Sylhet View 24 PRINT

ফিলাডেলফিয়ায় হামলা-ভাংচুর-লুটতরাজ, প্রবাসীরাও আক্রান্ত

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-২৮ ১৪:৫৮:২৪

সিলেটভিউ ডেস্ক :: বাংলাদেশি অধ্যুষিত মার্কেট স্ট্রিট এবং চেসনাট স্ট্রিটসহ ফিলাডেলফিয়া সিটির বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে পুনরায় হামলা, ভাংচুর এবং ব্যাপক লুটতরাজের ঘটনা ঘটলো। পুলিশের গুলিতে সোমবার ২৭ বছর বয়েসী কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহত হবার প্রতিবাদ জানাতে সোমবার এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংঘবদ্ধ লোকজন লুটতরাজে লিপ্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেও কোন লাভ হয়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমকে জানান।

ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয় মঙ্গলবার বিকেলে। তবুও বিক্ষোভ কমেনি। আর এই বিক্ষোভের আড়ালেই লুটতরাজ চালানো হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় শতশত মানুষ স্লোগান দিয়ে পুলিশী বর্বরতার নিন্দা জানাচ্ছেন এবং পাশাপাশি আরেকদল লোক আশপাশের মূল্যবান সামগ্রির স্টোরে হামলা চালিয়ে মালামাল লুট করছে। ইলেক্ট্রনিক এবং জুয়েলারি স্টোরগুলোই টার্গেট। মালামাল বহনের জন্যে নির্দিষ্ট স্থানে ট্রাক এবং ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অর্থাৎ লুটের উদ্দেশ্যে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল বলেই অনেকে মনে করছেন।

পেনসিলভেনিয়া স্টেটের ফিলাডেলফিয়া সিটির ওপরে হেলিকপ্টারে ছিল ফক্স টিভির ক্যামেরা। সেখান থেকেই লুটতরাজের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয় টিভিতে। এই সিটির উত্তরের পোর্ট রিচমন্ডেও হাজার খানেক মানুষ বিভিন্ন স্টোরে হামলা চালিয়ে লুটতরাজে লিপ্ত হয়। পুলিশ অফিসারেরা দাঙ্গাবাজ এবং লুটতরাজ ঠেকানোর চেষ্টা করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনেকের ধারণা, লুটতরাজে বাধা দেয়ার সময় কেউ যদি নিহত অথবা আহত হয় তাহলে নতুন করে হট্টগোল শুরুর আশংকা রয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দোকানে তালা ঝুলানোর পাশাপাশি শক্ত কিছু দিয়ে ভেতর থেকে প্রতিরোধ রচনার পরামর্শও দেয়া হয়েছে ভাঙচুর ঠেকাতে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় ফিলাডেলফিয়া সিটির ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট অফিসের টুইটে ১২, ১৬, ১৮, ১৯, ২৪, ২৫ এবং ২৬তম ডিস্ট্রিক্টের বাসিন্দাদের ঘরের বাইরে বের না হবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ এসব এলাকায় দুর্বৃত্তরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং তারা সুযোগ পেলেই দোকান-পাট এবং বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটতরাজ চালাচ্ছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ওয়াল্টার ওয়ালেস জুনিয়র প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, হাতে একটি ধারালো ছুরি নিয়ে সে আক্রমণের চেষ্টায় ছিল। টহল পুলিশ তাকে বারবার অনুরোধ করা সত্বেও সে ছুরি মাটিতে ফেলে দেয়নি। এ অবস্থায় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ তাকে গুলি করতে বাধ্য হয়েছে। নিহত যুবকের স্বজনেরা জানিয়েছেন যে, সে মানসিক রোগী ছিল। চিকিৎসাও চলছিল। তবে সে দুর্বৃত্ত ছিল না। নিহত ওয়াল্টারের বাবা ফিলাডেলফিয়া ইনক্যুয়ারারকে বলেছেন যে, তার ছেলেকে পরপর ১০বার গুলি করা হয়েছে হত্যার উদ্দেশ্যে। এই গুলিবর্ষণের দৃশ্য একজন পথচারি ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার পরই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে ফিলাডেলফিয়া সিটিসহ আশপাশে।

ওয়ালেস সিনিয়র বিক্ষোভকারিদের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রতিবাদের নামে ভাংচুর ও লুটতরাজে লিপ্ত না হতে। কোন ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামায় তার পুত্রের আত্মা শান্তি পাবে না বলেও উল্লেখ করেছেন ওয়ালেস সিনিয়র। এধরনের লুটতরাজ ও ভাংচুরের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে ঐ হত্যার সাথে জড়িত অফিসারকে বাঁচানোর সুযোগ তৈরী করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন ওয়ালেস সিনিয়র।

এদিকে, সোম ও মঙ্গলবারের ভাংচুর ও লুটতরাজের সাথে জড়িত সন্দেহে মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত ৯০ জনকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়েছে ফিলাডেলফিয়া পুলিশ।

পুলিশ কমিশনার ডেনিয়েল আউটলো বলেন, হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তি অবশ্যই শাস্তি পাবেন। তাই বলে ঐ হত্যার প্রতিবাদ জানাতে ভাংচুর ও লুটতরাজ চালাতে হবে কেন? ফিলাডেলফিয়া ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী ল্যারি ক্র্যাসনার বলেছেন যে, গুলিবর্ষণের ঘটনাটির তদন্ত চলছে। অবশ্যই দায়ীরা চিহ্নিত এবং আইন অনুযায়ী শাস্তির সম্মুখীন হবেন। কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা কেউই করছি না। তাই বিক্ষোভের কোন প্রয়োজন নেই। লুটতরাজের মত জঘন্য কাজে লিপ্তরাও শাস্তি পাবেই।

ফিলাডেলফিয়া কমিউনিটির লিডার মফিজুল হক মঙ্গলবার রাতে এ সংবাদদাতাকে জানান, জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদের সময় এই সিটির অনেক প্রবাসীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটতরাজ হয়েছে। গত দুদিনেও আক্রান্ত হয়েছে বেশ কটি স্টোর। ফলে প্রবাসীরাও উদ্বিগ্ন এবং ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৮ অক্টোবর ২০২০/ডেস্ক/মিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.