আজ মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনার সবচেয়ে সংক্রামক ধরন 'এ২এ' ছড়িয়েছে ভারতে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৮-০৩ ১৫:৪৭:৪০

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ‘এ২এ’ হ্যাপ্লোটাইপ। সে কারণেই গত কয়েক দিন ধরে দেশটিতে প্রতিদিনই ৫০ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ভারতের বিজ্ঞানীরা করোনার ১,০০০টি জিনোম সিকোয়েন্স করে এ চিত্র পেয়েছেন বলে দেশটি গণমাধ্যম জানিয়েছে।

করোনা ‘আরএনএ’ গোত্রের ভাইরাস। এ ধরনের ভাইরাস মুহুর্মুহু মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটিয়ে নিজের গঠন বদলে ফেলে। নভেল করোনাভাইরাসও চীন থেকে সরাসরি বা নানা দেশ ঘুরে ভারতে ছড়িয়ে পড়ার ফাঁকে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এমন বহুরূপী ভাইরাসের নজরদারি করতে প্রয়োজন হয় জিনোম সিকোয়েন্স করা। কোন দেশ থেকে এসেছে, বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে কীভাবে ছড়িয়েছে, জিনোম সিকোয়েন্স করলে মহামারির ক্ষেত্রে এ ধরনের ‘ট্র্যাকিং’ ও ‘ট্রেসিং’ সহজে করা যায়। এসব তথ্য কাজে লাগে ভ্যাকসিন, ড্রাগের গবেষণাতেও।

ভারতে প্রথম জিনোম সিকোয়েন্স করে পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি। পরে ভাইরাল জিনোমে নজর রাখা শুরু করে হায়দারাবাদ ও দিল্লির সিএসআইআরের দুই প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশই একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের নমুনার ওপর সমীক্ষা করায় গোটা দেশের চিত্র উঠে আসছিল না। এরপরই কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব বায়োটেকনোলজি প্যান-ইন্ডিয়া কনসোর্টিয়াম তৈরি করে। সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিল কল্যাণীর এনআইবিএমজি। পশ্চিমবঙ্গে ন্যাসোফ্যারিঞ্জিয়াল এবং অরোফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াব নমুনা পাঠানোর দায়িত্বে নাইসেড ও আইপিজিএমইআর।

সবমিলিয়ে ভারতে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণে ভাগ করে ১০টি রাজ্য থেকে নমুনা নেওয়া হয়। শনিবার সেই গবেষণার প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনার ‘এ২এ’ হ্যাপ্লোটাইপ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। তা ভারতে এসেছে মূলত ইউরোপ থেকে, করোনার উৎস চীন থেকে সরাসরি নয়।

এনআইবিএমজি’র ডিরেক্টর সৌমিত্র দাস বলেন, ‘করোনা এ দেশে এসেছে মূলত দুটি পথ ধরে। একটি ইউরোপ, অন্যটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ইউরোপ (ইতালি, ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড, গ্রিস) থেকে এসেছে ‘এ২এ’ ধরনটি, যাকে এখন ২০এ, ২০বি, ২০সি, তিনটি ভাগে আলাদা করা হয়েছে। আর চীন থেকে এসেছে ১৯এ/বি ধরন।’ তিনি বলেন, ‘শুরুতে মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে হ্যাপ্লোটাইপগুলোর বৈচিত্র্য চোখে পড়ছিল। কিন্তু জুনে গোটা দেশে মূলত এ২এ ধরনই ছড়িয়ে পড়ে।’

এপ্রিলের শেষে এনআইবিএমজিরই দুই অধ্যাপক নিধান বিশ্বাস এবং পার্থপ্রতিম মজুমদার ৫৫টি দেশের ৩,৬৩৬টি জিনোম সিকোয়েন্স পর্যালোচনা করে বলেছিলেন, ভাইরাসের স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনে একটি মিউটেশনের (ডি৬১৪জি) জন্য মানুষের ফুসফুসের কোষে সহজে ঢুকে পড়ছে এ২এ ধরনের ভাইরাসটি। এই গবেষণাতেও বলা হয়েছে, মানবদেহের অ্যাঞ্জিওটেনসিং কনভার্টিং এনজাইম-২ বা এসিই-২ রিসেপটরের সঙ্গে অনেক সহজে বাইন্ড করছে এ২এ। আরও একটি সম্ভাব্য কারণ, মিউটেশনের ফলে গঠনগত পরিবর্তন হওয়ায় সংক্রমণ ঘটানোর পর মানবকোষে বেশি সংখ্যায় ভাইরাস পার্টিকেলের জন্ম দিতে পারছে। অতি সংক্রামক সেই কারণেও।

সহ-গবেষক, এনআইবিএমজি-র অধ্যাপক অরিন্দম মিত্র বলেন, 'শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ চালু থাকায় করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ধরন ভারতে ঢুকছিল। তাই সে সময় হ্যাপ্লোটাইপগুলোর বৈচিত্র দেখা যায়। পরে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন কোনো ধরণ আর আসেনি। যা ছিল, তার মধ্যে প্রাধান্য পেয়েছে এ২এ। চীন থেকে ইউরোপে যাওয়ার পর এই মিউটেশন হয়, পরে ভারতে আসে। তবে চীন থেকে সরাসরি ভারতে আসা ধরনটি সে ভাবে সংক্রমণ ছড়াতে পারেনি।'

উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড ওমিটারের দেয়া সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১৮ লাখ ৮ হাজার ১২৮ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৮ হাজার ২০১ জন মানুষ।

সূত্র : ইন্ডিয়া টাইমস।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৩ আগস্ট ২০২০/ডেস্ক/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন