আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

গুঁড়ের যত গুণাগুণ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১১-১৫ ০০:৫৫:৪৪

শীত চলে এসেছে। এবার ঘরে ঘরে নতুন গুঁড়, ঝোলা গুঁড়ের দেখা পাওয়া যাবে। আর শীত মানেই পিঠে পুলির পার্বণ। তাই যুগলবন্দীতে গুঁড়ের দেখা তো পেতেই হবে। তবে, মুশকিলটা হচ্ছে, আমরা সকলেই প্রায় গুঁড় খাই বছরের এই একটা সময়। যদিও, গুঁড় কিনে রেখে দিলেও মাসের পর মাস ভাল থাকে। আমাদের ধারণা, গুঁড় দিয়ে পিঠে, পুলি, পায়েস আর নাড়ু তৈরি করা যায়। তাই বছরের বাকি সময় গুঁড় নিয়ে আমাদের তেমন মাথাব্যাথা থাকে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক গুঁড়ের নানা গুণ সম্পর্কে-

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে:
গুড়ের মিষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছেন? ভাবছেন যে অতি মিষ্টি খেলে তো কোষ্ঠকাঠিন্য হতেই পারে। আসলে তা কিন্তু নয়। গুড়ের মিষ্টিতে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

উল্টে এই সমস্যা থাকলে তা দূর করতে সাহায্য করবে গুঁড়। এর কারণ গুড় শরীরে হজম করার জন্য দায়ি উৎসেচকের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে পেট খুব তাড়াতাড়ি পরিষ্কার হয়ে যায়। 
লিভার ভাল রাখে:
গুড় খেলে লিভারের কাজ ভাল ভাবে হয় এবং লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গুড় লিভার থেকে ক্ষতিকারক উপাদান বার করে দিতে সাহায্য করে এবং এতে লিভারের পাশাপাশি শরীরও ভাল থাকে। তাই একটুকরো গুড় খেলে শরীর সুস্থ থাকে। 

জ্বর, সর্দি-কাশির হাত থেকে রক্ষা করে:
শীতকাল বা বর্ষাকালে ঘরে ঘরে ঠাণ্ডা লেগে সর্দি, কাশি, জ্বর হতেই থাকে। এই ধরণের সমস্যাকে দূর করতে গুড়ের জুড়ি মেলা ভার। গরম পানির সঙ্গে গুড় মিশিয়ে পান করলে এই ধরণের সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও, চায়ের মধ্যে চিনি না মিশিয়ে গুড় মিশিয়ে পান করলেও উপকার পাওয়া যায়। 

রক্ত পরিশোধন করে:
গুড় খাওয়ার সব থেকে বড় উপকার হল, এটি রক্ত পরিশোধন করতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। নিয়মিত গুড় খেলে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। গুড় যেহেতু সরাসরি আখের রস বা খেজুরের রস থেকে সরাসরি তৈরি করা হয়, তাই এটি শরীরের কোনও ক্ষতি করে না। উল্টে শরীরের যত্নে দারুন উপকারি ভুমিকা পালন করে। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে:
গুড়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়াও থাকে জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম। এরফলে, গুড় শরীরকে বিভিন্ন জীবাণু এবং সংক্রমক রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়াও, গুড় রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই গুড় শুধু শরীরকে ভিতর থেকেই নয়, বাইরে থেকে সুস্থ এবং সবল রাখতে পারে। 

শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখে:
গুড় এমন এক খাদ্য, যা শরীরকে প্রাকৃতিক উপায়ে ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এই কারণে, বহু চিকিৎসক শরীরকে সুস্থ রাখতে গুড় খাওয়ার পরামর্শ দেন। আসলে গুড় খেলে শরীরের ভিতর থেকে বিষাক্ত উপাদান বেড়িয়ে যেতে পারে। এটি যেমন শ্বাসনালীকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তেমনই ফুসফুস, অন্ত্র এবং পেটে এবং খাদ্যনালী পরিষ্কার রাখতে পারে। যারা কয়লা খনি, দূষণ বা ধুলো বালির মধ্যে কাজ করেন, তাদের জন্য গুড় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। 

ঋতুস্রাবকালীন পেটে ব্যাথা দূর করে:
গুঁড়ের মধ্যে যে কত রকমের পৌষ্টিক উপাদান রয়েছে, তা তো আগেই বলা হয়েছে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে এটি খুবই সাহায্য করে। একইসঙ্গে, গুঁড় দারুণ কাজ করে ঋতুস্রাবকালীন পেটে ব্যাথা দূর করতে এবং পেতে খিঁচ ধরে ব্যাথা হওয়াও রোধ করতে পারে। ঋতুস্রাবের আগে সবথেকে বেশি মানসিক সমস্যা হয়। এই ধরণের উপসর্গকে বলা হয় প্রিমেন্সট্রুয়াল সিন্ড্রোম। এই সমস্যা রোধ করতেও গুঁড় দারুণ কাজ করে। 

রক্তাল্পতা কমায়:
গুঁড়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আইরন এবং ফোলেট থাকে, যা রক্তের মধ্যে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ সঠিক রাখতে সাহায্য করে। গুঁড় সব থেকে বেশি উপকার করে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে। তাই এমনি সময় হোক বা গর্ভবতী অবস্থায় হোক, গুঁড় খাওয়া নারীদের জন্য খুবই উপকারি এবং স্বাস্থ্যকর। 

পেটের স্বাস্থ্য বজায় রাখে:
গুঁড় পেটের নানারকম রোগ এবং তার কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ গুঁড়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে। প্রতি ১০ গ্রাম গুঁড়ের মধ্যে ১৬ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে। ফলে নিয়মিত গুঁড় খেলে দৈনিক খনিজের চাহিদা ৪ শতাংশ হারে পূরণ হয়। 

পেট ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে:
গরমকালে কাজ থেকে বাড়ি ফিরে এলেই গুঁড়ের বাতাসা ভেজানো পানি বা গুঁড়ের সরবত অনেকেই পান করেন। বর্তমানে এই রকম দৃশ্য অনেকটা কমে এলেও কেন অনেকেই এগুলো মেনে চলেন। আসলে দীর্ঘক্ষণ বাড়ির বাইরে রোদের মধ্যে বা গরমের মধ্যে থাকলে শরীর গরম হয়ে ওঠে। এমনকি, পেটের গণ্ডগোলও দেখা যায়। এই অবস্থায় গুঁড়ের সরবত খুবই কাজে দেয়। কারণ, গুঁড়ের সরবত শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। 

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন