Sylhet View 24 PRINT

যোগ্য হলেই হবে না দক্ষও হতে হবে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৮-০৭ ০০:২১:২৩

শামছুল হক রাসেল :: মাস্টার্স পাস করার পর থেকেই রবিন আত্মবিশ্বাসী ছিল চাকরিটা পেয়ে যাবে। কেনই বা পাবে না? স্কুলে বরাবরই ফার্স্ট হতো। এসএসসি ও এইচএসসি —দুটোতেই গোল্ডেন জিপিএ। ইংরেজিতে কোনো দিন আশির নিচে নম্বর পায়নি। গ্রামারের জ্ঞান দেখলে অবাক হতে হয়। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় স্কুল ম্যাগাজিনে তার লেখা ইংরেজি কবিতা প্রশংসা কুড়িয়েছিল ছাত্র-শিক্ষক সবার। এ ছাড়া বিজ্ঞানের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ ছিল তার। হেড স্যার ডেকে বলেছিলেন, ‘বড় হয়ে ইংরেজি নিয়ে পড়িস’।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইংরেজি অনার্সে দ্বিতীয় শ্রেণি। তারপরই প্রথম সুযোগে মাস্টার্সে ফের বাজিমাৎ। ইন্টারভিউর পর ভেবেছিল ঢাকার কোনো একটা কলেজে পেয়ে যাবে শিক্ষকতার চাকরি। পেয়েও গেল তবে চট্টগ্রামের এক কলেজে। শিক্ষক হিসেবে তরুণ হওয়ায় খুব সহজেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে যেতে পারত। প্রথম দিকে সব কিছু ঠিকই ছিল, তবে সমস্যাটা হতে লাগল সেই ইংরেজিকে ঘিরেই। ইংরেজিতে তার দক্ষতার অভাব নিয়ে কখনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। সে ইংরেজিটা ভালো পড়াতে পারে, লিখতে পারে, গ্রামারের যে কোনো প্যাঁচ সমাধান করে দিতে পারে। অথচ এই কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক, এমনকি ছাত্রছাত্রীরাও অনায়াসেই ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। অথচ ইংরেজির শিক্ষক হয়ে তারই কি না আড়ষ্টতা।

তাই হাইস্কুলের ক্লাসমেট রক্তিমকে ফোনে শোনাল তার এই দুরবস্থার কথা। সেও এখন চট্টগ্রামে থাকছে। একটা মিডিয়া হাউসে চাকরি করে। লেখার হাত বরাবরই ভালো রক্তিমের। গ্রামে থাকতে তার চিঠিগুলো নিয়মিত ছাপা হতো ঢাকার কাগজগুলোয়। লিটল ম্যাগাজিনেও লিখেছে। সব কিছু দেখে ইন্টারভিউ বোর্ড ভরসা করে রক্তিমের যোগ্যতায়। ডেস্কের কাজটা পায়। কিন্তু সমস্যা হলো কম্পিউটারে সড়গড় না হওয়ায়। এমনকি পেজ মেকআপ, ডিজাইনে তেমন সুবিধা করতে পারেনি সে। কলম হাতে পেলে রোখা যেত না যে ছেলেটাকে, সেই সেই রক্তিম এখন কি-বোর্ডের সামনে হ্যঁ করে বসে থাকে। কাগজ-কলমের কোনো কারবার নেই। গোটা অফিসে রিপোর্ট লেখা, এডিট করা, পাতা সাজানো সব কিছুই কম্পিউটারে হয়। মাঝেমধ্যে নিজের ওপরই রাগ হয় তার। উল্টো রবিনকে হতাশ হয়ে বলে ফেলে, জানি না চাকরিটা কদিন ধরে রাখতে পারব।— এ তো গেল আমার দুই বন্ধুর কথা। এরকম হাজারও রবিন ও রক্তিম ক্যারিয়ার দৌড়ে যুদ্ধ করছে। তারা যোগ্যতার মাপকাঠিতে অনেক উঁচুতে।

কিন্তু দক্ষতার দিক দিয়ে অনেক পেছনে। জন্মগতভাবে প্রাপ্ত মেধা-যোগ্যতা যতই প্রখর হোক, দক্ষতা উন্নয়ন (Skil development) এমন একটা জিনিস যেটা শিখে নিতে হয়। তা না হলে মেধা বা যোগ্যতা কাজে লাগানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তখন মনে হয় ‘আমার দ্বারা কিছু হবে না। অন্যরা আমার চেয়ে অনেক যোগ্য।’ হতাশা আসে। কোনো ক্ষেত্রে দক্ষতা না থাকলে তার মানে এই নয় যে, আগামী দিনে তা আর অর্জন করা যাবে না। প্রয়োজন সংকল্প আর পরিশ্রম। কেউ ভালো সিনেমা বোঝে, চাইলে চিত্রনাট্যও লিখে ফেলতে পারে। কিন্তু ক্যামেরা, এডিটিং, লাইট, সাউন্ডের মতো টেকনিক্যাল বিষয়গুলো কোনো দিন কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি বলে মনে করে, ওসব ফিল্ম ডিরেকশন আমার কাজ নয়। তার চেয়ে বিসিএসের কোচিংটাই ভালো করে করি। আবার কেউ ভালো গল্প লেখে, একটু চাইলে উপন্যাসও লিখে ফেলতে পারে। কিন্তু ওই একই উপসর্গ। দক্ষতার অভাব। শুধু যোগ্যতাই যদি যথেষ্ট হতো তবে বিরাট কোহলির মতো ব্যাটসম্যানকে নেট-এ, বা মেসিকে বল পায়ে প্র্যাকটিসে এত ঘাম ঝরাতে হতো না।

কোনো একটা দেশের বোলার দুসরা বা রিভার্স স্যুইং আবিষ্কার করেছে, কিছু দিন পর অন্য ক্রিকেট খেলিয়ে দেশের বোলাররা তা রপ্ত করে ফেলেছে। রবিন বা রক্তিমের হীনম্মন্যতায় ভোগার কিছু নেই। তাদের যোগ্যতার অভাব নেই। কমতি দক্ষতা উন্নয়নের। পারদর্শিতার সঙ্গে সম্পন্ন করার ক্ষমতা তারা রাখেন। সেগুলো কীভাবে করতে হয় সেটা রপ্ত করে ফেললেই সমস্যা থাকবে না। কোনো একটা স্পোকেন ইংলিশ বা কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে কয়েক মাসের একটা কোর্স করলেই রবিন বা রক্তিমের আর হীনম্মন্যতায় ভুগতে হবে না। ভাষাগত, কম্পিউটার, রাইটিং, কমিউনিকেশন— এবার খুঁজে দেখুন, কোন skill টা একটু develop করতে পারলেই Sky is the limit!

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.