আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

দাঙ্গাবাজদের লাত্থি-আঘাতের পর সুস্থ সন্তান জন্ম দিলেন শাবানা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৮ ১৯:৪৪:৩২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: উগ্র হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজরা যখন তার পেটে কষে লাথি মারল, যখন তাকে আঘাত করতে থাকল নির্বিচারে, তখন অন্তঃসত্ত্বা শাবানা পারভীন (৩০) ভেবেছিলেন, তিনি বোধ হয় আর বাঁচবেন না, দুনিয়ার আলো দেখতে পারবে না তার গর্ভের সন্তানও। কিন্তু কথায় যে আছে, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’, শাবানা ও তার পরিবারের সদস্যরা যেন সেই কথারই প্রতিফলন দেখলেন। দাঙ্গাবাজদের বর্বরোচিত লাত্থি-আঘাতের পরও তিনি জন্ম দিয়েছেন সুস্থ ও সবল সন্তানের। যেন তাদের ঘর আলো করে এলো ‘অলৌকিক’ শিশু।

গত সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে দিল্লির জাফরাবাদ, মৌজপুর, বাবারপুর, যমুনা বিহার, ভজনপুরা, চাঁদবাগ, শিববিহার যখন হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজদের আগুনে জ্বলছিল, তখন কারাবাল নগরে নিজেদের ঘরে স্বামী, দুই সন্তান, শাশুড়িকে নিয়ে চুপ করে বসেছিলেন শাবানা।

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মানসিক চাপ যে কী বিপজ্জনক, তা জানলেও সেই চাপ সামলাতে পারছিলেন না। তাই বারবার কেবল আল্লাহকে ডাকছিলেন। এক পর্যায়ে হই-হই রব তুলে দাঙ্গাবাজরা দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে নিরীহ শাবানাদের ঘরে। ঢুকেই তারা শাবানার স্বামীকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এতে বাধা দিতে গেলে উন্মত্ত দাঙ্গাবাজরা র্ববরোচিত কায়দায় কষে লাত্থি মারে অন্তঃসত্ত্বা শাবানার পেটে। তার গগণবিদারী চিৎকারেও মন গলেনি সন্ত্রাসীদের। একের পর লাত্থি পড়তে থাকে শাবানার পেটে-পিঠে।

পুত্রবধূকে এমন মারধরে দাঙ্গাবাজদের পায়ে পড়েন শাশুড়ি নাসিমা। সন্ত্রাসীরা মারতে থাকে বৃদ্ধাকেও। সবাইকে পিটিয়ে জখম করে ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে তারা। এক পর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ঘরে। এই অবস্থায় কোনোমতে ঘর থেকে বেরিয়ে নাসিমা দু’চারজন পড়শীকে নিয়ে পুত্রবধূ শাবানাকে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সুস্থ ও সবল সন্তানের জন্ম দেন শাবানা।

চিকিৎসকরা জানান, শাবানা এবং সদ্যোজাত দু’জনেই সুস্থ। কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রেখেই ছেড়ে দেয়া হবে মা ও সন্তানকে।

তবে সেই রাতের তাণ্ডবলীলা মনে পড়লে এখনো শিউরে ওঠেন নাসিমা। তিনি বলেন, ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে পেটায়, আমার অন্তঃসত্ত্বা বৌমার পেটে লাত্থি মারে। আমি তাদের রক্ষায় এগিয়ে গেলে এই বৃদ্ধার শরীরেও তারা আঘাত করে। সন্ত্রাসীদের উন্মত্ততা দেখে ভেবেছিলাম, সেই রাতই শেষরাত আমাদের। নিজের চোখের সামনে ঘর পুড়তে দেখলাম, সাজানো সংসার ছারখার হতে দেখলাম। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে দাঙ্গাবাজদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমার বৌমাকে নিয়ে হাসপাতালে পালিয়ে আসি। দুঃসময়ে আল্লাহ আমাদের ঘরে এই উপহার দিয়েছেন। আমরা তার শুকরিয়া করি।

তবে হাসপাতাল থেকে শাবানাকে ছাড়পত্র দিলে কোথায় গিয়ে মাথা গুঁজবেন সেই চিন্তা নাসিমার কপালের ভাঁজে। তিনি বলেন, ওরা সব শেষ করে দিয়েছে। কিচ্ছু আস্ত রাখেনি। শুধু ছাই আর ছাই। নাকে ভেসে আসছে পোড়া গন্ধ। সাজানো সংসারের এমন দশা দেখে অশ্রু সংবরণ করতে পারি না। কী করবো আর, এখন কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠতে হবে, বাঁচার লড়াই নতুন করে শুরু করতে হবে।

শাবানার মতো আরেক অন্তঃসত্ত্বা দিল্লির চাঁদবাগের বাসিন্দা রুবিনা বানুও শিকার হয়েছেন হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজদের আক্রমণের। ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি স্কুল থেকে ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বেধড়ক লাঠিপেটার শিকার হন দাঙ্গাবাজদের হাতে। এতে পুলিশের কতিপয় পুরুষ সদস্যও জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।

বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী (সিএএ) আইনকে কেন্দ্র করে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিল্লির উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন এলাকায় দাঙ্গা-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সিএএবিরোধীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভণ্ডুল করতে রড-লাঠি-পেট্রল বোমা হাতে নামে ক্ষমতাসীন বিজেপির মদতপুষ্ট দাঙ্গাবাজরা। তারা পুলিশের সামনেই বেছে বেছে মুসলিমদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-মসজিদসহ অসংখ্য বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়। গুলি করে এবং পিটিয়ে মারে অনেককে। এই দাঙ্গায় এখন পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও তিন শতাধিক মানুষ। এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুর, বাবরপুর, জাফরাবাদের মতো বেশ কয়েকটি এলাকায়।

সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন