আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

নারীরা কি বাকপটু, ব্রেইনের গঠন কি বলে?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-০৯ ১১:৩৭:৪৯

ডা. মোহাম্মদ সাঈদ এনাম :: ‘নারীরা ভীষণ বাকপটু’, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই একথাটি বলেন, মানেন। টুকটাক ঝগড়া বিবাদ হলে পুরুষটি এক পর্যায়ে থেমে গেলেও দেখা যায় নারী থামছেন না। চলছে কথা.....। বিষয়টি  ইন্টারেস্টিং।

শৈশব দিয়েই শুরু করি। ২ বছর বয়সের একটি মেয়ে শিশু এবং ২ বছর বয়সের একটি ছেলে শিশুর চাল চলন কথা বার্তা উপস্থিত বুদ্ধি কে তুলনা করলে ছেলে  শিশুটিকে মনে হয় একটু পিছিয়ে আছে। ছেলেটা কেমন যেনো একটু সাদাসিধে প্রকৃতির। মেয়েটি কে লাগে একটু পাঁকা, তীক্ষ্ণ, চপল। পট পট করে কথা বলেই যায়, টিয়া পাখির মতো। বিষয় টি আসলে কেন ঘটে? কি এর  রহস্য?

অনেক অভিভাবক আছেন বিশেষ করে মায়েরা এসে উৎকণ্ঠা ব্যাক্ত করেন, "এই একই বয়সে আমার মেয়েটি ছিলো কেমন চটপটে, চপল, চঞ্চল, কথাবার্তায় মুখে যেনো ফুটে খই, কিন্তু ছেলেটিকে মনে হচ্ছে কেমন জানি একটু ধীরগতির, কথাবার্তাও পরিষ্কার  হচ্ছেনা এখনো, স্যার আমার ছেলেটি কি তাহলে ভবিষ্যতে কিছুটা হাবাগোবা প্রকৃতির  হয়ে যাবে...!?'"ইজ দা মাইল স্টোন অব ডেবেলপমেন্ট অব দিস বয় স্লো?" ওর,  "উইল হি বিকাম মেন্টালি রিটার্ডেড ইন দা লং রান.....?"

না এমন ঘটনায় ভয়ের কোন কারন নেই। এটাই নরমাল। মেয়েরা কথা বলা শিখে ছেলেদের আগে, এবং আজীবন বলে যায় ও বেশি ছেলেদের চেয়ে।

কেনো এমন ?

শিশু অবস্থায় মেয়েদের ব্রেইনের কিছু কিছু অংশ ছেলেদের তুলনায় দ্রুত ও নিঁখুত ভাবে কর্মক্ষম  হয়ে যায়, ফলে এমনটি হয়।  এমন কি পরিণত বয়সেও নারীদের ব্রেইনের কিছু কিছু অংশ (এরিয়া) ছেলেদের তুলনায় থাকে  সুগঠিত। এ এরিয়া গুলো হলো, কথা বার্তা বলার এরিয়া, যুক্তি তর্কের এরিয়া, গাণিতিক ও জ্যামিতিক বিষয় সমাধান করার এরিয়া। এসব কারনে নারীরা ভালো বিতর্ক করতে পারেন, যুক্তি দাঁড় করাতে পারেন, এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভালো গনিতজ্ঞ হিসেবে সুনাম কুড়ান। ব্যাংকের হিসেব নিকেশের জাতীয় চাকুরীতে নারীরা খুব ভালো করেন বলে প্রমান পাওয়া যায়।

এছাড়া নারী ব্রেইনের হিপোক্যম্পাস এরিয়ার 'ঘনত্ব, পুরুত্ব এবং ব্রেইনের অন্যান্য এরিয়া গুলোর সাথে এর সংযোগ গুলো ছেলেদের তুলনায় থাকে দৃঢ় । ফলে মেয়েরা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে তুলনামূলক  দ্রুত  'ইনফরমেশন কালেকশন ও ইন্টারপ্রেটেশন' করতে পারে (তথ্য গ্রহন ও বিশ্লেষণ)। যে কোন সমস্যা মোকাবেলায় তাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনেক সময় সঠিক হয়। নারীদের  ব্রেইনের এমন গঠনে স্পাই, কুটনৈতিক বা রাজনীতিবিদ হিসেবে তারা অনেক সময় খুব সফল হয়।

ব্রেইনের কথা বলার এরিয়া বা ল্যাংগুয়েজ এরিয়া  নারীদের বেশি একটিভ, তাই তারা অনর্গল, ক্লান্তিহীন কথা বলতে পারেন। তাদের ব্রেইনে 'ফক্স-পি-২' (ঋড়ীচ-২) প্রোটিন বেশি থাকে তাই তারা ভীষণ বাকপটু। যেখানে একজন পুরুষ কথা বলতে দৈনিক ৭০০০ শব্দ ব্যবহার  সেখানে একজন নারী ব্যবহার করেন ২০০০০ শব্দ। প্রায় ১৩০০০ শব্দ বেশি...।

নারীদের ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা বেশি?

শুধু তাই নয় নারীদের ব্রেইনের গঠন এমন যে তারা  ব্যাথা বা দুঃখ সহ্য করার ক্ষমতা পুরুষের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। পুরুষের ব্রেইন নারীদের ব্রেইনের তুলনায় আকার আকৃতি ও ওজনে একটু বড়, সেটা কেবল মাত্র ছেলেদের সুগঠিত মাংশপেশি নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে।

ব্রেইনের আণুবীক্ষণিক গঠন বলে দেয় পুরুষদের ব্রেইন   ভারী বা শারিরীক  পরিশ্রম মুলক কাজের উপযোগী  আর নারীদের মানায় ছোট ছোট ক্যালকুলেটিভ টাইপের কাজ।

লেখক- ডা. মোহাম্মদ সাঈদ এনাম
(ডিএমসি.কে-৫২)
সাইকিয়াট্রিস্ট
মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন
মেম্বার, ইউরোপিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন

সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৯ মার্চ ২০১৯/এসএ/ইআ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন