লড়াই ছাড়াও হুমকি, আস্থায় সঙ্কট অব্যাহত থাকে; তাহলে তা ক্ষমতা হস্তান্তরের চেয়ে বড় কিছু হয়ে উঠবে। যদি পাকাতান জোটের মধ্যে অভ্যন্তরীণ লড়াই অব্যাহত থাকে এবং জোটের সদস্যদের মধ্যে বিভক্তি বিস্তৃত হয় তাহলে ক্ষমতাসীন সরকার ভেঙে পড়তে পারে।

সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন