Sylhet View 24 PRINT

বাবরি মসজিদের পর এবার ঈদগাহ সরানোর দাবি, ‘শ্রীকৃষ্ণ’র মামলা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৯-২৮ ১৯:১৩:৪২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে রামমন্দির তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এবার জন্মভূমির অধিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ ‘শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমান’।

আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশির দশকের শেষে রামমন্দির আন্দোলনের সময় বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবার স্লোগান দিয়েছিল, ‘অযোধ্যা তো সির্ফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়।’। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পরেও সেই স্লোগান ওঠে। সেই সূত্র মেনেই রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) উত্তরপ্রদেশের মথুরার আদালতে ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমান’-এর হয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার শুনানি হবে ৩০ সেপ্টেম্বর।

দাবি, মথুরায় ‘শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি’র ১৩.৩৭ একরের অধিকার এবং শাহি ঈদগাহ মসজিদ সরানো।

শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমানের হয়ে মামলা করেছেন রঞ্জনা অগ্নিহোত্রী ও ছয়জন ভক্ত। তাদের আইনজীবী হরিশঙ্কর জৈন ও বিষ্ণু জৈনদের বক্তব্য, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের সম্মতিতে ঈদগাহ এর পরিচালনা কমিটি বেআইনিভাবে মসজিদের কাঠামো খাড়া করেছে। মথুরার কাটরা কেশব দেবের ওই জমি আসলে শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমানের। এখন মথুরায় শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের পাশেই শাহি ঈদগাহ মসজিদ অবস্থিত।

রাজনৈতিক ও আইনজীবী মহলে প্রশ্ন, বিজেপি, সঙ্ঘপরিবার, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কি এবার শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি আন্দোলনে নামবে? সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির নির্দেশ দেয়ার পরে কি মথুরা থেকে ঈদগাহ সরানোর দাবি জোরালো হল?

আইনজীবীরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইনের বাধা রয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী, কোনো মন্দির-মসজিদ বা গির্জার চরিত্র বদলানো যাবে না। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় যেখানে যা ছিল, তেমনটাই রেখে দিতে হবে। কোনো আদালত এই বিষয়ে আর্জি শুনতেও পারবে না। ওই আইন আসার আগেই অযোধ্যার মামলা দায়ের হয়ে যাওয়ায় সেখানে এই শর্ত খাটেনি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টও তার রায়ে এই আইনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল।

মথুরা আদালতে জমা হওয়া আর্জিতে ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ১৬৬৯-৭০ সালে মথুরায় কাটরা কেশব দেবে শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমিতে তার মন্দির ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন আরঙ্গজেব। একশো বছর পরে মরাঠারা যুদ্ধে জিতে আগরা-মথুরার দখল নিলে মন্দির ফের তৈরি হয়। ব্রিটিশ জমানায় ওই জমি বারাণসীর রাজা পাটনিমল নিলামে কিনে নেন। পরে তা পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য ও অন্যদের হাতে যায়। সেই জমি কেনার জন্য ১৩,৪০০ টাকা দিয়েছিলেন যুগলকিশোর বিড়লা। তারা একটি ট্রাস্ট তৈরি করে মন্দির তৈরির ঘোষণা করেন। কিন্তু ১৯৬৮ সালে শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান সেবা সঙ্ঘের সঙ্গে শাহি মসজিদ ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির বোঝাপড়া হয়। সেবা সঙ্ঘ মসজিদ কমিটির কিছু দাবি মেনে নেয়।

মামলাকারীদের দাবি, ওই বোঝাপড়া বেআইনি ছিল। শ্রীকৃষ্ণের জমিতে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড বা মসজিদ কমিটির অধিকার থাকতে পারে না।

অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিবাদেও মূল মামলাকারী ছিলেন রামলালা বিরাজমান। হিন্দু দেবতাদের ‘জুরিস্টিক পার্সন’ বা আইনের চোখে ব্যক্তি হয়ে ওঠার সূত্রপাত ব্রিটিশ জমানায়, ‘ইংলিশ কমন ল’ থেকে। আইনের চোখে ব্যক্তি হিসেবে দেবতার সব আইনি অধিকার রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, তিনিও মামলা করতে পারেন। তবে তার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার নেই। শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমানের আইনজীবীরাও সেই যুক্তি দিয়ে বলেছেন, শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমান বালক। তার সেবায়েতদের মাধ্যমে বা সেবায়েতদের অনুপস্থিতিতে প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজের সম্পত্তি রক্ষা ও উদ্ধার করার অধিকার রয়েছে।

এর আগে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল ভারতের অযোধ্যায়। হিন্দুদের মতে, রাম যেখানে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন সেখানে মসজিদটি তৈরি করা হয়। এ নিয়ে মামলা হয়। মামলায় সে জায়গাটিতে মন্দির তৈরির পক্ষেই চূড়ান্ত রায় দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আর অযোধ্যারই অন্যত্র মসজিদ বানানোর জন্য পাঁচ একর জমি বরাদ্দ দিতে সরকারকে নির্দেশ দেয়।

বর্তমানে নতুন যে জায়গায় মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে সেটা রাম মন্দির থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ধন্নিপুর গ্রামে অবস্থিত।



সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০/ পূর্বপশ্চিমবিডি / জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.