Sylhet View 24 PRINT

‘করোনা আগেই ক্ষুধায় মরবো আমরা’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-২৫ ১১:৩৬:০৮

সিলেটভিউ  ডেস্ক :: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়া থামাতে লকডাউন শুরু করেছে ভারত। লোকজনকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু দেশটির দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল বহু লোকের জন্য এটি কোনো বিকল্প নয়।

মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই দিন মধ্যরাত থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৩ সপ্তাহ ধরে দেশ লকডাউনে থাকবে বলে ঘোষণা করেছেন।

এই ঘোষণার পর দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল লোকজন কীভাবে সামনের দিনগুলোর মোকাবেলা করবে তার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিবিসির সাংবাদিক বিকাশ পান্ডে।

এমনিতে রাজধানী দিল্লির শহরতলী অঞ্চল নয়ডার লেবার চক কাজের খোঁজে থাকা নির্মাণ শ্রমিকে ভরা থাকে, ভবন নির্মার্তারা এই জায়গায় এসে শ্রমিক ভাড়া করে নিয়ে যান। কিন্তু জনতা কারফিউ চলাকালে রোববার সকালে তিনি যখন এই এলাকায় আসেন তখন এলাকাটি ফাঁকা, পুরোপুরি শান্ত, চুপচাপ। শুধু পাখির কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে যা এলাকাটিতে কল্পনাও করা যায় না বলে মন্তব্য তার।

এদিক ওদিক তাকিয়ে এক কোনো কয়েকজন লোককে দেখতে পান তিনি। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, তারা জনতা কারফিউ মেনে চলছে কিনা।

সেখানে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বানডা জেলা থেকে কাজের খোঁজে আসা রমেশ কুমার জানান, তাদের ভাড়া নেওয়ার জন্য এখানে কেউ নাও আসতে পারেন এটা জানেন তিনি, কিন্তু তারপরও কোনো কাজ পাওয়া যায় কিনা দেখতে এসেছেন।

রমেশ বলেন, “প্রতিদিন আমি ৬০০ রুপি কামাই করি। ঘরে খাওয়ার লোক পাঁচ জন। কয়েকদিনের মধ্যেই ঘরে যে খাবার আছে শেষ হয়ে যাবে। করোনাভাইরাসের ভয় আমারও আছে, কিন্তু আমরা সন্তানরা না খেয়ে আছে, এটি সহ্য করতে পারবো না আমি।”

ভারতজুড়ে কোটি কোটি দৈনিক মজুরের এই একই অবস্থা।তিন সপ্তাহ লকডাউন চলার সময় তাদের আয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ রকম অনেক পরিবারের মজুদ খাবার শেষ হয়ে যেতে পারে।

বুধবার নাগাদ ভারতে করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা ৫০০ জনেরও বেশি এবং মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০ জনের, এমনটিই জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

উত্তর প্রদেশ, কেরালা ও রাজধানী দিল্লিসহ বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার রমেশের মতো শ্রমিকদের একাউন্টে সরাসরি অর্থ পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কেন্দ্রের মোদী সরকারও লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দৈনিক মজুরি নির্ভর লোকজনকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

কিন্তু এসব অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা সঠিক লোকের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে জটিলতা আছে।

আন্তর্জাতিক লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) তথ্যানুযায়ী, ভারতের শ্রমিকদের অন্তত ৯০ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত, যাদের অনেকেই নিরাপত্তা রক্ষী, ক্লিনার, রিকশাচালক, হকার, মেথর ও গৃহকর্মী। 

তাদের অধিকাংশই পেনশনের আওতায় নেই, অসুস্থতাজনিত ছুটি, সবেতন ছুটি বা কোনো ধরনের ইন্স্যুরেন্সও নেই তাদের। অনেকের ব্যাংক একাউন্টও নেই, দৈনিক চাহিদা পূরণে নগদ টাকার ওপরই নির্ভর করেন তারা।

অনেকেই কাজের খোঁজে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়া অভিবাসী শ্রমিক। এর অর্থ যে রাজ্যে কাজ করছেন সেই রাজ্যের বাসিন্দা তারা নন। এমন অনেক লোক আছেন যারা সারা বছর ধরে কাজের খোঁজে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ঘোরেন, জনসংখ্যার ভাসমান এই অংশকে নিয়েও সমস্যা আছে।

উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব এগুলোকে অনেক বড় সমস্যা বলে স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “কোনো সরকারের কেউই এর আগে এমন সমস্যার মুখোমুখি হয়নি।

“পরিস্থিতি প্রতিদিনই পরিবর্তন হতে থাকায় সব সরকারকেই বজ্রের মতো দ্রুতগতিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বড় ধরনের সামাজিক রান্নাঘর চালু করে যাদের দরকার তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া দরকার। কে কোন রাজ্য থেকে এসেছে তার দিকে না তাকিয়ে হাতে হাতে টাকা অথবা চাল বা গম দেওয়া দরকার।

“সামাজিক সংক্রমণ ঠেকাতে লোকজনের এক শহর থেকে আরেক শহরে যাওয়া বন্ধ করতে হবে আমাদের, আর এটি করার একটি পথ হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সঙ্কটের সময় লোকজন তাদের গ্রামে গিয়ে জড়ো হচ্ছে।”

ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব ধরনের যাত্রী সেবা স্থগিত করেছে। কিন্তু ২৩ মার্চ এই স্থগিতাদেশ শুরু হওয়ার আগে লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিক প্রাদুর্ভাব কবলিত শহর দিল্লি, মুম্বাই, আহমেদাবাদ ছেড়ে তাদের গ্রামে চলে গেছে।

এভাবে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি উচ্চমাত্রায় বেড়েছে এবং বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, আগামী দুই সপ্তাহ ভারতের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে।

তবে সবাই নিজ নিজ গ্রামে চলে যেতে পারেননি। এলাহাবাদ শহরের রিকশাচলাক কিশান লাল তাদেরই একজন। আগের চারদিন তিনি কোনো কামাই করতে পারেননি বলে জানান।

“আমার পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য কামাই করা দরকার। আমি শুনেছি সরকার আমাদের টাকা দিবে। কিন্তু কখন কীভাবে দিবে তা জানি না,” বলেন তিনি।

তার বন্ধু আলী হাসান একটি দোকানে ক্লিনারের কাজ করেন, খাবার কেনার মতো কোনো টাকা নেই বলে জানান তিনি।

“দুই দিন আগে দোকান বন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু আমার টাকা পাই নাই। কখন দোকান খুলবে তাও জানিনা। আমি খুব ভয়ে আছি। আমার পরিবার আছে, তাদের খাওয়াবো কীভাবে?” প্রশ্ন তার।

দিল্লিতে ছোট একটি দোকানে লাচ্ছি বিক্রি করেন মোহাম্মদ সাবির। আসছে গ্রীষ্মের কথা মাথায় রেখে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য দুজন লোক রেখেছিলেন তিনি।

সাবির বলেন, “এখন আমি তাদের বেতন দিতে পারবো না। আমার কাছে টাকা নেই। গ্রামে থাকা পরিবার চাষাবাদ করে কিছু আয় করে, কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে এবার ফসলও নষ্ট হয়েছে; এখন তারা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

“আমি এতো অসহায়বোধ করছি! মনে হচ্ছে করোনাভাইরাসের আগে ক্ষুধাই আমাদের মতো অনেককে মেরে ফেলবে।”

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৫ মার্চ ২০২০/ডেস্ক/ মিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.