আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনায় কাঁদছে বিশ্ব

প্রায় ৯ লাখ আক্রান্ত, মৃত্যু ৪৫ হাজার, ইউরোপেই ৩৫ হাজার, ইতালি যুক্তরাষ্ট্র স্পেনের পর ফ্রান্সের পরিস্থিতিও ভয়াবহ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০২ ০০:৪৯:৫৭

সিলেটভিউ ডেস্ক :: মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের দোর্দ- প্রতাপে অসহায় বিশ্ব যেন কাঁদছে। কোনো কিছুতেই বাগ মানানো যাচ্ছে না। স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে শুরু করে তাবৎ সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ বন্ধ রেখে কারফিউ-লকডাউন পালন করেও কাজ হচ্ছে না। এক দেশ, দুই দেশ, দশ দেশ থেকে শুরু করে এ ভাইরাস এখন গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছে। বিজ্ঞানীরা আত্মরক্ষার নিশ্চিত কোনো ওষুধ বাজারে ছাড়তে না পারায় মানুষ চরম অসহায় অবস্থার মুখোমুখি। বিভীষিকা সামনে রেখে তাদের শুধুই ঘরবন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছে। অনবরত মৃত্যু আর ঘায়েল হতে থাকায় প্রতিটি দিন ও রাত হয়ে উঠেছে শোক আর আতঙ্কের। গতকাল সন্ধ্যায় পাওয়া ওয়ার্ল্ডোমিটার, আলজাজিরা, সিএনএনসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী ১২ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজারে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। ইউরোপে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার। ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের মৃত্যুসংখ্যাকে ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র ও স্পেন ছাড়িয়ে যাওয়ার পর এখন তা ছাড়িয়ে যায় ফ্রান্সও। এ দেশটিতে ১২ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪ শতাধিক মানুষ। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৯৫ হাজার ৯২৩ জন। এ ছাড়া ১২ ঘণ্টায় স্পেনে মারা গেছেন ৮৬৪ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজারের বেশি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন প্রায় ৮০০ মানুষ, মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার। এ ছাড়া এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে নতুন মৃত্যু ছিল ৫৬৩ এবং আক্রান্ত ৪ হাজার ৩২৪ জন, ইরানে নতুন মৃত্যু ১৩৮ ও আক্রান্ত ২ হাজার ৯৮৮ জন, জার্মানিতে নতুন মৃত্যু ৪৬ ও আক্রান্ত ২ হাজার ৭০০ জন, বেলজিয়ামে নতুন মৃত্যু ১২৩ ও আক্রান্ত ১ হাজার ১৮৯ জন, সুইজারল্যান্ডে নতুন মৃত্যু ২৮ ও আক্রান্ত ৫২৩ জন, ভারতে নতুন মৃত্যু ১০ ও আক্রান্ত ২৪০ জন, ইন্দোনেশিয়ায় নতুন মৃত্যু ২১ ও আক্রান্ত ১৪৯ জন। এ সময় পর্যন্ত চীনে নতুন মৃত্যু ছিল ৭ ও আক্রান্ত ৩৬ জন এবং রাশিয়ায় নতুন মৃত্যু ৭ ও আক্রান্ত ৪৪০ জন।

ইতালিতে কমছে সংক্রমণ : করোনার জেরে সর্বাধিক মৃত্যু দেখেছে ইতালি। কিন্তু গতকাল ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের প্রভাব কিছুটা কমেছে দেশটিতে, যা আশার আলো দেখাচ্ছে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে। অসামরিক সুরক্ষা পরিষেবার প্রধান অ্যানজেলো বরেলটি জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার দেখে বোঝা যাচ্ছে সংক্রমণের গতি কমেছে। মহামারী হওয়ার পর এই প্রথম শ্লথ হয়েছে সংক্রমণের গতি। মঙ্গলবার পর্যন্ত ১ হাজার ৫৯০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ডেপুটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী পিয়েরপাওলো সিলেরি জানিয়েছেন, গত সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। যদিও মৃত্যু অব্যাহত আছে। তবু সুস্থতার সংখ্যা আশাব্যঞ্জক।
৫ হাজার মার্কিন নৌসেনার মৃত্যুর হুঁশিয়ারি : মার্কিন বিমানবাহী রণতরী থিওডোর রুজভেল্টের ক্যাপ্টেন ব্রেট ক্রোজিয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, করোনাভাইরাসে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত বিমানবাহী এ রণতরীকে শিগগিরই খালি না করা হলে আমেরিকার নাবিকরা সব মারা যাবে। জাহাজে অন্তত ৫ হাজার নৌসেনা রয়েছে। উল্লেখ্য, প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থানরত জাহাজ থিওডোর রুজভেল্টে এক সপ্তাহ আগে বেশ কয়েকজনকে পরীক্ষার মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত করা হয়। এ সম্পর্কে চার পৃষ্ঠার চিঠিতে ক্যাপ্টেন ব্রেট ক্রোজিয়ার জাহাজের পরিস্থিতি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। পরমাণুচালিত ওই জাহাজটির আরও সেনাকে এরই মধ্যে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিমানবাহী এ যুদ্ধজাহাজে পর্যাপ্ত কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে রাখার সুবিধা নেই। বর্তমানে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে জাহাজে খুবই ধীরগতিতে প্রচেষ্টা চলছে এবং এভাবে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘এখনই যদি সঠিক সিদ্ধান্ত আমরা না নিতে পারি তাহলে আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সম্পদ আমাদের সেনাদের আমরা হারাব। কারণ জাহাজে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। নিউইয়র্কের হাসপাতালে ভাইরাসের বাসা : যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি প্রতিক্ষণ পাল্টাচ্ছে। মৃতের সংখ্যাটা চোখের পলকে পরিবর্তিত হচ্ছে। হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই। ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, নিউইয়র্কের কনি আইল্যান্ড হসপিটালের ড. মুহাম্মদ জামান বলেছেন, ‘হাসপাতাল ছেড়ে সবাইকে বাড়িতে থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে। কারও জ্বর, গলা ব্যথা হলে, বলা হচ্ছে হাসপাতালে না যেতে। এর কারণ, এ মুহূর্তে হাসপাতালগুলোয় বাসা বেঁধেছে করোনাভাইরাস। তাই যারা জ্বর, গলা ব্যথা নিয়ে যেতে চাইছেন হাসপাতালে তারা যদি আগে থেকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত না হয়ে থাকেন, হাসপাতালে গিয়ে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছেন তারা।’

মিয়ানমারেও করোনায় মৃত্যু : বিশ্বজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে প্রথম মৃত্যুর খবর দিয়েছেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে ইয়াঙ্গুনের ওয়েবাগি বিশেষায়িত হাসপাতালে কভিড-১৯-এর এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির বয়স ছিল ৬৯ বছর। মারা গেছেন সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে।

মিয়ানমারের সংবাদপত্র ইরাওয়াদ্দি জানায়, ওই ব্যক্তি নাসিকা গহ্বরের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য এক মাস অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন। ১৪ মার্চ তিনি দেশে ফিরে এসে ক্যান্সারের শেষ ধাপের নিবিড় পরিচর্যার জন্য ইয়াঙ্গুন জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ২৭ মার্চ তার দেহে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে তাকে ওই বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগে তিনি মারা যান। উল্লেখ্য, মিয়ানমারে গত সোমবার পর্যন্ত কভিড-১৯-এ আক্রান্ত ১৪ জন শনাক্ত হয়েছে, তার বেশির ভাগই বিদেশফেরত বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসায় হাত বাড়াল রাশিয়া : মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে দেশটির জন্য মাস্ক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে রাশিয়া। গতকাল মস্কোর একটি বিমানঘাঁটি থেকে বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা সরঞ্জাম ও মাস্ক নিয়ে রাশিয়ার একটি সামরিক বিমান যুক্তরাষ্ট্রের পথে রওনা দেয়। রয়টার্স জানায়, দুই দিন আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোনে যোগাযোগের পর এ সাহায্য পাঠানো হলো। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রাশিয়ার এ সাহায্য পাঠানোকে ট্রাম্পের অনেক সমালোচকই ভালো চোখে দেখছেন না। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পুতিনের কাছ থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিচ্ছেন। মস্কো তাদের এ সাহায্য পাঠানোর বিষয়টিকে ভূ-রাজনৈতিক কাজে ও নিজেদের প্রভাব বাড়াতে ব্যবহার করবে বলে সতর্ক করেছেন তারা। অন্যদিকে ট্রাম্প রাশিয়ান এ সহযোগিতাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। আমিরাতের সব তাসিল ও তদবির সেন্টার বন্ধ ঘোষণা : সংযুক্ত আরব আমিরাতে গতকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব তাসিল ও তদবির সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশটির মানবসম্পদ ও আমিরাত মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়েছে, এ ছাড়া তাওজিহ ও তাওয়াফুক সেন্টারগুলোও বন্ধ থাকবে। এ সময় সংশ্লিষ্ট সেন্টারগুলো কোনো গ্রাহক গ্রহণ করতে পারবে না। উল্লেখ্য, আমিরাতজুড়ে ২ হাজার ২০০ তাসিল ও ২৩টি তদবির অফিস রয়েছে। এদিকে দেশটির বাণিজ্যনগরী দুবাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকা দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেরা নাইফ, আল রাস গোল্ড সোক, আল দাগাইয়া এলাকা লকডাউন থাকবে। এ ছাড়া আল মোসাল্লা, আল খালিজ ও বানিয়াস রোড বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি মেট্রোরেলের গ্রিনলাইন তথা আল রাস, পাম দেইরা ও বানিয়াস স্কোয়ার মেট্রোস্টেশন বন্ধ থাকবে।

সৌজন্যে : বিডি প্রতিদিন

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১ এপ্রিল ২০২০/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন