আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

এইচএসসির পরই নৌ-কর্মকর্তা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১১-০১ ০১:৫০:০৮

২০১৮ সালের অফিসার ক্যাডেট ব্যাচের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ২০১৮ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১০ ডিসেম্বর। লিখেছেন সানজিদ সাদ

নৌবাহিনীর অফিসার হওয়ার স্বপ্ন অনেকেরই। সম্প্রতি ২০১৮—‘বি’ অফিসার ক্যাডেট ব্যাচের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

আবেদন করতে পারবে বাংলাদেশি পুরুষ ও মহিলা নাগরিকরা। হতে হবে অবিবাহিত। বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া যাবে নৌবাহিনীর www.joinnavy.mil.bd ওয়েবসাইট ও http://bit.ly/2yYr3mE ওয়েবলিংকে।

আবেদনের যোগ্যতা
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান) অথবা সমমানের পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। উভয় পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে পেতে হবে জিপিএ ৪.০০। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ‘ও’ লেভেলে ছয়টি বিষয়ের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি বিষয়ে ‘এ’ গ্রেড এবং দুটি বিষয়ে ‘বি’ গ্রেড পেতে হবে এবং ‘এ’ লেভেলে কমপক্ষে দুটি বিষয়ে (উভয় পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতসহ) ‘বি’ গ্রেড থাকতে হবে। সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত প্রার্থীদের নৌবাহিনীর উচ্চমান পরীক্ষা (এইচইটি) বা সমমানের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে হবে। সরবরাহ শাখায় আবেদনের জন্য প্রার্থীকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (ব্যবসায় শিক্ষা শাখা) জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় হিসাববিজ্ঞান এবং ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জিপিএ ৪ পেতে হবে। ২০১৮ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন।

পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, ওজন ৫০ কেজি, বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৭৬ সেমি (৩০ ইঞ্চি) এবং সম্প্রসারিত অবস্থায় ৮১ সেমি (৩২ ইঞ্চি) হতে হবে। মহিলা প্রার্থীদের বেলায় উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি, ওজন ৪৬ কেজি, বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৭১ সেমি (২৮ ইঞ্চি), সম্প্র্রসারিত অবস্থায় ৭৬ সেমি (৩০ ইঞ্চি ) হতে হবে। উচ্চতা ও বয়স অনুসারে সশস্ত্রবাহিনীর জন্য নির্ধারিত স্কেলের অতিরিক্ত ওজন হলে অযোগ্য বিবেচিত হবে। ১ জুলাই ২০১৮ তারিখে বয়সসীমা সাড়ে ১৬ বছর থেকে ২১ বছর। সশস্ত্রবাহিনীতে কর্মরত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৮ থেকে ২৫ বছর।

অনলাইন আবেদন পদ্ধতি
বাংলাদেশ নৌবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, আবেদন করা যাবে অনলাইন ও ম্যানুয়াল—দুই পদ্ধতিতেই। অনলাইনে আবেদনের জন্য www.joinnavy.navy.mil.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে Home Page-এর ডান পাশে APPLY NOW-এ ক্লিক করে আবেদন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে আবেদন ফি। ম্যানুয়ালি ফরম পূরণের ক্ষেত্রে যেকোনো ব্যাংক থেকে ‘বিএন রিক্রুটমেন্ট ফান্ড’ ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চ, ঢাকার অনুকূলে ৭০০ টাকার পে-অর্ডার/মানি রিসিপ্ট সংগ্রহ করে আবেদন ফরম সংগ্রহ করা যাবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ম্যানুয়াল আবেদনের ক্ষেত্রে পূরণ করা ফরমটির মূলকপি নৌ সদরে পাঠাতে হবে ও ফটোকপিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রাথমিক সাক্ষাত্কারের সময় সঙ্গে আনতে হবে। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে ফরমের প্রিন্ট কপির সঙ্গে কাগজপত্র সংযোজন করে প্রাথমিক সাক্ষাত্কারের সময় জমা দিতে হবে। লাগবে ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি, সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ও মার্কশিটের কপি, ইউপি চেয়ারম্যান/ পৌরসভার মেয়র/ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দেওয়া নাগরিকত্বের সনদ ও প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার দেওয়া চারিত্রিক সনদপত্রের কপি ও ব্যাংক পে-অর্ডার।

পরীক্ষা ও সাক্ষাত্কার
নৌবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ১৮-২১ ডিসেম্বর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা কেন্দ্রে নেওয়া হবে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রাথমিক সাক্ষাত্কার। যোগ্যদের বুদ্ধিমত্তা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে উল্লিখিত কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে ২২ ডিসেম্বর। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আন্তবাহিনী নির্বাচন পর্ষদ (আইএসএসবি) পরীক্ষা এবং সাক্ষাত্কার নেওয়া হবে ঢাকা সেনানিবাসে।

আইএসএসবি পরীক্ষা
আইএসএসবি পরীক্ষা নেওয়া হয় চার দিন ধরে। প্রথম দিনে নেওয়া হয় বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা। এ পরীক্ষার দুটি অংশ থাকে—ভাষাগত ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। প্রশ্ন করা হয় এমসিকিউ টাইপের। ভাষাগত পরীক্ষায় সাধারণত ১০০টি প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পরীক্ষায় ৩৮টি প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার পর প্রার্থীকে অংশ নিতে হয় পিকচার পারসেপশন অ্যান্ড ডেসক্রিপশন টেস্টে (পিপিডিটি)। এ পরীক্ষায় আংশিক অস্পষ্ট চিত্র প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়। ছবি দেখে ইংরেজিতে গল্প লিখতে বলা হয় এবং নির্বাচকমণ্ডলীর উপস্থিতিতে এর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়। উত্তীর্ণরা বিকেলে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। প্রার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক দিক, উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্ব যাচাই করা হয় এ পরীক্ষায়। থাকে বাংলা ও ইংরেজি বাক্য রচনা, বাক্য সম্পূর্ণকরণ, ছবি দেখে গল্প লিখন, অসম্পূর্ণ গল্প সম্পূর্ণকরণ, আত্মসমালোচনা, সমকালীন বিষয়ে প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন বিষয়।

দ্বিতীয় দিন অংশ নিতে হয় নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বাংলা ও ইংরেজিতে দলগত আলোচনা, বক্তৃতা, শারীরিক সামর্থ্যের পরীক্ষায়। দলগত পরীক্ষার জন্য সাত-আটজনকে নিয়ে গঠন করা হয় আলাদা দল। যাচাই করা হয় দলগত কাজের ক্ষমতা ও শারীরিক দক্ষতা। দলগত আলোচনা পর্বে বাংলা ও ইংরেজিতে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে হয়। একটি দলকে চারটি বাধা পর্যায়ক্রমে পার হয়ে এগিয়ে যেতে হয় প্রগ্রেসিভ গ্রুপ টাস্ক (পিজিটি) পর্বে। অর্ধ দলগত কাজ (এইচজিটি) গঠিত হয় তিন-চারজন প্রার্থীকে নিয়ে। এখানে একটি বাধা অতিক্রম করতে হয়। প্রার্থীদের ইংরেজিতে উপস্থিত বক্তৃতায় অংশ নিতে হয়। অংশ নিতে হয় আটটি শারীরিক পরীক্ষায়। এগুলো হলো দীর্ঘ লম্ফ, জিগজ্যাগ, ওয়াল জাম্প, উচ্চ লম্ফ, বার্মা সেতু, টারজান সুইং, রশি আরোহণ ও ঝুলন্ত কাঠের গুঁড়ি। বিকেলে সাক্ষাত্কার। প্রার্থীর সাহস, আত্মবিশ্বাস, তাত্ক্ষণিক বুদ্ধি ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হয় এতে।

তৃতীয় দিন অংশ নিতে হয় প্ল্যানিং ও কমান্ড টেস্টে। এ দুটি পরীক্ষায় যাচাই করা হয় প্রার্থীর নেতৃত্ব ও পরিকল্পনার দক্ষতা। সকালের পরীক্ষাগুলো হচ্ছে প্ল্যানিং এক্সারসাইজ। এখানে একটি গল্পের মধ্যে বেশ কিছু সমস্যা দেওয়া থাকে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে হয়। এরপর কমান্ড টাস্ক। এতে প্রত্যেক সদস্যকে তিন-চারজনের একটি গ্রুপের দলনেতা বানানো হয়। তাকে দলের সদস্যদের নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে অতিক্রম করতে হয় একটি বাধা। এরপর মিউচ্যুয়াল অ্যাসেসমেন্ট। প্রার্থীদের বিচারিক ক্ষমতা যাচাই করা হয় এতে। নিজেকেসহ দলের সবাইকে দক্ষতার ভিত্তিতে নম্বর দিতে হয় দলনেতাকে। দ্বিতীয় দিন যাদের সাক্ষাত্কার হয়নি তাদের সাক্ষাত্কার নেওয়া হয় তৃতীয় দিন বিকেলে। চতুর্থ দিন কোনো পরীক্ষা থাকে না। এদিন ঘোষণা করা হয় ফল।

চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মনোনয়ন
আইএসএসবিতে নির্বাচিত প্রার্থীদের চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা সেনানিবাসের বিএনএস হাজী মহসীনে উপস্থিত হতে হবে। চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উপযুক্ত প্রার্থীদের নৌ সদরের চূড়ান্ত মনোনয়ন পর্ষদের কার্যক্রম ২০১৮ সালের মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থীরা ২০১৮ সালের জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেবেন।

প্রশিক্ষণ ও কমিশন
চূড়ান্তভাবে বাছাইকৃতরা প্রথমে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ১০ সপ্তাহের প্রশিক্ষণসহ বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ২৪ মাস ও মিডশিপম্যান হিসেবে ১২ মাস প্রশিক্ষণসহ তিন বছরমেয়াদি প্রশিক্ষণ নেবেন। এরপর তাঁদের নৌবাহিনীতে সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিয়মিত কমিশন দেওয়া হবে।

বেতন ও সুযোগ-সুবিধা
অফিসার ক্যাডেটরা সশস্ত্র বাহিনীর বেতনক্রম অনুযায়ী বেতন ও ভাতা পাবেন। মেধাবী ক্যাডেট ও অফিসাররা বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। রয়েছে বাসস্থান, চিকিত্সা, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা।

যোগাযোগ : ৯৮৩৬১৪১-৯, বর্ধিত : ২২১৫
হেল্পলাইন : ০১৭৬৯৭০২২১৫

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন