আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

খ্রিস্টধর্মের বই পাঠ করে পাদ্রির ইসলামগ্রহণ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০১-১৩ ১৯:৪৭:৫৪

সিলেটভিউ ডেস্ক :: খ্রিস্টধর্মের সর্বোচ্চ পদ লাভ : ‘ফাকাদো’ ছিলেন খ্রিস্টান চার্চের একজন উচ্চপদস্থ ধর্মযাজক। ইথিওপিয়ার ‘লাসতা’ নামক ইহুদি অধ্যুষিত অঞ্চলে তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা ও জীবনযাপন। খ্রিস্টানদের কাছেও লাসতা পবিত্র নগরী। খ্রিস্ট ধর্মানুসারে একজন ধর্মযাজক পদোন্নতি লাভ করে ‘ঐশী উপদেষ্টা’য় পরিণত হয়। ফাকাদো ছিলেন ‘ঐশী উপদেষ্টা’। ৬৪২টি চার্চের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যাবলি তত্ত্বাবধান করা তাঁর দায়িত্ব ছিল।

`নিষিদ্ধ' বই পাঠ :
সাধারণ খ্রিস্টান ও ধর্মযাজকদের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ—এমন লাইব্রেরিতে বিচরণ করারও সুযোগ হয়েছিল তাঁর। ফলে ধর্মযাজকের জন্য পড়া নিষিদ্ধ—এমন ৬২টি গ্রন্থ তিনি গোপনে পড়েছেন। এ বইগুলোই তাঁর বিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে দেয়। তাঁর পিতা বরাবরই তাঁকে বইগুলো পড়তে নিষেধ করতেন। পিতা যতই বাধা দিতেন, ততই তাঁর কৌতূহল জাগত। একদিন বাবার অনুপস্থিতিতে একটি বই পড়তে শুরু করলেন। তাতে তিনি পেলেন, ‘ঈশ্বর মুসাকে বললেন, তুমি কোনো প্রতিমা ও কোনো ছবিকে সিজদা কোরো না। কারণ আমিই তোমাকে সব মঙ্গল দান করি। আমি ছাড়া কেউ তোমাকে কিছু দান করতে পারবে না।’ এ অংশ পড়ে তিনি রীতিমতো অস্থির ও চিন্তিত হলেন। কেননা খ্রিস্টজগতের প্রচলিত প্রার্থনা পদ্ধতির বিপরীত। তিনি ভাবলেন, এ উক্তিটি প্রচলিত পবিত্র গ্রন্থগুলোতে কেন নেই? অথচ অন্যান্য গ্রন্থ তো এ গ্রন্থটিরই অনুলিপি।

বই পাঠে সত্যের অনুসন্ধান :
‘ফাকাদো’ বলেন, আমি রাত-দিন নানা বিষয় নিয়ে ভাবনায় ডুবে থাকলাম। কোথাও কোনো জবাব পাইনি। এরপর আমি পরিবারের সদস্যদের সামনে ছবি, মূর্তি ও ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করলাম। নিষিদ্ধ বইটির নাম ছিল, ‘উরেত যাত লাসআত মেরাব’। বইটির ২০ নম্বর পৃষ্ঠার প্রথম পরিচ্ছেদে উল্লিখিত উদ্ধৃতিটি আছে।

ফাকাদো মসিহের জন্ম, মৃত্যু এবং ছবির পূজা সম্পর্কে যখন প্রবল সংশয়ে, তখন তিনি আরেকটি গোপন নিষিদ্ধ গ্রন্থ পেলেন। নাম ‘তেমবিতা ঈসা আয়াস’। গ্রন্থটিতে একটি উক্তি এমন—ঈশ্বর ঈসা আয়াসকে বললেন, ‘আমি প্রথম, আমিই শেষ, আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো উপাস্য নাই’ যা সরাসরি ত্রিত্ববাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এমন উক্তিগুলো খোদ নিজের ভেতরেই খ্রিস্টধর্মের বোধ-বিশ্বাস কাচের মতো গুঁড়া গুঁড়া হয়ে যাচ্ছিল।

ইসলামের নবীর সন্ধান : আরেকটি গোপন বইয়ে পেলেন—‘শেষ জামানায় ইসমাঈল বা ইসহাক যেকোনো একজন হইতে একজন নবী প্রেরিত হইবেন।’ তাতে সে নবীর বেশ কিছু পরিচয় বর্ণিত হয়েছে, যা পুরোপুরিভাবে মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে মিলে যায়। তখন আমি অস্থির হয়ে পড়লাম। তখন প্রায় স্বপ্নে এক ব্যক্তি আমার কাছে আসত। তিনি আমাকে আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করতে বলতেন, ইথিওপিয়াকে শিরকমুক্ত করতে উৎসাহিত করতেন। তিনি আমাকে কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করালেন।

মুসলিম হওয়ার প্রেরণা :
ফাকাদো বলেন, দায়িত্ব পালনের জন্য চার্চে আসা-যাওয়াও ছেড়ে দিলাম। স্বপ্নে ঘটে যাওয়া সব রহস্য উদঘাটনের জন্য ছটফট করছিলাম। এ সময় ইসরায়েলে যাওয়ার একটি স্কলারশিপ পেলাম। এটা ছিল পোপ পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার প্রথম ধাপ। আমি কুদস যাওয়ার আগে ড্রাইভিং শিখে নিতে চাইলাম। ফলে প্রাদেশিক রাজধানী ‘দসি’তে একটি স্কুলে ভর্তি হলাম। আমাকে ড্রাইভিং শেখাতেন একজন মুসলিম। তাঁকে আমার অনুভূতিগুলো বললাম। আমার দেখা স্বপ্নগুলোও তাঁকে শুনালাম। তিনি তা শুনে কলেমা পড়তে শুরু করলেন এবং বললেন, আপনি অচিরেই মুসলিম হয়ে যাবেন। আমি স্বপ্নে যে কলেমা শাহাদাত ও সুরা ইখলাস শিখেছিলাম, তা ব্যাখ্যা করে তিনি আমাকে বুঝিয়ে দিলেন।

কয়েক দিন পর সফরের প্রস্তুতির জন্য রাজধানী আদ্দিস আবাবায় চলে এলাম। শুক্রবার সকালে ফ্লাইট। বুধবারেই হোটেল থেকে আমি মনের অজান্তেই রাজধানীর প্রধান মসজিদ ‘মসজিদে আনওয়ার’-এ চলে গেলাম। ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করলাম। কিন্তু আমার ধর্মীয় অবস্থান ও পারিবারিক পরিচয়ের কারণে তারা আমাকে সন্দেহ করছিল। তখন আমার পুরো ঘটনা-বৃত্তান্ত শোনালাম। একসময় তারা আমার নাম নওমুসলিমদের তালিকাভুক্ত করতে সম্মত হলো।

মুসলিম হওয়ায় ফাঁসির আদেশ :
ইসলাম গ্রহণের পর নাম রাখা হলো মুহাম্মদ সাঈদ। আমার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ দাবানলের মতো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। আমার পরিবার শুধু ইথিওপিয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী কিবতি পরিবার, যা পুরো আফ্রিকার কিবতি চার্চগুলোর নেতৃত্ব দেয়। গির্জার গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগে প্রেসিডেন্ট ‘মনকিসতো হিলা মরিয়ম’ আমাকে ফাঁসির নির্দেশ দিলেন।

ফাঁসি থেকে রেহাই মেলে যেভাবে :
তবে ফাঁসির শাস্তি থেকে আমি রক্ষা পাই ইথিওপিয়ার রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর সাবেক পরিচালকের সহযোগিতায়। তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে আমাকে ক্ষমা করার আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট দেশত্যাগের শর্তে আমাকে ফাঁসির ৭২ ঘণ্টা আগে মুক্ত করে দেন।

মুহাম্মদ সাঈদ ফাকাদো মুক্তি পেয়ে রাবেতার সাবেক সেক্রেটারি ড. আবদুল্লাহ ওমর নাসিফের সহায়তায় পবিত্র মক্কায় চলে আসেন। সেখানে বসবাস শুরু করেন। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত মাসিক আল আলামুল ইসলামী  অবলম্বনে।



সিলেটভিউ২৪ডটকম / কালের কণ্ঠ / জিএসি-১১

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন