Sylhet View 24 PRINT

করোনারোধে কোরবানিতে চাই বিশেষ স্বাস্থ্য সচেতনতা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-২৫ ২২:২৮:১২




|| ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী ||


দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের বছরের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। ঈদ আসে খুশির ঝলক হয়ে। কিন্তু এবার ঈদের আনন্দের বার্তা কিছুটা ম্লান। বৈশ্বিক মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্মিলিতভাবে জীবন যাত্রা ব্যহত করছে প্রতি মূহুর্তে।  ঈদুল আযহাতে  প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমানের জন্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। খুশির ঈদ যাতে আমাদের একটু অসচেতনতায় পণ্ড না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে কঠোরভাবে।

আমাদের সচেতনতার অভাবে, সুন্দর পরিবেশ ও আনন্দঘন ঈদের দিন পশুর রক্ত ও বর্জ্য দিয়ে অনেকেই রাস্তাঘাট, বাসা বাড়ির চারপাশ একেবারে দুর্গন্ধযুক্ত করে ফেলি। একটু সচেতন হলে এবং উদ্যোগ নিলে আমরা পরিবেশ দূষণরোধ এবং রোগ-জীবাণুর বিস্তার এড়াতে পারি। এছাড়া এবার যেহেতু কোরবানির ঈদ করোনা মহামারীকালীন সময়ে হচ্ছে তাই নিরাপদে কোরবানির কাজ সম্পন্ন করতে নিতে হবে বিশেষ স্বাস্থ্য সতর্কতা। যেমন:

১) কোরবানির কাজটি সম্পূর্ণ করতে অবশ্যই পরিষ্কার তিন স্তরের কাপড়ের মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও  শুরুর আগে-পরে সাবান পানি বা জীবনুনাশক লিকুইড ব্যবহার করতে হবে। তাহলে সংক্রমণের সম্ভাবনা  একদম কমে যাবে। মাংস রাখার পাত্র আগে এবং পরে ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে সবসময়।

 ২)স্বস্তির কথা হচ্ছে গবেষণা বলছে মাংস থেকে করোনা ভাইরাস  সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। কিন্তু যদি যেকোন অসুস্থ ব্যক্তি এসব কাজে যুক্ত থাকেন,তাহলে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ছড়াতে পারে। তাই কোরবানির স্থানে বেশি লোকসমাগম করা যাবে না। অন্যান্য বারের চেয়ে কমসংখ্যক সম্পূর্ণ সুস্থ্য মানুষ রাখুন কোরবানির কাজে।

৩) কোরবানি শেষে কুসুম গরমপানি ও সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করুন ও গায়ের পোশাক পরিবর্তন করুন।

৪) নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশু জবাই করতে হবে এবং পর্যাপ্ত পানি ঢেলে রক্ত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। পশু কোরবানির রক্ত গর্তে মাটি চাপা দিয়ে পরিবেশ স্বাস্থ্যকর রাখা যায়। এ ছাড়া, যে জায়গায় মাংস কাটা হবে, সেখানে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৫) কোরবানির মাংস তিন ভাগ করে এক ভাগ অবশ্যই  সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিতরণ করুন। এ বছর ভীড়বাট্টা পরিহার করা উচিত।

৬) প্রতিবারের মতো কোরবানির বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। কোরবানিকৃত পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের জন্য সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সহায়তা করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনকে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচ্ছন্নতার দিকে একটু বিশেষভাবে তড়িৎ-তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতেই হবে। পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে, ঈদুল আযহা'কে আনন্দময় করতে এবং নিজের পাড়া-মহল্লাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে আসুন সবাই যে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসি।

ঈদে মাংস সংরক্ষণে ভুল ধারণার কারণে অনেক সময় টিনিয়া সোলিয়াম নামক পরজীবির সংক্রমণ ঘটতে পারে, ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয়।তাই সঠিকভাবে কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করা একটি জরুরি বিষয়। গ্রামে-গঞ্জে ফ্রিজে সংরক্ষণ কোনওভাবে সম্ভব না হলে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ঝাল দিয়ে তারপর মাংস রাখতে হবে। এছাড়া অর্ধসিদ্ধ মাংস খাওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। কোরবানির মাংসে জীবাণুর সংক্রমণ হলে মারাত্মক অ্যান্টারাইটিস হতে পারে। এ রোগ পেটের এক ধরনের সংক্রামক, যা খুবই ভয়াবহ। তাই সম্পূর্ণ সুস্থ্য ব্যক্তি দ্বারা মাংস কাটা, প্যাকেট করা এবং ফ্রিজে রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করা দরকার। অর্থাৎ সামান্য সর্দি জ্বরে আক্রান্ত কাঊকে ভুলেও কোরবানির কাজে রাখবেন না। এই সময়ে কোরবানির পশু ক্র‍য় করার সময় অবশ্যই সুস্থ্য গরু বা নিখুত কোরবানির পশু দেখে নিশ্চিত হয়ে কেনার দিকে বিশেষ নজর দিবেন; কোন অবস্তায়ই বিভ্রান্ত হয়ে অসুস্থ পশু ক্র‍য় করবেন না।

সকল রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। তাই নিজের এবং পরিবারের প্রতি যত্নশীল হই। আতংক নয়, ঈদ সবার জন্য বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ।

সবাইকে কোলাকুলিহীন আরেকটি ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা।

লেখক : বি.সি.এস (স্বাস্থ্য),  নাক-কান-গলা বিভাগ,  বি.এস.এম.এম.ইউ (প্রেষণ), ঢাকা।
drhafiz_33@yahoo.com

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.