আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

চীনের ল্যাবেই তৈরি করোনাভাইরাস, প্রথম আক্রান্ত হন বিজ্ঞানীরা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৫ ১৮:২৬:৩৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: চীনের ল্যাবে থেকেই ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। এমন দাবি আমেরিকা, ইসরায়েল ও ইরান শুরু থেকেই করে আসছে। এবার তিন দেশের সঙ্গে সুর মেলালো ব্রিটেন। যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রাণীদেহ থেকেই মারণ রোগের জীবাণু ছড়িয়েছে। তারপরেও চীনের গবেষণাগার থেকে জীবাণু ছড়ানোর তত্ত্ব উড়িয়ে দিচ্ছে না ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন জরুরিকালীন কমিটি (কোবরা)।

অবশ্য তাদের এমন অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে ব্রিটেনের চীনা দূতাবাস। সে দেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত জেং রংয়ে বলেছেন, 'এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই ধরণের অভিযোগ চীন ও তার নাগরিকদের আত্মত্যাগকে অসম্মানিত করছে। যদি চীনের গবেষণাগারে এই জীবাণু তৈরি হত, তাহলে সেখানে এত মৃত্যু ঘটত না।'

চীনের পর করোনার এপিসেন্টার হয়ে উঠেছে এখন ইউরোপক। ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি পর ব্রিটেনেও শুরু হয়েছে মৃত্যুর মিছিল। আক্রান্তের সংখ্যাও হু হু করে বাড়ছে। দেশটিতে এরই মধ্যে ৪২ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৩১৩ জনের।

তামাম পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা হন্যে হয়ে প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখনও মারণ এই ভাইরাসকে রুখার কার্যকর উপায় করতে পারেননি। এমনকী করোনার উৎপত্তি নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ, জৈব অস্ত্রে শত্রুদের ঘায়েল করতেই পরীক্ষাগারে এই মারণ জীবাণু বানাছিল চীন। সেখান থেকেই জীবাণু সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

আমেরিকা আগেই এই অভিযোগ জানিয়েছিল। এবার তাদের সুরে সুর মেলাল ব্রিটেনও। রানির দেশের পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি কমিশন গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ব্রিটেনের সংবাদপত্র 'ডেইলি মেইল' কোবরা কমিশনের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃতি করে লিখেছে, 'বিজ্ঞানীরা যতই বলুন, ইউহান প্রদেশের গবেষণাগারে জীবাণু তৈরির তথ্য উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।'

এ প্রসঙ্গে ডেইলি মেইল ২০১৮ সালে চীনের সংবাদপত্র পিপলস ডেইলি চায়নার একটি প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরেছেন। যেখানে বলা হয়েছিল, 'চীনের ভাইরোলজি ইন্সটিটিউট ইবোলার চেয়ে ভয়ংকর এক জীবাণু নিয়ে গবেষণা করছে। মজাদার বিষয় হল, ৩০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে বানানো ওই প্রতিষ্ঠানটি বণ্যপ্রাণী বাজার থেকে মাত্র দশ মাইল দূরে রয়েছে।' আবার অসমর্থিত সূত্রের খবর, মারণ জীবাণুতে প্রথম আক্রান্ত হয়েছিলেন ইউহানের ওই পরীক্ষাগারের বিজ্ঞানীরা। পরে বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে ডেইলি মেইলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোবরা কমিশনের এক সদস্য জানান, ইউহানের গবেষণাগারে যে এই জীবাণু তৈরি হয়েছিল, সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ব্রিটেনের এই অভিযোগের তীব্র নিন্দা করেছেন চীনা দূত জেং রং। তার কথায়, 'বিশ্বের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিয়ে চীন চিন্তিত। তাদের স্বার্থে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে। চীন বিশ্বের সমস্ত দেশকে এই মহামারি মোকাবেলায় সাহায্য করছে। কিন্তু সেই চেষ্টাকে অপমান করা হল। চীনেই যদি এই ভাইরাস তৈরি হত, তাহলে সেখানে এত মানুষকে মরতে হত না।'

এর আগে করোনাকে জৈব অস্ত্র দাবি করে বক্তব্য রেখেছিলেন ইসরায়েলি ও মার্কিন বিজ্ঞানীরা। 'জেনেটিক্যালি মডিফায়েড' এই করোনাভাইরাসের জন্মদাতা চীনের উহানের বায়োসেফটি ল্যাবোরেটরি লেভেল ফোর বলে দাবি করেছিলেন মার্কিন আইনজীবী ও রাসায়নিক মারণাস্ত্র বিরোধী সংগঠনের অন্যতম সদস্য ড. ফ্রান্সিস বয়েল। বলেছিলেন শক্তিশালী রাসায়নিক মারণাস্ত্র করোনাভাইরাস, ছড়িয়েছে উহানের ল্যাব থেকেই।

ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েস কলেজের আইনের অধ্যাপক ড. ফ্রান্সিস বয়েল। রাসায়নিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ সংগঠনেরও অন্যতম মাথা তিনি। তাঁর উদ্যোগেই ১৯৮৯ সালে 'বায়োলজিক্যাল ওয়েপনস অ্যান্টি-টেররিজম অ্যাক্ট' বিল পাশ হয়। নোভেল করোনাভাইরাস যে নিছকই কোনও ভাইরাসের সংক্রমণ নয়, সে বিষয়ে আগেও মুখ খুলেছিলেন ড. ফ্রান্সিস। ইজরায়েলি গোয়েন্দা ও মাইক্রোবায়োলজিস্টদের দাবির সমর্থন জানিয়েই ড. ফ্রান্সিস বয়েল বলেন, উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বায়োসেফটি লেভেল ফোর ল্যাবোরেটরিতে অতি গোপনে রাসায়নিক  মারণাস্ত্র বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। সেখান থেকেই ছড়িয়েছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। সি-ফুড মার্কেটের ব্যাপারটা নেহাতই চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা। আর এই কথা বিলক্ষণ জানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সব জেনেও গোটা বিষয়টাকে ধামাচাপা দেওয়ার কৌশলী চেষ্টা চলছে।

ড. ফ্রান্সিস বয়েল আরও বলেছিলেন, উহানের এই বায়োসেফটি লেভেল ফোর ল্যাবোরেটরিকে সুপার ল্যাবোরেটরির তকমা দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বলা হয়েছিল, এই ল্যাবে ভাইরাস নিয়ে কাজ হলেও তা অনেক বেশি সুরক্ষিত ও নিরাপদ। ল্যাবোরেটরির জন্যই রয়েছে আলাদা উইং যার বাইরের পরিবেশের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই।

ড. ফ্রান্সিস বলেন, সার্স ও ইবোলা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার পরে অভিযোগের আঙুল ওঠে এই গবেষণাগারের দিকেই। রোগ প্রতিরোধ নয়, বরং প্রাণঘাতী জৈব অস্ত্র বানাতেই মত্ত গবেষকরা। যারই পরিণতি হাজার হাজার মৃত্যু। নোভেল করোনাভাইরাসের জিনগত বদল ঘটানো হয়েছে এবং উহানের এই ল্যাবোরেটরি থেকেই যে ভাইরাস ছড়িয়েছে সেটাও  জানেন ডব্লিউএইচও'র অনেক গবেষকই।

নোভেল করোনাভাইরাসকে রাসায়নিক মারণাস্ত্র দাবি করেছিলেন মার্কিন সিনেটর টম কটনও। তাঁর দাবি, চীন জীবাণুযুদ্ধের জন্য বানাচ্ছিল ওই ভাইরাস। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কথাটা লুকোতে চাইছেন কারণ আন্তর্জাতিক আইনে জীবাণুযুদ্ধ নিষিদ্ধ। তাঁরা ওই নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছিলেন জানাজানি হলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

সৌজন্যে : ডেইলি মেইল, কালের কণ্ঠ

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৫ এপ্রিল ২০২০/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন